চাঁদপুর প্রতিনিধি : ১৯৯৩ সালে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নির্মিত চাঁদপুর সদরের উত্তর মৈশাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি প্রায় ১০ বছর ধরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

আর এ ঝুকিপূর্ণ ভবনেই ক্লাশ করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক এ স্কুল ভবনটিকে সদর উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনের তালিকায় ১ নম্বর অবস্থানে রাখলেও দীর্ঘ সময় ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নতুন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। বর্তমানে ভবনটি আরো অধিক আকারে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দেয়ালের প্লাস্টার, ইট খসে পড়তে থাকায় প্রায় দেড়শতাধিক শিশু-শিক্ষার্থীকে খোলা আকাশের নিচেই পাঠ দিচ্ছেন শিক্ষকরা।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে স্থানীয় জমিদাতাগণের সহায়তায় ৩৬ শতাংশ জমির উপর এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এর একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। ৩০ ফুট/২০ ফুট আয়তনের একতলা বিশিষ্ট এই বিদ্যালয় ভবনটি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নির্মাণ হওয়ায় নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই এর প্লাস্টার, ইট খসে পড়তে শুরু করে। এরপরেও ৩টি শ্রেণীকক্ষ ও ছোট্ট একটি অফিস রুমের এই বিদ্যালয়ে শিক্ষা-কার্যক্রম থেমে থাকেনি।

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিদ্যালয়টি ওই এলাকায় একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষার আলো বিতরণ করে যাচ্ছে। গত বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করে এবং দুজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দেড় শতাধিক।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিদারুল আলম জানান, প্রায় ৫ বছর পূর্বে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনিসহ আরো ৩ জন শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের নিরলসভাবে পাঠ দিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই তিনি ভবনটির এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দেখে আসছেন। যার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে বহুবার তিনি নতুন একটি ভবনের জন্য আবেদন করেছেন।

বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানিয়া, ইয়াসিন, ৪র্থ শ্রেণীর জাহানারা, বিল্লাল এবং তৃতীয় শ্রেণীর লিমা, তামান্না, এশা জানায়, মাঝে মাঝেই ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে তাদের শরীরে পড়ে। তাই শ্রেণীকক্ষে ক্লাস করতে তাদের ভয় হয়। এজন্য মাঝে মধ্যে শিক্ষকরা স্কুল মাঠে তাদের ক্লাস নিয়ে থাকেন।

সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা আক্তার, বাবলী রাণী কর ও মাহমুদা আক্তার জানায়, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আগের চেয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে। ভয়ে অনেক শিশু-শিক্ষার্থী ক্লাসে আসছে না। তাদেরকে ক্লাসরুমে পাঠ দিতে আমাদেরও ভয় হয়। আল্লাহ না করুক যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায় এবং এতে কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয় তবে এর দায় কে নেবে। এই ভেবেই আমরা ভবনের সামনের মাঠে তাদের ক্লাস নিয়ে থাকি। তাছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলে ভবনের ছাদ চুইয়ে পানি পড়তে থাকে। তখন পাশের মসজিদের বারান্দায় ক্লাস নিতে হয়।

বিদ্যালয়ে জমিদাতা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি আহসান উল্যাহ্ খান বাতেন জানান, তার দাদা ও বাপ-চাচারা এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে এই বিদ্যালয়ের জন্য ৩৬ শতাংশ জমি দান করেছেন। পাকা ভবন নির্মাণের পর থেকেই এই ভবনটির দুরবস্থা শুরু হয়। বর্তমানে ভবনের কোথাও কোথায় সিমেন্টের প্লাস্টার ও ইট সরে গিয়ে রড বেরিয়ে গেছে। ভবনের দরজা-জানালাগুলোর বেশিরভাগ খুলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস কতৃক এই স্কুল ভবনটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনে’ ১নং তালিকায় রাখা হয়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষ একটি নতুন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। তাই এলাকার শিশুদের শিক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

স্কুল পরিদর্শনে আসা সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রাবেয়া আক্তার জানান, ভবনটির এই করুণ অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার অবগত আছেন। ভবনটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে শিক্ষক-শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

(ইউএইচ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭)