ইমরান হোসেন, বরগুনা : বাঘ-বিড়ালের লড়াইয়ে কে জিতবে? আর কে হারবে? উত্তর সবার জানা। কচ্ছপ আর খরগোশের গল্পে কচ্ছপ জিতেছিল। এটা বইয়ের গল্প। কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন। সাগরের পানি আর ঢেউয়ের সাথে বড় ট্রলিং জাহাজের সাথে আমাদের ট্রলার পেরে ওঠবে কিভাবে? এসব প্রশ্নগুলো ছিল জাল দড়ি ফেলে আসা চট্টগ্রামের এফ বি লাল মোহন ট্রলারের মাঝি নিতেন্দ্রনাথ পালের। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে ভারতীয় ট্রলিং জাহাজের আক্রামনের শিকার হয়ে চট্টগ্রাম না গিয়ে বরগুনার পাথরঘাটার বিএফডিসি ঘাটে এসে আশ্রয় নেন তিনি।

ঘটনার বর্ননা জানতে চাইলে নিতেন্দ্রনাথ পাল বলেন, গত বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরের গভীরে গিয়ে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন তারা। তাদের পাশেও ছিল অনেক বাংলাদেশী ট্রলার। তবে এর মধ্যে দূর থেকে ভারতীয় পতাকাসহ একটি ট্রলিং জাহাজ দেখতে পায় তারা। কিছুক্ষনের মধ্যেই তাদের প্রায় নিকটে চলে আসে ভারতীয় জেলে ভর্তী ট্রলিং জাহাজটি। তাদেরকে সরে যেতে বলে হ্যান্ড মাইক নিয়ে। তারা প্রথমে ভাবেনি তাদের সাথে কি ঘটতে চলছে। এর মধ্যেই তাদের ট্রলারের দিকেই আসতে শুরু করে ভারতীয়রা। তারা জাল কেটে দিয়ে জীবন বাচিয়ে ট্রলার নিয়ে পাশে সরে যায়। ভারতীয়রা তাদের জাহাজ থামিয়ে কারেন্ট জাল ফেলে মাছ ধরা শুরু করে। এমন সময় তাদেরকে কেন মাছ ধরতে দিল না এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতীয়রা তাদের জাহাজে থাকা ছোট ছোট পাথর মারতে শুরু করে বাংলাদেশীদের ওপর। এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে তারা তাদের জাল দড়ি ফেলে পাথরঘাটায় এসে আশ্রয়নেন।

একই ট্রলারের গোপীন্দ্রনাথ পাল, সুনীল পাল, মতিলাল ঠাকুর, আজগর ঘরামী, হিরন ঘরামী, নির্মল তালুকদার সহ বেশ কয়েকজন জেলে বলেন, বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ভারতের কাকদ্বীপ নামক একটি দ্বীপ একদম কাছে হওয়ায় সেএলাকার জেলেরা বাংলাদেশ সীমান্তে মাছ ধরছে। আর তাদের বেশিরভাগ ট্রলারে মাছ ধরা অত্যাধুনিক জালসহ আধুনিক বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকায় সমুদ্রে মাছের অবস্থান নির্নয় করে মাছ ধরছে তারা।

এসময় বরগুনার মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি ট্রলারের জেলেদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, প্রতিবছর ইলিশের ভরা মৌসুম ও মা ইলিশ সংরক্ষণ সময়ে বাংলাদেশের সীমান্তে নির্বিঘ্নে মাছ ধরছে ভারতীয়রা। তাদের পতাকা ওরছে তাদের জাহাজে তবে কোষ্টগার্ড বা নৌবাহীনি কিছুই বলছেনা। তাদেরকে জেলেরা বাধা দিলে বড় জাহাজ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সাগরের মধ্যেই ট্রলার ডুবিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় ভারতীয়রা অভিযোগ জেলেদের।

জেলেরা অভিযোগ করে আরও জানান, বন্যার সময় স্রোতে ভারতের সীমান্তে ঢুকে পড়লেও তাদের জেল জরিমানা সহ শারীরিক নির্যাতন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল দিয়ে ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরছে বাংলাদেশ সীমান্তে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এক সময়ে সাগড়ে মাছ থাকবেনা। তাই সাগড়ে প্রসাশনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করছেন জেলেরা।

এদিকে বাংলাদেশের জল সীমায় ভারতীয় জেলেদের প্রবেশ সম্পর্কে পাথরঘাটা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চেীধূরী বলেন, বাংলাদেশের জল সীমায় ভারতীয়রা প্রবেশ করছে এমন অভিযোগ পাথরঘাটার জেলেরা করেছে। সে প্রশাসনের উদ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেেেছন তারা সাগরে নজরদারি বাড়াবে বলে আশ্বস্ত করেছে।

তবে এ বিষয়ে কোষ্টগার্ডের সাথে কথা বললে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ উপকূলে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমানে ইলিশ। বাংলাদেশের জল সীমার ইলিশ ভারতের থেকে সুস্বাদু হওয়ায় ভারতের বাজারে বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার প্রায় ২০০ কিলোমিটার ভেতওে প্রবেশ করে মাছ ধরছে ভারতীয় জেলেরা।

(আইএইচ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭)