রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : সব বাবা মায়ের ইচ্ছা থাকে পৃথিবীতে আমার সন্তানটি জন্মগ্রহণ করার পর তাকে মানুষের মত মানুষ করাবো। ভাল চাকুরী করাবো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার জজ-ব্যারিস্টার বানাবো। কিন্তু সে-আশার সন্তানটি যদি পৃথিবীতে আসার পরে প্রতিবন্ধী হয়। তাহলে বাবা মায়ের সে-আশাগুলোতে মরীচিকা পড়ে যায়। আশার সে-সন্তানটি হয়ে পড়ে পরিবারের বোঝা যদিও বাবা মায়ের কাছে সন্তান কখনো বোঝা হয়ে দাড়ায় না। কিন্তু সেই বাবা মা তার প্রতিবন্ধী সন্তানের মেধাবিকাশ ও পড়া শুনার জন্য পায় না কোন স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাই তারা তার প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে পড়ে যায় বিপাকে।

আর বাবা মায়ের বিপদ থেকে একটু উদ্বারের লক্ষ্য প্রতিবন্ধী সন্তানদের মেধা বিকাশ ও লেখাপড়ার জন্য ঠাকুরগায়ের রানীশংকৈল পৌরশহরের বন্দর নামক স্থানে নিজস্ব জায়গায় মহিলা সংরক্ষিত ৩০১ আসনের এমপি সেলিনা জাহান লিটার পরিচালনায় গড়ে তোলা হয়েছে আলী আকবর মেমোরিয়াল প্রতিবন্ধী স্কুল ও পূর্ণবাসন কেন্দ্র।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,প্রতিবন্দী শিক্ষার্থীরা অ আ ঈ ঈ অথ্যাৎ বাংলা বর্ণমালা গুলো উচ্চস্বরে পড়ছে রুমের ভিতরে প্রবেশ করতেই স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মত দাড়িয়ে এ প্রতিবেদককে সালাম জানিয়ে সন্মান প্রর্দশন করে বসে পড়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। তবে রুমের ভিতরে দেখা যায়, কেউ বাক প্রতিবন্ধী কেউ বা আবার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী,পা প্রতিবন্ধী,কেউ বা আবার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্দী যে যেমন তাকে সেভাবেই পড়া শুনা শেখাচ্ছে স্কুলের শিক্ষকরা। দেখে মনে হচ্ছিল তারা যেন স্বাভাবিকভাবেই খুব আগ্রহ নিয়ে করছে পড়াশুনা।

জানা যায়, স্কুলটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কিছু সংখ্যাক প্রতিবন্দী শিক্ষার্থীকে নিয়ে এমপি লিটা প্রথমে নিজে শিক্ষকতা করেন। পরে ধীরে ধীরে ২২০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে তার স্কুলে অর্ন্তভুক্ত করেন এবং পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ১৭ জন শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ করেন এর মধ্যে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্দী ব্যক্তিকেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন এমপি লিটা,সে-শিক্ষক প্রতিবন্ধীদের গান শেখায় এবং অক্ষর জ্ঞান দিয়ে থাকে।

প্রতিবন্ধী স্কুলের ছেলে মেয়েরা প্রতিবারই স্বাধীনতা দিবস বিজয় দিবস ২১ শে ফ্রেবুয়ারীরমত জাতীয় প্রোগামগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রর্দশন করে থাকে। যে কারণে তারা একাধিকবার ১ম ও ২য় হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। এ প্রতিবন্ধী স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বিনা খরচে পড়তে পারবে একজন প্রতিবন্ধী। এছাড়াও এমপি লিটা নিজের খরচে প্রতিবন্দী শিক্ষার্থীদের খাতা কলম বই স্কুলের পোষাক কিনে দেন। এখানকার প্রতিবন্দী ছেলেমেয়েরা সন্দুর সন্দুর ছবি আকতে পাড়ে,গাইতে পারে, নাচতে জানে শুধু তাই্ নই তারা জানে কিভাবে একজন মানুষকে সন্মান জানাতে হয়। এভাবে করেই তিলে তিলে একজন হাবাগোবা প্রতিবন্ধীকে একটু স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে এনে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন এমপি লিটা।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এধরনের একটি প্রতিষ্ঠান চালালেও নেই কোন সরকারী সহায়তা। ঐ প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেহেনা আক্তার জানান,সাধ্যমত চেষ্টা করছি প্রতিবন্দীদের মেধাবিকাশ করাসহ প্রাথমিক পর্যায়ের ধাপগুলো পার করার।

তিনি আরো বলেন, এবারে পঞ্চম শ্রেনীর সমাপনী পরীক্ষায় আমাদের ৫ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। আশা রাখি আগামীতে এ সংখ্যা আরো বৃদ্বি পাবে।

তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি বড় করার জন্য ১বিঘারও বেশি পরিমানের একটি জমি আমাদের পরিচালক এমপি লিটা মহলবাড়ী নামক স্থানে কিনেছেন প্রতিবন্ধী স্কুলের নামে সেখানে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা গেলে আমাদের আরও সফলতা বৃদ্বি পেতো। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারনেই আমরা পারছি না। তাই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাবাবুদের দৃষ্টি আর্কষণ করছি আমাদের প্রতিবন্ধী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে এবং বড় পরিসরে নিমার্ণে সহায়তা প্রদানের জন্য।

এ প্রসঙ্গে রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ক্রীড়াব্যক্তিত তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্দীদের নিয়ে এমপি লিটা একটি ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন যা প্রশংসনীয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান করে সমাজের অবহেলিত শিশুদের মেধাবিকাশ ও পাঠদানের মত মহৎ কাজে আসলে আমাদের সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ।


(কেএএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭)