চাঁদপুর প্রতিনিধি : মেসার্স সী ফুড করপোরেশন লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিদুর রহমান চৌধুরী ২২ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তা কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া আরো ৮ জন জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর শাখাকে চলতি বছরের ১০ সেপ্টম্বর ও ২৭ আগস্ট দুই দফায় চিঠির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার  মোঃ দেলোয়ার হোসেন আব্বাসী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন, সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আবুল কালাম আজাদ, এজিএম হারুনুর রশিদ, কর্মকর্তা গোলাম হোসেন টিটু, গোডাউন কিপার ইকবাল হোসেন ও চৌকিদার ওমর ফারুক পাটওয়ারী। এছাড়া প্রিন্সিপাল অফিসার মোঃ আশ্রাফুজ্জামান, শাখা প্রধান হারুনুর রশিদসহ শীর্ষ পর্যায়ের মোট ৮জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছে।

এ নিয়ে চাঁদপুরের ব্যাংক পাড়ায় চলছে নানান আলোচনা সমালোচনা। বিশেষ করে প্রিন্সিপাল অফিসার মোঃ আশ্রাফুজ্জামান এ ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখলেও তাকে বরখাস্ত না করে নোটিস তথা শোকজ করায়। কেউ কেউ বলছেন ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে সমায়িক বরখাস্তের তালিকা থেকে নিজের নাম সরাতে পেরেছেন ওই কর্মকর্তা।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কর্মকর্তা গোলাম হোসেন টিটু জানান, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলতে তিনি রাজি হননি। সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ দেলোয়ার হোসেন আব্বাসী জানান, আমরা মৌখিকভাবে জেনেছি মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্তটিম তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ চাঁদপুর প্রধান শাখায় কর্মরত। আবার কেউ কেউ পদন্নোতি পেয়ে উচ্চ পদে আছেন। আমরা ৭জনের বিষয়ে চিঠি পেয়েছি। এদের মধ্যে ৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও ২ জনকে নোটিস করা হয়েছে। বাকিরা শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা। নিয়মানুযায়ী আমরা তাদের চিঠি পাবো না।

প্রসঙ্গত; চাঁদপুর শহরের সু-পরিচিত ব্যবসায়ী, মেসার্স সী ফুড করপোরেশন লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিদুর রহমান চৌধুরী সোনালী ব্যাংক লিমিটেড চাঁদপুর শাখার প্রায় সিকি কোটি টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। দীর্ঘ দিন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে ব্যর্থ হওয়ায় তার সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

১৯৮৫ সাল থেকে তিনি দফায় দফায় সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। সর্বশেষ ২০১০ সালে ২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার পরিকল্পনা আঁটেন। ২০১৫ সালে শেষ বারের মতো ঋণ নবায়ন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গত ৩১মার্চ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আরোপিত ও অনারোপিত সুদসহ ব্যাংক পাওনা আছে ৩১ কোটি ৩৯ লাখ ৪২হাজার ৬শ ৮২টাকা ৪২ পয়সা। মূলত সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় মেসার্স সী ফুড করপোরেশন লিঃ এর বিপরীতে অন্তত পাঁচগুণ বেশি অর্থ লোন নেয়ার সুযোগ পায়। যদিও নিলাম বিজ্ঞপ্তির অনুকূলে কেউ কোনো দরপত্র জমা দেয়নি। তাই দ্বিতীয় দফায় নিলামের জন্যে সব কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

(ইউএইচ/এএস/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭)