চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমপাড়ে ১১নং ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের ইব্রাহীমপুর গ্রাম ও ঈদগাহ বাজারে তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ভাঙ্গনে প্রায় পঞ্চাশটি বসতঘরের ভিটে-মাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মাটি ধস অব্যাহত থাকায় সেখানকার অন্যান্য বাড়িঘরও ভেঙ্গে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। অকালে কেটে ফেলা হচ্ছে বহু মূল্যেবান গাছপালা। ভাঙ্গন প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারন করায় নদী ক্রমশঃ শরীয়তপুর ফেরীঘাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

ফেরীঘাট রক্ষার জন্য সিসি ব্লকের যে বাঁধ দেয়া হয়েছিলো সেটি পুরোটাই এখন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নিরূপায় হয়ে ভাঙ্গন কবলিত জনপথের পরিবারগুলো শরীয়তপুর সড়কের আশপাশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সরজমিনে দেখা যায়, ইব্রাহীমপুর পুরো গ্রামই এখন মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গনের শিকার। নদীর ভাঙ্গন হতে প্রায় একশ’ মিটার দুরত্বে রয়েছে ঈদগাহ বাজার। পাশেই বিআইডাব্লিউটি’র বিরাট পরিসরের টার্মিনাল স্থাপনা। এর কাছাকাছি আবার শরীয়তপুর ঈদগাহবাজার ফেরীঘাট। চলমান নদী ভাঙ্গনে এখন হুমকির মুখে সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনা।

ফেরী চলাচলের জন্য বিআইডাব্লিউটি’র ড্রেজিং ও লক্ষীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বিচারে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার কারনে ঈদগাহ বাজার ও ফেরীঘাট এলাকায় এ বছর ব্যাপক নদী ভাঙ্গনের সৃস্টি হয়েছে বলে ক্ষোভ গ্রামবাসীর। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি এমপি ভাঙ্গন এলাকা স্থান পরির্দশন করেছেন। সেখানে ভাঙ্গনের অনেকেই ড্রেজার দ্বারা অপরিকল্পিতভাবে ব্যাপক বালু উত্তোলনকে দায়ী করেছেন। ইব্রাহিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাশেম খান বলেন, ৪/৫ বার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে তাঁর পরিবার। এ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার আঃ মন্নান মনা গাজী জানান, যেভাবে নদী ভাঙ্গছে ইব্রাহীমপুর গ্রাম আর থাকবেনা। পাশের শরীয়তপুর জেলার সীমানা অতিক্রম করবে। গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার অনিশ্চিতয়তার মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা রিলিফ চাইনা, নদী ভাঙ্গন হতে বাঁচতে চাই।

হামিদ দেওয়ান বাড়ির মোক্তার শেখ, ওহাব শেখ, বাবুল শেখ, হালিম ঢালী, সোবহান গাজী জানায় তাদের বাড়ির ১৫ থেকে ২০টি বসত ঘর ভাঙ্গনের কবল হতে রক্ষা করার জন্য ভেঙ্গে ফেলতে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা নাছির পাটওয়ারী ও আলী হোসেন জানান, হাওলাদার বাড়ির বারেক হাওলাদার, আলাউদ্দিন দেওয়ানের বসতভিটে, জায়গা জমি, গাছপালা নদীতে চলে গেছে।

তারা আরো জানায়, হাইমচরের ঈশানবালায় গত দুই বছর নদী ভাঙ্গছে । আমাদের এখানে নদী ভাঙ্গন ছিলনা ড্রেজিং এবং বালু কেটে বিক্রি করায় এখানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে নদীর তীব্র স্রোতে ইব্রাহীমপুর গ্রাম এ বছর ভাঙ্গছে। নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান চরের গুচ্ছ গ্রামের জন্য এ এলাকা থেকে প্রচুর বালু কেটে সরকারের কাছে বিক্রি করেছে। তখন কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে সরকারি উন্নয়ন কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে তাদেরকে মামলার ভয় দেখানো হয়।

এ দিকে নদী ভাঙ্গনের খবর পেয়ে ইব্রাহীমপুর ও ঈদগাহ ফেরীঘাট এলাকার ভাঙ্গন পরিস্থিত পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল হাই ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা।

(ইউএইচ/এএস/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭)