নীলফামারী প্রতিনিধি : চালের বাজারে ঊর্ধ্বগতির সময়ে জেলায় সুসংবাদ বয়ে এনেছে আগাম জাতের আমন ধান। এ জাতের ধানের কাটামাড়াই চলছে এখন পুরোদমে। নতুন ধান স্বস্থি এনে দিয়েছে কৃষকসহ এলাকাবাসীকে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র মতে, জেলায় আগাম জাতের আমন ধান আবাদ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে।এ সব জমিতে ধান উৎপাদন হবে ৯০ হাজার মেট্রিক টন।আর এতে চাল হবে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। যা চালের ঊর্ধ্বমুখী বাজার দর কমাতে একটি বড় প্রভাব ফেলবে।

জেলার ছয় উপজেলায় কমবেশী এ ধানের আবাদ হলেও বেশী হয়েছে কিশোরগঞ্জ উপজেলায়।
কৃষি বিভাগের এমন তথ্যে কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকায় আগাম জাতের ধানের আবাদ। মাঠে থাকা ধান সোনালী রং ধারণ করেছে। এ সময় অনেক কৃষক ও কৃষি শ্রমিককে ব্যস্ত দেখা গেছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে। কৃষকরা বলছেন, ‘আগাম ধান উঠাতে পেরে আমরা আনন্দিত। পাশাপাশি আগাম ধান ওঠায় ওই জমিতে আলুসহ ভুট্টা আবাদ করা সম্ভব হবে।’

উপজেলার উত্তর চাঁদখানা গ্রামের কৃষক আকবর আলী (৪৫) জানান, এবার তিনি তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান আবাদ করেছেন । ধান লাগানোর ৯০ দিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার কাটা মাড়াই শেষে ধান ঘরে উঠিয়েছেন। তিন বিঘা জমির ধান হয়েছে সাড়ে ৪৫ মণ।

তিনি জানান, আগাম ওঠায় এ ধানের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ধান বিক্রির টাকা দিয়ে ওই জমিতে আগাম আলুর আবাদ করা যাবে। সে আলুতেও আগাম বাজার ধরা যাবে। এরপর ওই জমিতে ভুট্টারআবাদ করা সম্ভব হবে।

তিনি আরো জানান, এক বিঘা জমিতে এ জাতের ধানের আবাদে খরচ হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম প্রায় আট শ’ টাকা। এক বিঘার জমির ধান বিক্রিতে টাকা আসবে প্রায় ১২ হাজার। ধানে খড়ের আটি বিক্রি করে আরো পাওয়া যাবে দুই হাজার টাকা।

একই গ্রামের কৃষক কৃষক দুলাল হোসেন (৩৫) একই জাতের ধান আবাদ করেছেন তিন বিঘা জমিতে। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনিও কাটামাড়াই করেছেন।

তিনি জানান, ‘আগাম ধানের আবাদে কৃষকদের ভাগ্য খুলে দিয়েছে। ধান চাষের পর একই জমিতে আগাম আলুর আবাদ করতে পারবেন তারা। সেখানেও লাভ হচ্ছে, এরপর আরো একটি ফসল ফলাতে পারছেন ।’

উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক আবির হোসেন (৪৫), ফুল হকসহ (৪০) অনেকে এই আগাম জাতের ধান ইতিমধ্যে কাট-মারাই করেছেন। সে জমিতে এখন তারা আলু আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, এবার উপজেলায় ১৪ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের চায়না ও উচ্চ ফলনশীল রয়েছে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে । গত চার সেপ্টম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৩৫৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১৫ থেকে ১৭ মণ পর্যন্ত।

গত বৃহস্পতিবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উয়িং) আব্দুল হান্নান, রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ্ আলম, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস, অতিরিক্ত উপপরিচালক কেরামত আলী মাঠ পরিদর্শন করেছেন। কৃষকদের সাফল্য দেখে তারা খুশি হয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, ‘জেলায় এবার আমন ধানের আবাদ হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৮০১ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম জাতের ধান আবাদ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন আবাদ উঠতে শুরু করেছে।এই ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হবে ৯০ হাজার মেট্রিক টন যা বর্তমান চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ একটি বড় প্রভাব ফেলবে।’ আগাম ধান কাটায় এ সব জমিতে এখন আলু আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭)