রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরের পুজামন্ডপগুলোতে শেষমুহূর্তের সাজসজ্জায় ঝলমলে হয়ে উঠছেন মা দুর্গা। দম ফেলবার ফুসরৎ নেই কারিগরদের। মহালয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে মাটি বসানোর কাজ। শহরের বিভিন্ন মন্দিরে মহালয়ার শুরু থেকেই চলছে রঙতুলির আঁচড়। সেই সাথে সাড়ম্বরে চলছে পোশাকপরিচ্ছদের কাজও। রঙের আঁচড়ে আর সাজসজ্জায় দৃষ্টিনন্দিত হয়ে উঠছেন মা দুর্গার অসুর বিনাশী রূপ। ষষ্ঠীর আগেই দেবীকে চূড়ান্ত রূপবৈভবে অলংকৃত করবেন প্রতিমাশিল্পীরা। দেবলোক থেকে এবার নৌকায় করে মর্তলোকে আসবেন দেবী, যাবেন ঘোড়ায় চড়ে। সমস্ত পঙ্কিলতা থেকে পরিত্রাণের জন্য মা দুর্গার পৃথিবীতে আগমনকে ঘিরে জামালপুরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ও আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠছে শহরের পুজামন্ডপগুলো।

জামালপুর সদরসহ ৭টি উপজেলায় এবার ২২৫টি পুজামন্ডপে চলবে দুর্গা পুজা। শহরের দয়াময়ী মন্দির, রাধা মোহন জিউ মন্দির, বকুলতলা ঠাকুরবাড়ি, বসাকপাড়া, রাধা গোবিন্দ আশ্রম, পালপাড়া, হরিজন কলোনি, মাল গুদাম, বোষপাড়া, মাইনপুরসহ ২১টি মন্ডপে চলবে শারদীয় দুর্গোৎসব। অসম্প্রদায়িক চেতনাকে বুকে ধরেই এবারের দুর্গোৎসবের সমস্ত প্রস্তুতির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জামালপুর পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি এড. নির্মল কান্তি ভদ্র। তিনি আরো জানান, প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিবারের চেয়ে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে খরচও বেশি।

শহরের ২১ টি পুজামন্ডপে প্রতিমা নির্মাণের জন্য ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ থেকে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এসেছেন প্রতিমাশিল্পীরা। এসব শিল্পীদের পাশাপাশি কাজ করছেন স্থানীয় শিল্পীরাও। প্রতিমা তৈরির উপকরণ খড়, বাঁশ ও মাটিসহ আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম বাড়লেও বাড়েনি প্রতিমাশিল্পীদের মজুরি। পৈতৃক পেশা ধরে রাখতে এবং বিকল্প কারিগরি দক্ষতা না থাকায় লাভবান না হলেও এ পেশাতেই রয়ে গেছেন। বছরের অন্যান্য সময়ে হাতে কাজ না থাকলে বসে থাকতে হয় এবং পরিবার চালাতে ঋণ করতে করতে হয় বলে জানালেন রাধামোহন জিউ মন্দিরে ময়মনসিংহের কোকিল গ্রাম থেকে আসা প্রতিমাশিল্পী লিটন পাল ও বিপ্লব পাল। তাঁরা ৯টি প্রতিমা নির্মাণের জন্য এসেছেন। কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে এসেছেন মৃৎশিল্পী রঞ্জিত পাল। তাঁর সাহায্যকারী হয়ে এসেছে অজিত পাল ও সঞ্জিত পাল। তাঁরা রাধা মোহন জিউ মন্দিরে ৩টি প্রতিমা নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে এসেছেন। তাঁরাও বলেছেন এ শিল্পের এখন বড়ো দুর্দিন। এ মন্দিরে কাজ করছেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে আগত দুই ছাত্র মৃৎশিল্পী হৃদয় সূত্রধর (১৬) ও হৃদয় দেবনাথ (২১)। তাঁরা ৮টি প্রতিমার কাজ করছেন। শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি তাঁরা এ কাজ করেন। বড় বড় উৎসব-পার্বণে ডাক পড়লে তাঁরা কাজ করেন বলে জানিয়েছেন। এখানে কাজ করছেন জামালপুরের আরেক মৃৎশিল্পী ও সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ফিলোসফি বিভাগের শেষবর্ষের ছাত্র স্বাক্ষর তালুকদার। তিনি শহরে কয়েকটি মন্দিরে ৬টি প্রতিমা নির্মাণের কাজ করছেন। এছাড়া অন্যান্য মন্দিরে কাজ করতে আসা শিল্পীদের ভাষ্যও এক। পুজাপার্বণ ছাড়া তাদের কদর নেই, খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে দিন চলে যায়।

(আরআর/এএস/সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭)