E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

ঢাকা-বরিশাল রুট বিলাসবহুল লঞ্চের উদ্বোধন

২০১৮ মার্চ ২২ ১৭:৪১:২১
ঢাকা-বরিশাল রুট বিলাসবহুল লঞ্চের উদ্বোধন

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে পাঁচতারকা মানের বিলাসবহুল লঞ্চের উদ্বোধনী যাত্রার যাত্রী হয়েছেন আরাফাত রহমান ও তানিয়া দম্পত্তি। তারা এ প্রতিনিধিকে বলেন, আসলেই দক্ষিণের নৌরুটে প্রথমবারের মতো কীর্তনখোলা-১০ নামের পাঁচতারকা মানের লঞ্চে যাত্রী হতে পেরে নিজেদের খুব গর্বিত মনে হচ্ছে।  

বুধবার রাতে যাত্রীনিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো বরিশাল আধুনিক নৌ-বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে কীর্তনখোলা-১০ নামের দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র আধুনিক এ লঞ্চটি। সালমা শিপিং কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেলতলা খেয়াঘাট সংলগ্ন বাগেরহাট শিপ বিল্ডার্স নামের ডকইয়ার্ডে ৩১৫ ফুটের অধিক দৈর্ঘ্য ও ৫৯ ফুট প্রস্থের লঞ্চটি নির্মান করা হয়েছে। যাত্রীদের কাছে পাঁচতারকা মানের লঞ্চখ্যাত কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে রয়েছে ১০২টি সিঙ্গেল, ৭০টি ডাবল ও ছয়টি ফ্যামিলি ক্যাবিন।

পাশাপাশি রয়েছে ১৭টি ভিআইপি কেবিন। ভিআইপি কেবিনগুলোতে আলাদা বারান্দা, টয়লেট, ফার্নিচার, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া সিঙ্গেল থেকে শুরু করে ভিআইপি পর্যন্ত প্রতিটি কেবিনে আলাদা এলইডি টেলিভশন, বিলাসবহুল আসবাবপত্র রয়েছে। প্রথম শ্রেনীর যাত্রীদের কেবিনগুলোর সামনের প্রশস্ত ও সুবিশাল বারান্দা বা করিডোরকেও সাজানো হয়েছে বাহারি ধরনের নকশা ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে।

পাশাপাশি গোটা লঞ্চেই নান্দনিক ডিজাইন ও ডেকরেশন করা হয়েছে। নিচ তলার সুবিশাল ডেকে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলোকব্যবস্থার পাশাপাশি ৬০টি বৈদুত্যিক পাখা ও ডেকে একসাথে ২৪৮টি মোবাইল চার্জারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলার পেছনে দিকেও রয়েছে ডেকের একটি অংশ। পুরো লঞ্চে যাত্রীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা। যাত্রী ছাড়াও দুই শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সুবিধা বিশিষ্ট লঞ্চটিতে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদ (৩০ জন ধারণ ক্ষমতা), শিশুদের প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোড এরিয়া, খাবার হোটেল, বিনোদন স্পেস, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারকম যোগাযোগ ব্যবস্থা।

লঞ্চটির নিচতলায় সংযুক্ত করা হয়েছে করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ও দুই শয্যার হাসপাতাল সেবা। পাশাপাশি লঞ্চের তৃতীয় তলায় সুবিশাল বারান্দা প্রশস্ত রাখা হয়েছে হাটার জন্য। যেখানে ডায়াবেটিসের রোগীরা বিনা বাঁধায় হাঁটতে পারবেন। আধুনিক বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর মতোই কয়েক স্তর বিশিষ্ট তলদেশ ছাড়াও ঝুঁকিমুক্ত চলাচলের জন্য লঞ্চটিতে জিপিআরএস সিস্টেম, রাডার, ইকোসাউন্ডার, ভিএইচএফ, ম্যানুয়াল ও ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সুকান স্থাপন করা হয়েছে।

লঞ্চের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যবহার করবে ওয়াকিটকি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও আশপাশের নৌযানের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারবে। তাছাড়া ঘণ কুয়াশার মধ্যেও নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে কীর্তনখোলা-১০। যাত্রীদের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তায় আনসার সদস্য ছাড়াও দৃশ্যমান ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত লাইফ বয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইস্পাতের তৈরি নতুন পাত আমদানি করে নির্মিত লঞ্চটিতে জাপানের তৈরি তিন হাজার ২০০ অর্শ্ব শক্তি সম্পন্ন দুটি মুল ইঞ্জিনের পাশাপাশি সার্বক্ষনিক বিদ্যুত সেবার জন্য দুটি জেনারেটর ও একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

লঞ্চের ব্যবস্থাপক বেল্লাল হোসেন বলেন, সর্বোচ্চ যাত্রীধারন ক্ষমতা সম্পন্ন নৌযানটি গত শুক্রবার কীর্তনখোলা নদীতে পরীক্ষামুলকভাবে চলাচল করেছে। ত্রুটি ছাড়াই লঞ্চটি যে গতিতে চলেছে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী অন্যান্য লঞ্চের তুলনায় তা অনেক বেশি ছিলো। আর রাতের বেলা লঞ্চের আলোকসজ্জা সবাইকে চোখ ধাধিয়ে দিয়েছে।

সালমা শিপিং কর্পোরেশনের স্বত্তাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস জানান, সালমা শিপিং কর্পোরেশনের তৃতীয় এবং সর্বাধুনিক লঞ্চটি দক্ষ মাষ্টার ও ইঞ্জিন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণির শতাধিক ক্রু-নিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রীসেবায় নামানো হয়েছে।

তিনি বলেন, কীর্তনখোলা-১০ দেশের সকল যাত্রীবাহী লঞ্চের থেকে সর্বাধিক সেবা দিতে সক্ষম হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার সবদিক মাথায় রেখে লঞ্চটি নির্মান করা হয়েছে। যেখানে প্রথমবারের মতো কোন লঞ্চে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ব্যয়বহুল ব্রোঞ্জের সুসজ্জিত ছয়টি উচ্চ সিকিউরিটি ব্যবস্থাসম্পন্ন দরজা লাগানো হয়েছে। যে দরজা আলাউদ্দিন দরজা নামে পরিচিত।

তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের বাহারি রুচির কথা চিন্তা করে লঞ্চটির সাজসজ্জায় ভিন্নতা রাখা হয়েছে। যা যাত্রাকে আরামদায়ক ও উপভোগ্য করে তুলবে। যাত্রীদের ভাড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আর যাই হোক না কেন লঞ্চের ভাড়া অন্যসব লঞ্চের মতোই নির্ধারন করা হয়েছে।

সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বুধবার বিকেলে দোয়া-মিলাদের আয়োজনের মধ্যদিয়ে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের সর্বাধুনিক বিলাসবহুল কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের উদ্বোধণ করা হয়। এরমধ্যদিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটের নৌ-বহরে যুক্ত হলো এমভি কীর্তনখোলা-১০ নামের এই সর্বাধুনিক, সর্বোবৃহত ও উচ্চ গতিসম্পন্ন পাঁচ তারকা মানের লঞ্চটি। উদ্বোধনী দোয়া-মিলাদ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন, উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুর রউফ, সালমা শিপিং কর্পোরেশনের স্বত্তাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস প্রমুখ।

(টিবি/এসপি/মার্চ ২২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১০ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test