E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সংস্কার কাজ শেষের আগেই খানাখন্দ

২০১৮ এপ্রিল ২৭ ১৬:৫৫:৩৬
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সংস্কার কাজ শেষের আগেই খানাখন্দ

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় বহু কাঙ্খিত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সংস্কার কাজ শেষের আগেই সদ্য সমাপ্ত সড়কের ১১টি স্থান ডেবে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পুনরায় ভোগান্তিতে পরেছে দুরপাল্লার যানবাহন চালকসহ যাত্রীরা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করায় কাজ হস্তান্তরের আগেই (চলমান অবস্থায়) সদ্য সমাপ্ত সড়কের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল খাঞ্জাপুর পর্যন্ত সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে ফের খানাখন্দে পরিনত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যস্ততম এ মহাসড়কের গৌরনদীর কটকস্থল, আরিফ ফিলিং ষ্টেশন, বার্থী হাইস্কুল, বার্থী কলেজ, ইল্লা, খাঞ্জাপুর, গাইনের পাড়, ইল্লা ফিলিং ষ্টেশন ও খাঞ্জাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১১টি স্থানে সদ্য সমাপ্ত কাজের পরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার পিচ ও পাথর উঠে গেছে। এছাড়া কাজের অনেকস্থানে পাথর উঠে আলাদা হয়ে গেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘ ভোগান্তির পর মহাসড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হতে না হতেই নতুন সড়ক পুরাতনের চেয়েও খারাপ হয়ে গেছে। ফলে এখন গর্ত ভরাটের কাজ করছেন ঠিকাদারের শ্রমিকরা।

কটকস্থল এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন, আব্দুর রব, ইল্লার আব্দুল বারেক, খাঞ্জাপুরের আব্দুর রহিমসহ একাধিক বাসিন্দারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মহাসড়কটি সংস্কার নিয়ে ঠিকাদার অনিয়ম, দুর্নীতি ও তালবাহানা করে গেলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। স্থানীয় এক ঠিকাদার ও এক প্রকৌশলী বলেন, পুরাতন সড়ক ষ্টেলি ফাই (চওয়া)’র পরে নতুন করে বেইজ টাইপের মাধ্যমে ভালভাবে কমপেক্ট করে তার ওপর বাইন্ডার কোর্স (দ্বিতীয় ধাপ) কাজ করার কথাছিলো। কিন্তু ঠিকাদার পুরাতন রাস্তা তুলে ওই মালামাল দিয়েই বেইজ কোর্স তৈরী করেছে। যা পানি দিয়ে ঠিকমত কমপেক্ট করা হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে কোন রকম দায়সারা কাজ করায় সড়কের এ পরিনতি হয়েছে। তাছাড়া বাইন্ডার কোর্স ও প্রাইমকোটে পরিমানমত বিটুমিন ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহৃত বিটুমিন ছিল অত্যন্ত নিন্মমানের ।

এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক আব্দুল জলিল সরদার, দেলোয়ার হোসেন, স্বপন সরদারসহ অনেকেই বলেন, সড়ক সংস্কারের নামে সরকারের কোট কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। সওজ ও ঠিকাদার মিলে সরকারী টাকা লুটপাট করেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তারা তীব্র ক্ষোভের সাথে আরও বলেন, কাজ শেষের আগেই সামান্য বৃষ্টিতে সদ্য সমাপ্ত সড়ক সংস্কার কাজের অংশে আবার খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক খালে পরিনত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর আনোয়ারা হাসপাতাল থেকে ভূরঘাটা পর্যন্ত ১১.৮০০ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশে ছয় ফুট সস্প্রসারণ ও সংস্কারের জন্য ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ১৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য রাজশাহীর মেসার্স এমএসএএমপিজেভি লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। অনেক আগে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক বছরেও পুরোকাজ শেষ করতে পারেনি। এরইমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্প রিভাইস স্টিমেট করে ১৮ কোটি থেকে ২২ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করেছে।

ভুক্তভোগী এলাবাসির অভিযোগ, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এক বছর আগে কাজ শেষ করার কথা থাকলে এখনও শেষ করতে পারেননি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সওজের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম দুর্নীতি ও খুবই নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে। যে পরিমান বিটুমিন ও পাথর দেয়ার কথা ছিলো ঠিকাদার তা না দিয়েই বেইজে পুরনো সড়কের মালামাল ব্যবহার করে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করেছেন। ফলে কাজ শেষ করার পূবর্ইে চলমান অবস্থায় সড়ক ডেবে গিয়ে খানাখন্দে পরিনত হয়েছে।

অভিযোগ সম্পর্কে মেসার্স এমএসএএমপিজেভি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শাহজাহান আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে প্রকল্পের তদারকি কাজে নিয়োজিত মোহাম্মদ আলম বলেন, সাব লেয়ার তৈরীতে কিছুটা সমস্যাজনিত কারনে সড়ক ডেবে খানাখন্দ তৈরী হয়েছে। নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমস্যা হলে একেকজনে একেক কথা বরতেই পারে। সমস্যা হয়েছে নতুন করে কাজ করে সমস্যার সমাধান করা হবে।

এ ব্যাপারে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আবু হানিফ বলেন, ঠিকাদারকে ১১কোটি টাকা বিল দেয়া হয়েছে। সে পরিশোধকৃত বিলের চেয়ে অনেক বেশী কাজ করেছে। কাজে ব্যবহৃত বিটুমিনের মান খারাপ ও বৃষ্টির কারনে এ অবস্থা তৈরী হয়েছে। ইতোমধ্যেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সংশোধন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রকল্পের ৯২/৯৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক ডেবে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি পয়েন্ট আউট করে ঠিকাদারের লোকজনকে পুরোটা তুলে রেক্টিফাইড করতে বলা হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতি নয় ঠিকাদারের কিছুটা ভুল ও বিটুমিন জ্বলে যাওয়ায় কারনে এ সম্যস্যা হয়েছে, যা শীঘ্রই সমাধান করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৮ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test