E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পাটকেলঘাটার অমর ঘোষের বাড়িতে ডাকাতি, আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়নি গ্রেপ্তারকৃতরা

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৬:৪৬:৫৮
পাটকেলঘাটার অমর ঘোষের বাড়িতে ডাকাতি, আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়নি গ্রেপ্তারকৃতরা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন সৈয়দপুর গ্রামে এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দু’ ভ্যান চালক ও একজন ভাটা শ্রমিক  রোববার ন্সন্ধ্যায় আদালতে জবানবন্দি দেয়নি।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের মালতিয়া গ্রামের আনছার সরদারের ছেলে ভ্যান চালক আবুল হোসেন (৫০), সাতক্ষীরা সদরের কাটিয়া লস্করপাড়ার মহিদুল ইসলামের ছেলে আব্দুল কাদের মিঠু (২৮) ও তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানাধীন খলিশখালি ইউনিয়নের চাঁদকাটি গ্রামের শওকত মোল্লার ছেলে আশরাফুল মোল্লা (৩৮)।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন সৈয়দপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অমর চন্দ্র ঘোষের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় চুকনগর বাজার থেকে ভ্যানচালক আবুল কাশেম, শুক্রবার দুপুরে পাটকেলঘাটা ওভারব্রীজের পাশ থেকে ভ্যানচালক আশরাফুল মোল্লা ও ওইদিন রাত সাতটার দিকে পাটকেলঘাটা ওভারব্রীজের নীচ থেকে ভাটা শ্রমিক আব্দুল কাদের মিঠুকে গ্রেপ্তার করে। আটকের পর থেকে রোববার দুপুরে আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তাদের চোখে কালো কাপড় বেঁধে রাখা হয়।

শনিবার সন্ধ্যায় আদালতের বারান্দায় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে ভ্যানচালক আবুল হোসেন বলেন, বৃহষ্পতিবার রাত সাতটার দিকে তিনি দু’ হাজার ১০ টাকা নিয়ে চুকনগর বাজারে চাল কিনতে আসেন। এ সময় পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে পাটকেলঘাটা থানায় নিয়ে আসে। শুক্রবার তাকেসহ আব্দুল কাদের মিঠু ও আশরাফুল মোল্লাকে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে খলিষখালি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে সৈয়দপুরের অমল মাষ্টারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য ঝুলিয়ে অমানুষিক নির্যাতন হয়। নাকে দেওয়া হয় গরম পানি। নিয়ে নেওয়া হয় তার চাল কেনা দু’ হাজার ১০ টাকা। তার নামে তিনটি মামলা রয়েছে।

আশরাফুল মোল্লা বলেন, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি তার ইঞ্জিন চালিত ভ্যান নিয়ে পাটকেলঘাটা ব্রীজের উপর আসা মাত্রই পুলিশ তাকে আটক করে। ইঞ্জিনভ্যান থানার মধ্যে রেখে দেওয়া হয়। তাকে আবুল হোসেন ও মিঠুর সঙ্গে শুক্রবার রাতে চোখ বেঁধে খলিষখালি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন এমন আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়।

আব্দুল কাদের মিঠু জানান, সাগরদাঁড়ি এলাকার আবু তালেবের ইটভাটায় তিনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন বহুদিন। বাড়ি থেকে ওই ভাটায় যাওয়ার পথে শুক্রবার রাত সাতটার দিকে তিনি পাটকেলঘাটা ব্রীজের নীচে অবস্থান করাকালিন পুলিশ তাকে ধরে পাটকেলঘাটা থানায় নিয়ে যায়। সবকিছু জানার পরও পুলিশ শুক্রবার রাতে তাকে আবুল হোসেন ও আশরাফুললের সঙ্গে খলিষখালি ক্যাম্পে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে নির্যাতন করে। তার মোবাইলটি পুলিশ দেয়নি।

আবুল হোসেন, আশরাফুল ও মিঠু কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলেন, আটকের পর থেকে রোববার সকালে আদালতে নিয়ে আসার পূর্ব পর্যন্ত কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে রাখা হয়। বিচারক বিলাস মণ্ডলের কাছে নির্যাতনের দৃশ্য দেখানো ও সব কিছু খুলে বলার পর তাদের জবানবন্দি গ্রহণ না করে জেলখানায় পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। সেখান থেকে আদালতের গারদে নিয়ে আসার সময় তাদেরকে আবারো রিমাণ্ডে নিয়ে পিটিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের হুমকি দেয় পুলিশ।

এদিকে বাবা আবুল হোসেনের সঙ্গে মেয়ে নার্গিস খাতুন, ছেলে আশরাফুলের সঙ্গে মা সাজেদা, স্ত্রী নার্গিস পারভিন, ছেলে মিঠুর সঙ্গে মা রেবেকা দেখা করার পর নির্যাতনের কাহিনী শুনে আদালতের বারান্দায় কাঁদতে কাঁদতে গড়াগড়ি যান। তারা এ ধরণের নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার প্রতিকার দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে।

সাতক্ষীরা আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় সাংবাদিকদের জানান, অমর ঘোষের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা রোববার বিচারক বিলাস মণ্ডলের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। তাদেরকে সন্ধ্যায় জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদ মুর্শিদ কোন আসামীকে চোখ বেঁধে রাখা ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে স্ব স্ব থানায় মামলা রয়েছে।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test