E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পরিবর্তে অন্য একটি পরিবারের সুবিধা ভাতা পাওয়ার অভিযোগ

২০২১ নভেম্বর ০৩ ১৮:৫৪:৫৭
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পরিবর্তে অন্য একটি পরিবারের সুবিধা ভাতা পাওয়ার অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পরিবর্তে একজন ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ সুবিধা ভাতা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছোট ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত কাগজপত্রে তারই আপন বড় ভাই নিজের নাম সংযুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের। প্রকৃত ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিতর্ক ওঠা ওই দুই সহোদরের বাড়ি রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। তাঁরা হলেন, ওই গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিন সরদারের ছেলে লখিন সরদার ও জাহের আলী সরদার(জার্মান)।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে রেনুকা বেওয়া নামে এক নারী তাঁর স্বামী মৃত জাহের আলীকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে গেজেট সংশোধনের আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, ৩০৮৪ নম্বর গেজেটে তাঁর স্বামী মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর পরিবর্তে তার বড় ভাই লখিন উদ্দিন সরদারের নাম যোগসাজসে অর্šÍভুক্ত করা হয়েছে। লখিন সরদার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তার স্বামী জাহের আলী।

জাহের আলীর পরিবারের দাবী, জাহের আলীর রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর দেয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র, অস্ত্র জমা দানের সনদপত্র, লালবার্তাতে তার নাম রয়েছে। এ ছাড়া নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম রয়েছে ২০৫ নম্বরে। অথচ এসবের কোন কিছুই নেই লখিন উদ্দিন সরদারের।

মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম,ইয়াছিন আলী মৃধা,আব্দুল মতিন,মজিবর রহমমানসহ বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলার রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মৃত. কফিল উদ্দিনের দুই ছেলে লখিন উদ্দিন সরদার এবং জাহের আলী সরদার(জার্মান)। ছোট ভাই জাহের আলী সরদার প্রকৃত এবং সম্মূখসারির একজন মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু বরণকারী পুলিশের সাবেক সদস্য (ব্যালিয়ন নং-৯৫০) মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর নিকট তাঁরা প্রায় সকলেই দেশের ভিতরে এবং ভারতে মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষন নিয়েছেন।

২০০৫ সালের ২৯ নবেম্বর মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম প্রকাশের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর তিনি একটি আবেদন করেন। এরপর তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে গেজেটভুক্তির জন্য তথ্য চেয়ে উপজেলা প্রসাশনের মাধ্যমে তার গ্রামের ঠিকানায় একটি নোটিশ আসে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই এবং সংশোধনীর অনেক আগে থেকেই মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর পরিবার গ্রামের বাড়ি ছেড়ে নওগাঁ শহরের আরজি নওগাঁ মৈত্রপাড়া মহল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন।

গ্রামের বাড়িতে তাদের অনুপস্থিতিতে নোটিশটি গ্রহণ করেন আশির দশকে মৃত. লখিন উদ্দিন সরদারের স্ত্রী সাজেদা বেওয়া। তিনি কৌশলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর পরিবারের কাছে বিষয়টি গোপন করে অফিসে যোগাযোগ করে মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলীর নামের পরিবর্তে নিজের স্বামীর নাম মৃত. লখিন উদ্দিন সরদারের নাম মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন। পিতা-মাতার নাম এবং ঠিকানা একই হওয়ায় নাম ভুল হয়েছে মর্মে সংশোধনীর আবেদন করে খুব সহজে এই কাজটি করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা। যদিও এর স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।

সাজেদা বেওয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছর পরে আমার স্বামী মারা যাওয়ায় তিনি তখন কোন কাগজপত্র তৈরী করে রেখে যেতে পারেননি। এজন্য আমার কাছে কোন কাগজপত্র নেই। যুদ্ধ করেছেন বলেই আমার স্বামী লখিন সরদারের নাম মন্ত্রনালয় থেকেই গেজেটভুক্ত হয়ে এসেছে। তবে তিনি অনুরোধ করে বলেন, ৪৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। ৩ বছর আগে আমার একমাত্র ছেলেও মারা গেছে। যেভাবেই হোক হয়েছে, এখন মাসে মাসে যে টাকা পাই সেই টাকা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে না খেয়ে মরতে হবে।

নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হারুন-অল-রশিদ বলেন, বিগত দিনে অনেকবার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ এসেছিল। তিনি বা তার পরিবার আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেছেন বলে আমার জানা নেই। পরবর্তীতে আবারো যদি যাচাই বাছাই কিংবা নাম সংশোধনের সুযোগ আসে তখন তাদের বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, প্রয়াত জাহের আলীর স্ত্রী রেনুকা বেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।

(বিএস/এসপি/নভেম্বর ০৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test