E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মেকার থেকে নেতা

শূন্য থেকে অট্টালিকার মালিক আ.লীগ নেতা সঞ্জিত কর্মকার!

২০২১ নভেম্বর ১৩ ১৩:৩৪:০৬
শূন্য থেকে অট্টালিকার মালিক আ.লীগ নেতা সঞ্জিত কর্মকার!

স্টাফ রিপোর্টার : সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার। আর্থিক অনটনের কারনে পূর্ব পুরুষের কামার পেশা থেকে শুরু করে সাইকেল ও ঘড়ির মেকার, মুদি দোকানির কাজ শেষে ছাত্রলীগ নেতা হয়ে আজ পরিনত হয়েছেন প্রভাবশালি আওয়ামীলীগ নেতায়। সামাজিক অবস্থানের পাশাপাশি আর্থিক অবস্থানেও এসেছে অস্বাভাবিক পরিবর্তন। শুন্য থেকে হয়েছেন কোটিপতি, উপজেলা সদরটিতে গড়েছেন বিশাল অট্টালিকা, রয়েছে মৎস্য খামারসহ একাধিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। তার এই বিপুল অর্থের উৎস কোথায়? এ নিয়ে রয়েছে মুখরোচক নানা গল্প।    

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে ও সরেজমিন সঞ্জিত কর্মকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুড়ে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকারের পূর্বপুরুষ শুধু বংশেই নয়, পেশায় ছিল কামার। সময়ের সাথে সাথে পেশা পরিবর্তন করে কামার থেকে সাইকেল মেকারী পেশায় সম্পৃক্ত হলেও তার চাচাারা এখনো কামারের পেশায় সম্পৃক্ত। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সঞ্জিতের বাবা মারা যাওয়ার পর লেখাপড়ার পাশাপাশি সে ভাইদের সাইকেল মেকারী কাজে সহযোগিতা করতো। অভাব অনটনের ঘরে খুব কষ্ট করে ১৯৮৮ সনে এস এস সি এবং ১৯৯০ সনে আই এ পাশ করেন। পরবতী সময়ে অর্থ অভাবের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে রেডিও-টেলিভিশন মেকারী শেখার জন্য এলাকা ছেড়ে পার্শবর্তী থানা রায়গঞ্জের চান্দাইকোণা বাজারে এক মেকারের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কিছুদিন চাকুরী করেন। পূনরায় নিজ এলাকা তাড়াশে ফিরে এসে ছোট্ট একটা মুদি দোকান দেন। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন মুদি দোকানি। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে মুদি দোকানের মালামাল ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে তাড়াশ ডিগ্রি কলেজে বি এ ভর্তি হন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৯৬ সালে বি এ পাশ করেন এবং সরকার দলীয় নেতাদের তোষামোদ করে ১৯৯৭ সালে তাড়াশ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হন। আওয়ামীলীগ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে শুরু করেন টেন্ডারবাজি। কিন্তু একলক্ষ টাকার কাজ করার মতো কোন সামর্থ্য তার ছিল না। বন্ধু বান্ধবের সহযোগিতায় ছোট ছোট কিছু কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন। ২০০৩ সালে ছাত্রলীগের সন্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটির নিকট দায়িত্ব ভার অর্পণ করে ২০০৪ সালে তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হন এবং নিশ্চিত পরাজয় জেনে নির্বাচন থেকে সড়ে আসেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হন। ২০১২ সালে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হন এবং তাড়াশ ইসলামীয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। একদিকে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক অন্য দিকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। শুরু হয় শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য। তার সময়ে প্রায় ১৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন এবং প্রায় এক কোটি টাকা নিয়োগ বানিজ্য করেন। এরই মাঝে লাইব্রেরিয়ান পদে দুই জনের কাছে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে অবশেষে তার নিজের বউকেই চাকরী দেন এবং দলের নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্চিত হন। এর পাশাপাশি শুরু হয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার তৃণমূলে শুরু করেন মনোনয়ন বাণিজ্য।

পরবর্তী সময়ে বিএনপির একজন চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার কারণে উপনির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দলের বহিস্কৃত নেতাকে দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে তৃণমূল থেকে নৌকার টিকিটের জন্য সুপারিশ করেন এবং নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেন। এছাড়াও নানা অপকর্মে জড়িয়ে বিপুল অর্থেও মালিক বনে যাওয়া সঞ্জিত কর্মকার হঠাৎ করেই মাটির দেওয়াল থেকে বিশাল আকৃতির পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের পাথরে খচিত চার তলা অট্টালিকা বাড়ি তৈরি করেন। একই সাথে গড়ে তোলেন মাইক্রোবাস, ট্রাক, নামে বেনামে ২২ বিঘা জমি, কয়েকটি পুকুর, কয়েকটি দোকানের জায়গা ইত্যাদি। খুব অল্প সময়ে তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেন। দেশে মহামারি করোনা শুরু হলে নেতা-কর্মি বিচ্ছিন্ন হয়ে পরিবার নিয়ে তিনি নিজ বাসার তিন তলায় অবস্থান নেন। এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রধান হয়ে টিআর-কাবিখায় অনিয়ম করাসহ প্রভাব বিস্তার করে ভ’মিদখল করার। অভিযোগ রয়েছে, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা দীনেশ কর্মকারের জমি দখলের পায়তারা করেন সঞ্জিত কর্মকার। জোরপূর্বক তার জমিতে দেয়াল তুললে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়, যা আমলে নেননি পুলিশ।

এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার বলেন, ছোটবেলা থেকে আর্থিক অনটনের মাঝে বড় হয়েছি, নানা সময়ে নানা পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করেছি। এখনও ছোট-খাটো ব্যাবসা করি, চাকরিও করি। বিপুল অর্থের মালিক হইনি কিন্তু স্বচ্ছল জীবন-যাপন করি। রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছে, যা আদৌ সত্য নয়।


(আইএইচ/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test