E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নির্মাণ শেষেও আলোর মুখ দেখেনি চমেকের ‘শেষ স্পর্শ’

২০২১ ডিসেম্বর ২০ ১৬:১৩:৪৫
নির্মাণ শেষেও আলোর মুখ দেখেনি চমেকের ‘শেষ স্পর্শ’

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া রোগীদের বিনামূল্যে গোসল করানো ও দাফন করানোর উদ্দ্যেশে এনজিও কতৃক নির্মিত ‘শেষ স্পর্শ’ নামক লাশের আধুনিক গোসলখানাটি চার মাসেও আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে নাম উল্লেখিত পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে এনজিও সংস্থা আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মিছ মামলা করেও সুরাহা না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন।

প্রথমে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও পরে হঠাৎ গোসলখানাটি বন্ধে রাখার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রীট দায়ের করেছেন দুঃস্থ মানুষের সেবায় নিয়োজিত এনজিও সংস্থা আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন।

বিচারপতি মামুনুর রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জাম এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে দায়েরকৃত মামলাটি সম্প্রতি শুনানী শেষে আদালত স্থিতিবস্থার আদেশ দেন। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বাধা প্রদানকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে বিবাদীগণকে রুল নিশি জারী করেন।

জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে লাশ গোসলের আধুনিক ব্যবস্থা সম্বলিত গরীব দুঃস্থদের জন্য লাশ গোসলখানা নির্মাণে চমেক হাসপাতাল পরিচালকের স্বাক্ষরিত অনুমতিক্রমে চমেক হাসপাতাল জামে মসজিদের উত্তর পার্শ্বে পুরাতন লাশ গোসল খানার পাশে বিপুল অর্থ ব্যয়ে এনজিও সংস্থাটি ‘শেষ স্পর্শ’ নামে আধুনিক লাশ গোসলখানাটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন ।

নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে গোসলখানাটি উদ্বোধনের জন্য চমেক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। অজ্ঞাত কারণে কর্তৃপক্ষ গরীব দুঃস্থ ও বিনামুল্য শব্দ সম্বলিত সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলে ও গোসলখানায় তালা ঝুঁলিয়ে দেয় ।

পরবর্তীতে এই সব শব্দ বাদ দিয়ে কর্তৃপক্ষের আকস্মিক প্রদত্ত নীতিমালায় দেওয়া ডিজাইন অনুযায়ী সাইনবোর্ড নির্মাণ করা সত্ত্বেও চমেক কর্তৃপক্ষ উক্ত গোসলখানা চালু করতে দেয়নি।

এ ব্যাপারে এনজিওটি জনকল্যাণমূলক ও জনস্বার্থে অলাভজনক কর্মকান্ডে বেআইনি বাঁধা অপসারণে উক্ত রিট দায়ের করে। আবেদনকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আবু হানিফা।

চমেক কতৃপক্ষের এমন কান্ডে চরম ভোগান্তিতে পড়ে আগত রোগীর অসহায় স্বজনরা। এ নিয়ে শামসুল হক ফাউন্ডেশন নামে একটি সেবা সংগঠন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ফ্রি লাশ ধোঁয়ার ঘর তৈরি করেন। বিনামূল্যে মরদেহ ধোয়ার পাশাপাশি আর্থিক সমস্যাগ্রস্ত রোগীদের জন্য বিনা খরচে কাফন ও এম্বুলেন্স সুবিধাও রাখে সংস্থাটি। তবে ঘর তৈরিসহ যাবতীয় প্রস্তুতি শেষে যখনই এই কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে, তখন হঠাৎ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই লাশ ঘরে তালা লাগিয়ে দেন।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে আসছে লাশ ধোয়া বাণিজ্য। মেডিকেল মসজিদকেন্দ্রিক একটি চক্র রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে লাশপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা আদায় করেন। বিনামূল্যের আধুনিক গোসলখানাটির কার্যক্রম শুরু হলে নিজেদের এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এমন ধারণা থেকে একটি মহল বিরোধিতা করেন।

এ বিষয়ে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, গত ২২শে নভেম্বর সকাল আনুমানিক ১১টায় পরিচালকের নির্দেশে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও অন্যরা আমাদের টানানো সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে দেন। একইসঙ্গে কক্ষের দরজায় শিকল দিয়ে তালা দেন। কিন্তু হঠাৎ কী কারণে এমনটি করা হলো, তা আমরা কিছুই জানি না। এরমধ্যে হাসপাতালের দেয়া নীতিমালা অনুযায়ী সাইনবোর্ড তৈরি করে গত বুধবার তা টাঙ্গাতে গেলে মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন এসে বাধা দেন। একইসঙ্গে সাইনবোর্ড লাগালে সমস্যা হবে বলে হুমকিও দেন।’

তিনি বলেন, এখন পরিচালক বলছেন আমরা নাকি নীতিমালা ভঙ্গ করেছি। কথিত এই নীতিমালার কোন শর্তটি অনুসরণ করিনি তা এখনো আমরা জানিনা। আসল ব্যাপার হচ্ছে পরিচালকসহ হাসপাতালের পুরো প্রশাসন সেখানকার একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। আর হাসপাতালের পরিচালক চাইলেও অনেক কিছু করতে পারেন না।

আক্ষেপ করে সেবা প্রতিষ্ঠান শামসুল হক ফাউন্ডেশনের এই প্রধান নির্বাহী বলেন, দাতাদের ৫ লাখ টাকায় আমরা এই আধুনিক গোসলখানাসহ ফ্রি কাফন কার্যক্রম শুরু করেছি। অন্তত কিছুদিনও যদি আমরা এটা চালাতাম তাহলে নিজেদের সান্ত¡না দিতে পারতাম। দাতাদেরও বলতে পারতাম। এখন পুরো বিষয়টা আমরা আইন এবং বিবেকবান মানুষের হাতে ছেড়ে দিলাম। আমাদের দৃঢ বিশ্বাস, এই মহতি কার্যক্রম শুরু করার এখনো সময় আছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা কীভাবে সাইনবোর্ড লাগাবো সেটিসহ কয়েকটি শর্তে এই প্রতিষ্ঠানটিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে গোসলখানা বানানোর অনুমতি দেই। কিন্তু তারা শর্ত ভঙ্গ করেছে। যে কারণে আমরা তাদের অনুমতি বাতিল করে দিয়েছি।’

(জেজে/এসপি/ডিসেম্বর ২০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test