E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কর্ণফুলীতে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকা!

২০২১ ডিসেম্বর ২৩ ১৫:২৩:১৬
কর্ণফুলীতে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকা!

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে শেষমুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে শেষবারের মতো ভোট প্রার্থনা করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। সেইসঙ্গে চলছে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। 

এদিকে ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে বাড়ছে স্নায়ুচাপ। শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের মধ্যে চলছে ভোট নিয়ে হিসাব-নিকাশ। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শেষমেশ সাধারণ মানুষের নীরব ভোট প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের বাক্সেই যাবে। আবার নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের একটা অংশ মনে করছে, বিএনপির ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীকে পড়তে পারে।

সময় যতই গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তোড়জোড়। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। সন্ধ্যা থেকে গ্রামে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় বাজারে চায়ের দোকানে আর প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যালয় ঘিরে নির্বাচনের উৎসবের সৃষ্টি হচ্ছে। এটি চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে দেখা যাচ্ছে সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। কর্ণফুলীর শিকলবাহা, জুলধা ও চরলক্ষ্যায় বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীদের বড় অংশের সমর্থন রয়েছে। তারা কৌশলে সময় পার করছেন। আবার অনেকেই বলছেন সুষ্ঠু নির্বাচনে বদলে যাবে নৌকার হিসাব নিকাশ। তিন ইউনিয়নে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহীরা এগিয়ে আসতে পারেন। এমন আশঙ্কা স্বয়ং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের।

এ বিষয়ে একাধিক নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল শুক্কুর জানিয়েছেন নানা অভিযোগের পাহাড় তাঁর টেবিলে। এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থীর বিচিত্র সব অভিযোগ। নিদির্ষ্ট নয়, সব কেন্দ্রই যেন ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন। গতকাল দুই প্লাটুন বিজিবি পৌঁছেছে কর্ণফুলী উপজেলায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, ‘উপজেলার তিনটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের হারের প্রধান কারণ হতে পারে দলীয় কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নীরব সমর্থন। আর প্রভাব প্রতিপত্তিতে বিদ্রোহী ও প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এগিয়ে থাকা। প্রতীক বরাদ্দ থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে একাধিক এলাকা ঘুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

শিকলবাহার ভোটার সাকের উল্লাহ ও করিম জানান, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কতিপয় নেতাকর্মী, সমর্থক গোপনে ভোট চাইছেন দলের বিদ্রোহী আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে। তবে সচেতন ও শিক্ষিত ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অন্য কথা। তারা জানান, যোগ্য, সৎ ও জনপ্রিয় বা পছন্দের ব্যক্তিকে আওয়ামীলীগ মনোনয়ন দেয়নি। এ জন্য অনেকে প্রার্থীদের মেনে নিতে পারছেন না। মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে দলমত নির্বিশেষে যোগ্য প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবে।

এলাকাঘুরে তথ্য পাওয়া যায়, চেয়ারম্যান পদে শিকলবাহা ইউনিয়নে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (আনারস), আব্দুল করিম ফোরকান নৌকা), চরলক্ষ্যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সোলায়মান তালুকদার (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইব্রাহিম মিয়া (আনারস), এটিএম হানিফ (মোটরসাইকেল), মোহাম্মদ আলী (চশমা), নাসির আহমেদ (ঘোড়া) প্রতীক পেয়েছেন। জুলধা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী মুহাম্মদ নুরুল হক (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিক আহমদ (আনারস),মোঃ মুছা (চশমা) প্রতীক পেয়েছেন।

নৌকা প্রতীকের একাধিক প্রার্থীরা বলেন, ভোটের মাঠে তারা কোনোক্রমে বিদ্রোহীদের চেয়ে কম নন। প্রচার-প্রচারণা আর গণসংযোগে তারা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। জেলা ও উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে প্রচারণায় কাজ করছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনি বলেন, ‘ধাওয়ামী লীগ দেশের বড় রাজনৈতিক সংগঠন। এখানে নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই অনেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী অবস্থান নিয়েছেন। তবে এতে আমাদের ফল বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা নেই। যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে নৌকা প্রতীকে ভোট আহ্বান করেন তিনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সহ-সভাপতি বলেন, ‘দলের সব নেতাকর্মী মাঠে নামলে বর্তমান দৃশ্যপট অনেকটাই পরিবর্তন হবে। গোপনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছি। বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কে কে কাজ করছেন এমন গুটিকয়েক তথ্য পেয়েছি।’

আবার কর্ণফুলীতে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। কেউ কেউ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। একাধিক প্রার্থী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছ থেকে হামলা ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে ঘাটতি দেখা যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন নজরে রেখেছেন স্ব স্ব প্রার্থীদের পক্ষে কারা ভোট কেন্দ্রে ঝামেলা করতে পারেন। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।’

ভোটার ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনী মাঠে ভোটের পরিবেশ, পরিসংখ্যান ও ভোটারদের অবস্থান বদল হচ্ছে সময়ে সময়ে। তাই কে জিতবে, কে হারবে- এটা নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত।

জুলধা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী (চশমা প্রতীক) মোঃ মুছা বলেন, ‘সব এলাকায় চশমার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে মানুষ আমার পক্ষে আছেন। আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচনের ভোটে আমিই বিজয়ী হবো।’

শিকলবাহার স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতিযোগিতার সিঁড়ি পার হয়ে সাধারণ মানুষজন যোগ্য কাউকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য চেয়ারম্যান বানাবেন। আমি আশা করি শিকলবাহার জনগণ আমাকে বিমুখ করবেন না। আমার উপর আস্থা রাখবেন। আমি উন্নয়নে বিশ্বাসী।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ সোলায়মান তালুকদার, আব্দুল করিম ফোরকান ও হাজী মোঃ নুরুল হক বলেন, ‘মানুষ উন্নয়নের পক্ষে। ২৬ ডিসেম্বর উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রতীক নৌকায় ভোট দেবেন। মাননীয় ভূমিমন্ত্রীর এলাকায় নৌকার বিজয় অব্যাহত রাখবেন।’

(জেজে/এসপি/ডিসেম্বর ২৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test