E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কর্ণফুলীর লেইঙ্গা খাল খননে পুকুর চুরি!

২০২২ জানুয়ারি ২৩ ১৪:২২:৫৮
কর্ণফুলীর লেইঙ্গা খাল খননে পুকুর চুরি!

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চার ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহমান লেইঙ্গা খালের প্রায় ৯ কিলোমিটার খনন কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রাচীনতম এই খাল খনন করা হচ্ছে প্রায় ৪১ বছর পর।

জানা যায়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খাল পুনঃখননের আওতায় খালটি পুনর্জীবিত ও ফসলি জমির চাষাবাদে কৃষকদের উপকারের উদ্দেশে খনন করা হচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে খালপারে ফাটল দেখা দিয়েছে।

চরলক্ষ্যা সুলতানুল আউলিয়া মাজার সংলগ্ন পাশের সড়ক ভেঙে খালে পড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে তেলের ড্রাম কেটে তাতে গাছ দিয়ে মাটি আটকিয়ে গাইডওয়াল তৈরি করছে। খাল শুকিয়ে খনন কিংবা টেকসই পাকা গাইডওয়াল ছাড়া যেনতেন ভাবে পুনঃখনন চলছে।

এমনকি ঠিকাদার গভীর পানির মধ্যে খাল খননের কাজ করছেন এবং খনন কাজে দরপত্রে বর্ণিত সিডিউল অনুসারে গভীরতা ও চওড়া করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

নির্ধারিত নকশা অনুযায়ী খালটি খনন না করায় আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে, বিপাকে পড়তে পারে খালপারের মানুষ। এসব লোকজন আবার খালের জমি দখল করে বসতঘর ও গরুর খামার তৈরি করে রেখেছেন। করা হয়নি উচ্ছেদ।

কার্যাদেশ অনুযায়ী খালটির জিরো পয়েন্ট থেকে উপরিভাগে স্থানভেদে কোথাও ২৫ থেকে ৩৫ ও ৪০ ফুট প্রশস্ত আর তলদেশ কোথাও স্থানভেদে ১০ থেকে ১২ ফুট প্রশস্ত এবং খালের গভীরতা ১০ ফুট করে খনন করার কথা। কিন্তু সরেজমিন দেখা যায়, খাল খননের মাটি কোনো প্রকার ড্রেস করা ছাড়াই ছড়ানো ছিটানোভাবে দু’পাশে ফেলে রাখা হয়েছে।

কোনো কোনো স্থানে এক পারের মাটি আংশিক খনন করা হয়েছে। এর বিপরীত পারে খাস জমি থাকলেও সেখানে মাটি খনন করা হয়নি। খালের গভীরতাও কম। পার ধসে মাটি খালের মধ্যেই পড়েছে। কিন্তু মাটি সরানোর কোনো উদ্যোগ নেই। অদৃশ্য কারণে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনও নীরব।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, খননকাজে অনিয়ম পরিলক্ষিত হলেও সুকৌশলে কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, কার্যাদেশ অনুযায়ী খাল পুনঃখননের কাজ করা হচ্ছে না। খালের দু’পাশ থেকে আড়াআড়ি করে কিছু মাটি কেটে ড্রেস ছাড়াই পাশে ফেলা হয়। যার ফলে খালের পাশে রাখা মাটি খালেই ভেঙে পড়ছে।

স্থানীয় কৃষক হাজী রহিম, জানে আলম ও শহরমুল্লুক বলেন, খাল খনন করা হচ্ছে জলাবদ্ধতা ও কৃষকদের উপকারের জন্য। কিন্তু সঠিকভাবে খনন না করায় উপকারের চেয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো বেশি। তাছাড়া যে পরিমাণ খাল খনন করার কথা তা করছে না। তাঁরা আরও বলেন, মাটি কাটার গাড়ি চলাচলের জন্য দু’পাশের অধিকাংশ কৃষকের ফসলি জমি বিনষ্ট ও কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই মালিকানাধীন লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের দফতরে একাধিকবার জানালেও কোনো সুফল মেলেনি।

বক্তব্য নিতে প্রকল্পের শাখা কর্মকর্তা সিজেন চাকমা, মো. মানজুর এলাহী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম দাশকে একাধিকবার কল দিলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।

ওদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রকল্পের সাইনবোর্ডে টাঙানো খাল খনন কাজের ঠিকাদার মেসার্স গরীবে নেওয়াজ এন্টারপ্রাইজের দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেই নম্বরও ভুল বলে জানা যায়। একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরীর কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম পৌর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তন্ময় কুমার ত্রিপুরা জানান, লেইঙ্গা খালটি খনন করতে গেলে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে নকশা অনুযায়ী খালটি খনন করা না হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

তিনি বলেন, কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা ও জুলধা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবহমান প্রায় ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লেইঙ্গা-শিকলবাহা-চৌমুহনী নয়াহাট খালটি নয়াহাট জামে মসজিদের কাছ থেকে উৎপত্তি হয়ে ডায়মন্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকায় মিলিত হয়ে পুনরায় কর্ণফুলী নদীতে পতিত হয়েছে। দীর্ঘদিন পুনঃখনন না হওয়ায় খালের বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে বর্ষা মৌসুমে নিকটবর্তী এলাকাসমূহে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে।

গত শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে খালটির পুনঃখনন কাজ পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। এসময় তিনি জানান, ডেলটা প্ল্যানের আওতায় সারাদেশে ৫১২টি খাল পুনঃখনন করা হচ্ছে। ধারাবাহিকতায় শিকলবাহা খাল ছিল না, পুরোটাই ছিলো ভরাট ও অবৈধ স্থাপনা। যা এখন খনন ও ড্রেজিং করা হচ্ছে।

জানা গেছে, এ প্রকল্পে ২ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দের কাজটি পান মেসার্স গরীবে নেওয়াজ এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ২৭ জুন কাজ শুরু করলেও কার্যাদেশ অনুযায়ি কাজ সমাপ্তির সময় এ বছরের ৩১ মে। এতে কর্ণফুলী উপজেলাধীন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে পার্শ্ববর্তী মইজ্জ্যারটেক এলাকার শিকলবাহা-চৌমুহনী-নয়াহাট- লেইঙ্গাখাল পুনঃখননন কাজ করবেন।

(জেজে/এএস/জানুয়ারি ২৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test