E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

গোপালগঞ্জে ‘গণহত্যায় জয়বাংলা পুকুর’ মঞ্চস্থ

২০২২ এপ্রিল ০১ ১৭:১৯:০৮
গোপালগঞ্জে ‘গণহত্যায় জয়বাংলা পুকুর’ মঞ্চস্থ

তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের নির্যাতন, অত্যাচার, জুলুম আর নৃশংস হত্যার স্মৃতি রয়েছে গোপালগঞ্জের জয়বাংলা পুকুরে। যুদ্ধ দিনের সেই ভয়াল স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে পরিবেশ থিয়েটারে মাধ্যমে মঞ্চস্থ করা হয়েছে। এ থিয়েটার উপস্থিত সরাব অশ্রু ঝড়িয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টায় গোপালগঞ্জ জয়বাংলা পুকুরপাড়ের বধ্যভূমিতে মো. কাজী আনিসুল হক বরুনের রচনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি রেপার্টরি নাট্যদল পরিবেশন করে ‘গণহত্যায় জয়বাংলা পুকুর’।

নির্দেশক বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদে মিনি ক্যাম্প স্থাপন করে। এখানে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী নর-নারীকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ধরে এনে জুলুম আর নৃশংসভাবে হত্যা করে। মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জয়বাংলা পুকুরে ফেলা হয়েছে। আমাদের নাটকে প্রত্যক্ষদর্শী, জুলুমের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বয়ান ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা হয়েছে জয়বাংলা পুকুরের আবহে। তারপর পুকুরপাড় জুড়ে সবুজ ছায়াঘেরা পরিবেশে পাকিস্তানী বাহিনীর জুলুম আর নৃশংস হত্যার দৃশ্য ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে। ’

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গণহত্যায় ‘জয়বাংলা পুকুর’ পরিবেশ থিয়েটার মঞ্চায়ন করা হয়েছে। এতে মূল ভাবনায় ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ লুৎফার রহামান বাচ্চু বলেন, এ নাটক আমাদের যুদ্ধ দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। পাকবাহিনীর নৃশংসতা তরুণ প্রজন্মের অভিনেতারা জীবন্ত করে তুলেছে। পরিবেশ থিয়েটার পুকারপাড় জুড়ে গাছপালা ও গ্রামীণ পরিবেশের আবহে জয়বাংলার পুকুরপাড়ের সেই স্মৃতিকে তুলে ধরেছে। নাটকের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এ দেশ এগিয়ে যাবে।

গোপালগঞ্জের নাট্যকর্মী সপ্তর্শী বিশ্বাস বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। নতুন প্রজম্মের মানুষ হিসেবে গণহত্যার এ নাটকে অভিনয় করেছি। সেই সময়কে অনুধাবন করেছি। সে সময় মুক্তিকামী মানুষ নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। স্বজন হারিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ বধ্যভূমিতে বিলাপ করেছে। স্বাধীনতার জন্য অগনিত মানুষের ত্যাগ আমাকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছে।

গোপালগঞ্জে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, জেলার সব বধ্যভূমি চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করা হবে। প্রতিটি বধ্যভূমির জুলুম আর নৃশংস হত্যার ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে। তারা এখান থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্কে জানতে পারবে। এর মাধ্যমে তারা সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে ।
জেলা কালচারাল অফিসার আল মামুন বিন সালেহ বলেন, জেলার একটি নাট্যদল দীর্ঘ দিন পরিশ্রম করে গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার মঞ্চস্থ করেছে। শিল্পকলার মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এ নাটকের মূল ভাবনায় ছিলেন। নির্দেশক আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছেন বলেই এটি শিল্পিত ও নান্দনিক হয়েছে।

লিয়াকত আলী লাকী বলেন, মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা গোপালগঞ্জের মানুষের কাছে গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার উপস্থাপন করেছি। শিল্পের সব শাখাই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাজ হচ্ছে। ৫০ বছর আগের গণহত্যা এই পরিবেশ থিয়েটারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। শিল্প-সাহিত্য ইতিহাসকে সজীব রাখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। সারা দেশে এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা গণহত্যা-বধ্যভূমি তথা মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে শৈল্পিকভাবে পৌঁছাতে চাই। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযোদ্ধারা একটি আশা নিয়ে সংগ্রম করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আমার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশার উন্নতির শিখড়ে পৌঁছে দিতে চাই।’

(টিকেবি/এসপি/এপ্রিল ০১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test