E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

নওগাঁর মান্দায় গ্রোয়ার্স মার্কেট এখন ধানের আড়ত!

২০১৪ অক্টোবর ০৮ ১৫:০৮:৫৯
নওগাঁর মান্দায় গ্রোয়ার্স মার্কেট এখন ধানের আড়ত!

নওগাঁ প্রতিনিধি : সরকারের কোটি টাকা মূল্যে নির্মিত নওগাঁর মান্দা উপজেলার সতিহাট গ্রোয়ার্স মার্কেটটি দখলে নিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মার্কেটের ভেতরে বসানো হয়েছে ধানের আড়ত। এতে যে উদ্দেশ্য নিয়ে মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়েছিল তা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। জেলা মার্কেটিং অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারির যোগসাজসে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বিগত ২০০৮ সালে উপজেলার সতিহাটের গরুহাটি এলাকায় গ্রোয়ার্স মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়। মার্কেটের ভিতরে মহিলা কর্ণার, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির অফিসকাম ট্রেনিং সেন্টার, পুরুষ/মহিলা টয়লেট ও স্টোরেজ গোডাউন রয়েছে। অবশিষ্ট ফাঁকাস্থানকে ১২ ভাগে (প্রত্যেক ভাগের জন্য ১২ বর্গফুট এরিয়া নির্দিষ্ট) বিভক্ত করে ১২টি গ্রুপকে এবং মহিলা কর্ণারে ৪টি দোকানঘর ৪টি নারী গ্রুপের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয়। সেসময় প্রতি গ্রুপে ১৫ থেকে ২০জন সদস্য অন্তর্ভূক্ত করে দল গঠন কাজে সহায়তা দেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। একটি গ্রুপ একাধিক প্লট ব্যবহার করতে পারবে না এমন সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে প্রকল্পের নীতিমালায়।

জানা গেছে, উত্তর-পশ্চিম শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের (এনসিডিপি) আওতায় সতিহাটের গ্রোয়ার্স মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়। ক্ষুদ্র কৃষক দলের সমন্বয়ে গঠন করা হয় কৃষক বাজার গ্রুপ। ব্যাপারী বা ফড়িয়াদের অংশ গ্রহণ ছাড়াই এ বাজারের মাধ্যমে কৃষকরা শাক-সবজি, ফলমূল, পিয়াজ, রসুন, আদা, সুগন্ধি ধান ও চাল, গমসহ উৎপাদিত ৩৩টি পণ্যের বাজারজাত করতে পারবে। ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে এ বাজারের কার্যক্রম শুরু হলেও অল্প দিনের ব্যবধানে তা মুখ থুবড়ে পড়ে। স্থানীয় বাজারের ব্যাপারী, ফড়িয়া ও কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চক্রান্তের ফলে মার্কেটের কৃষক বাজারটি বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে মার্কেটের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পদ দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ওই সকল প্রভাবশালী ব্যক্তি। নওগাঁ জেলা বাজার নিয়ন্ত্রক অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে কাঞ্চন গ্রামের জনাব আলী, গনেশপুর গ্রামের হুমায়ন কবীর, শ্রীরামপুর গ্রামের রশিদুল ইসলাম ও চকখোপা গ্রামের রহিম বক্স এ মার্কেটটি নামমাত্র মূল্যে লিজ নেন। বর্তমানে প্রকল্পের নীতিমালা উপেক্ষা করে এ চার ব্যক্তি মার্কেটের ভেতরে ধানের আড়ত খুলে দেদারছে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের জন্য এ মার্কেটের পজিসন ১২ জন পুরুষ ও ৪ জন নারীকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা মার্কেটিং অফিসে শুধুমাত্র এদের নামের তালিকা দেখা গেলেও মার্কেটের পজিসনে এদের পাওয়া যায় নি। মহিলা কর্ণানে নেই নারীদের কোনো দোকান। সেখানে রাখা হয়েছে ধান ভরার জন্য চটের বস্তার বান্ডিল। মার্কেটের দখলে থাকা ধান ব্যবসায়ি জনাব আলী জানান, জেলা মার্কেটিং অফিসের মাধ্যমে লিজ নিয়ে তারা সেখানে ধানের ব্যবসা করছেন। এতে জেলা মার্কেটিং অফিসে প্রত্যেক বছরের জন্য ৪ হাজার ৪শ’ টাকা জমা দিয়ে এটি দখলে রেখেছেন তারা। এ বাজার তদারকির জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি, জেলা বাজার নিয়ন্ত্রককে সদস্য সচিব করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে।

তবে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহানা আখতার জাহান এ মার্কেট সর্ম্পকে কোনো কিছুই অবগত নন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে জেলা বাজার নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা তার দপ্তরে এসে কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে নিয়ে যান। এছাড়া তিনি আর কিছুই জানেন না।

এব্যাপারে বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রামানিক জানান, কৃষকদের নায্য মূল্য নিশ্চিত করতেই গ্রোয়ার্স মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। কৃষক বাজার বন্ধ করে দিয়ে সেখানে ধানের আড়ত চলতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি ও প্রকল্পের নীতিমালা পরিপন্থী কাজ বলে দাবি করেন তিনি।

নওগাঁ জেলা বাজার নিয়ন্ত্রক মকছেদুল ইসলাম গনমাধ্যমকে জানান, নিয়ম মেনেই মার্কেটটি লীজ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক পজিসনের জন্য বার্ষিক ৫৬ টাকা হারে ১২ জনের মাঝে এটি বরাদ্দ দেয়া হয়। মহিলা কর্ণার দেয়া হয়েছে ৪জন নারীকে। কৃষক মার্কেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে লীজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি বরাদ্দের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মার্কেটের ভেতরে ধানের আড়ত চালানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্কেটের ভেতরে আড়ত খুলে ধানের ব্যবসা করা প্রকল্পের নীতিমালা পরিপন্থী কাজ। ধানের আড়ত বন্ধের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গটি কৌশলে এড়িয়ে যান।

(বিএম/জেএ/অক্টোবর ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test