E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মধুমতি সেতুর দ্বার খুলছে কাল

২০২২ অক্টোবর ০৯ ১৬:০২:১৬
মধুমতি সেতুর দ্বার খুলছে কাল

রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, নড়াইলের লোহাগড়ার মধুমতি নদীর ওপর কালনা পয়েন্টে নির্মিত দেশের প্রথম ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন ‘মধুমতি সেতু’র উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামীকাল সোমবার। উদ্বোধনের দিন থেকেই সেতুতে চলবে সব ধরনের যানবাহন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে মধুমতি সেতু নির্মান শেষে আগামীকাল সোমবার উদ্বোধনের ঘোষনায় মধুমতি পাড়ের মানুষের মধ্যে আনন্দ উল্লাশের শেষ নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১২ টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সেতু উদ্বোধন করবেন। সেতুর পশ্চিমপ্রান্ত লোহাগড়ার অংশে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব ড.আহম্মদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত, জাপানের রাষ্ট্রদুত, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মুহিত উদ্দিন, নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি, নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মোর্তুজা, নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শ্যামল ভট্টাচার্য, সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আজগর আলীসহ উর্দ্ধতন সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নড়াইল, লোহাগড়া, গোপালগঞ্জ, কাশিয়ানীসহ আশে পাশের জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

বহুল কাঙ্খিত মধুমতি সেতু নির্মানের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হতে যাচ্ছে। এ সেতুর পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা এবং পশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে সেতুর কাজের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেছিলেন।

গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যশোর ও নড়াইলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে মধুমতি সেতুর প্রয়োজনীয়তা বহু গুণ বেড়ে যায়। পদ্মা সেতু পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার হবে কালনা পয়েন্টে মধুমতি সেতু। তাই পদ্মা সেতুর সুফল পেতে মধুমতী নদীর এ সেতুটি নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছিল। গত ২২ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেতুটি পরিদর্শন করেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ হয়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আরো জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চার লেনের হলেও দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু মধুমতি। পদ্মা সেতুর পাইলক্যাপ পানির ওপর পর্যন্ত। কিন্তু এ সেতুর পাইলক্যাপ পানির নিচে মাটির ভেতরে। তাই নৌযান চলাচল সমস্যা হবে না, পলি জমবে না এবং নদীর স্রোতও কম বাধাগ্রস্ত হবে।

সওজ ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ সেতু চালু হলে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে যশোর হয়ে নড়াইলে যাতায়াতকারী পরিবহন মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া যাতায়াতের পরিবর্তে মধুমতি সেতু হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এতে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমবে। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া ও মোংলা বন্দর ও সাতক্ষীরার দূরত্বও কমে যাবে। এশিয়ান হাইওয়েতে থাকা এই সেতুটি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকাও রাখবে।

মধুমতি সেতুর টোল নির্ধারণ

মধুমতি সেতু পারাপারের জন্য বড় ট্রেইলার ৫৬৫ টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সসেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০ টাকা, দুই এক্সসেল বিশিষ্ট মাঝারি ট্রাক ২২৫, ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহ্নত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫ টাকা, বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫ টাকা, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকআপ, কনভারশনকৃত জিপ ও রে-কার ৯০ টাকা, প্রাইভেট কার ৫৫ টাকা, অটোটেম্পো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশা, ভ্যান ও বাইসাইকেলের ক্ষেত্রে পাঁচ টাকা টোল নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

(আরএম/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test