E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তার আইডি হ্যাক, প্রায় ৫০০ লোক ভাতা বঞ্চিত

‘আমার বয়স্ক ভাতার টেহা ভুল নাম্বারে প্রতারণা কইর‌্যা লইয়া গেছেগ্যা’ 

২০২২ নভেম্বর ১৬ ১৮:১৩:৫০
‘আমার বয়স্ক ভাতার টেহা ভুল নাম্বারে প্রতারণা কইর‌্যা লইয়া গেছেগ্যা’ 

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : আমার বয়স্ক ভাতার টেহা পাইতাছিনা। প্রতারনা কইর‌্যা ভুল নাম্বারে আমি সহ আমরার অনেকেরই ভাতা লইয়্যা গেছেগা। ০১৬১৮১৬২৯২৭ নাম্বারে এতদিন ভাতার টেহা আইত। কিন্তু এই বার আর এই নাম্বারে ভাতার টেহা আইছেনা। টেহা না আওয়ার পরে টেহা তোলার জন্য বার বার উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গেলে স্যারেরা কয় ভুল নাম্বারে টাকা চলে গেছে। থানায় জিডি করেন অথবা আমাদের নিকট আবেদন করেন, আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব। এ কথাগুলো বলছিলেন, কেন্দুয়া উপজেলার ১১ নং চিরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত মনাটিয়া গ্রামের মৃত আসক আলীর ছেলে হাদিস মিয়া।

হাদিস মিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৭২১৪৭২০০৫৭৯৩৮। হাদিস মিয়া এতদিন যে নাম্বার থেকে টাকা উত্তোলন করতেন সেই নাম্বারটি ০১৬১৮১৬২৯২৭। তাকে অফিস থেকে জানানো হয়েছে যে ভুল নাম্বারে টাকা চলে গেছে সেই নাম্বারটি ০১৭৫৬২৬৩১৭৯। এভাবে ভুল নাম্বারে শুধু হাদিস মিয়া নন উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ৫০০ সুবিধাভোগীর টাকা উধাও হয়ে গেছে। সুবিধাভোগীরা হাদিস মিয়ার মতোই দিনের পর দিন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে ধর্ণা দিয়েও কোন সমাধানের পথ খোজে পাচ্ছেন না। তবে তাদেরকে একটি ফরমে পূর্বের নাম্বারে যাতে পরবর্তি ভাতার টাকা যায় সেই জন্য একটি আবেদন নেয়া হচ্ছে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে। আবার কাউকে কাউকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে থানায় জিডি করার জন্য।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে মোট বয়স্ক ভাতা ভোগীর সংখ্যা ১৯ হাজার। বিধবা ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার এবং প্রতিবন্ধি ভাতাভোগীর সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার। সকল ভাতাভোগীই নগদে টাকা পেতেন। সম্প্রতি প্রায় ৫০০ ভাতাভোগী পরেছেন প্রতারক চক্রের ফাঁদে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার আইডি হ্যাক করে ভুল নাম্বারে টাকা নিয়ে গেছে। নগদে তাদের নির্ধারিত নাম্বারে এতদিন টাকা উত্তোলন করলেও এখন তারা আর ওই নাম্বার থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না। সহজ সরল মানুষগুলোর ভাতার টাকা ভুল নাম্বারে চলে যাওয়ায় তাদের মাথায় হাত পরেছে। চোখে দেখছেন সরষে ফুল। তারা আর কোনদিন তাদের নির্ধারিত নাম্বারে টাকা পাবেন কিনা তাও বলতে পারছেন না।

গড়াডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান খান সোহাগ বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার আইডি (পাসওয়ার্ড) হ্যাক করে ভুল নাম্বারে প্রায় ৫০০ লোকের ভাতা নিয়ে গেছে। যে পাসওয়ার্ডটি একমাত্র সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ছাড়া আর কারোরই জানা থাকার কথা না। ভোক্তভোগীরা বার বার সমাজসেবা কার্যালয়ে গেলে তাদের কাছ থেকে পূর্বের নাম্বার থেকে টাকা তোলার জন্য একটি আবেদন নেয়া হচ্ছে এবং জিডির পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।

চেয়ারম্যান সোহাগ জানান, ৩১ অক্টোবর কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ভাতা নিয়ে ক্যালেংকারীর বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তবে ওই সভায় উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী জালাল সভায় জানিয়েছেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সুবিধাভোগীদের ভাতা পেতে সঠিক পদক্ষেপ নেবেন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে মঙ্গলবার দুপুরের পর তিনি সমকালকে বলেন, একটি শক্তিশালী প্রতারক চক্র আমার (উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তার আইডি হ্যাক) করে দুই শতাধিক সুবিধাভোগীর ভাতার টাকা নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল। বিষয়টি আমরা জানতে পেরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক বরাবর, পর পর তিনটি চিঠি দিয়েছি।

তিনি বলেন, অধিদপ্তরে আবেদনের প্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে যে সব ভুল নাম্বারে টাকা গিয়েছিল সেই সব নাম্বার গুলো ব্লক করে দেয়া হয়েছে। প্রতারক চক্র আর ওই নাম্বার থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসের দিকে যার যার হিসেবে সুবিধাভোগীদের টাকা চলে আসবে।

আইডি হ্যাক করা হয়েছিল এ বিষয়ে থানায় কোন জিডি করেছেন কিনা জানতে চাইলে সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর পর পর তিনটি চিঠি দেয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে সমাধানেরও আশ্বাস পেয়েছি এই জন্য থানায় আর কোন জিডি করিনি।

(এসবি/এসপি/নভেম্বর ১৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test