E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নতুন বছরে সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা 

২০২২ ডিসেম্বর ২৭ ১৬:৩৯:১৮
নতুন বছরে সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা 

স্বাধীন মুুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কেশবপুর : “দাঁড়াও পথিক বর জন্ম যদি তব বঙ্গে তীক্ষ ক্ষণকাল এ সমাধি স্থলে”। যশোরের কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম সাগরদাঁড়ি। এই গ্রামের বিখ্যাত জমিদার বাড়িতে রাজনারায়ণ দত্ত ও জাহ্নবী দেবীর কোল আলো করে ১৮২৪ সালের ২৫ শে জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনক, অমিত্রাক্ষ ছন্দের প্রবর্তন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

মায়ের হাতেই শিক্ষাজীবন শুরু মধুর। ১৩ বছর বয়সে কলকাতায় যান সেখানে স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি হন। এরপর কলকাতা হিন্দু কলেজে পড়াশুনা করে উকালতি শিখতে পাড়ি জমান মাদ্রাজে। তিনি বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, আরবি, ফারসি, হিব্রু সহ বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।

তার জগৎ বিখ্যাত লেখা গুলোর মধ্য অন্যতম মেঘনাদবধ কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, সনেট, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারি, বুড়ো শালিকের ঘাড়ের রোঁ, একেই বলে কি সভ্যতা, দ্যা ক্যাপটিভ লেডী, হেক্টরবধ, তিলোত্তমাসম্ভর প্রভৃতি।

তিনি ১৮৪৩ সালে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে নামের আগে মাইকেল উপাধী লাভ করেন। তার ১ম স্ত্রী রেবেকা , ২য় স্ত্রী হেনরিয়েটা। হেনরিয়েটার মৃত্যুর ৩ দিন পরে ১৮৭৩ সালের ২৯ শে জুন কলকাতার একটি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন কবি। শেষ হয় এক সংগ্রামী, বিদ্রোহী সাহিত্য স্রষ্টার কাব্যিক অধ্যায়। মহাকবিকে কলকাতায় সমাহিত করা হয়।

বর্তমানে সাগরদাঁড়ীতে কবির স্মৃতি বিজাড়িত বাড়িতে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর এর সাহায্যে কবির স্মৃতি নিদর্শন ও আলোকচিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি জাদুঘর। এটাকে মধুপল্লী বলা হয়। মনোমুগ্ধকর নির্মাণশৈল্য যেন বারংবার স্মরণ করিয়ে দেই জমিদার বাড়ি বলে কথা। এখানে রয়েছে কবির পিতার কাছারিঘর, (যেটা এখন লাইব্রেরি) কবির বাড়ি, কবির কাকার বাড়ি, শান বাঁধানো ঘাটের পদ্মপুকুর, কবির ভাস্কর্য, বাড়ির ভিতরে দূর্গামন্দির, কবির প্রসূতি স্থান, গোপন রাস্তা, ব্যবহৃত খাট, আলমারি, আয়না, চেনামাটির পাত্র, গ্রাম্যফোন সহ নানাবিধ জিনিসপত্র। মধুসূদন মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়েছে কবির নিজের হাতে লেখা চিঠি, তার স্বজন বন্ধু বান্ধবদের সাথে ছবি, তার লেখা বই।

কপোতাক্ষ নদীর তীরে রয়েছে বিদায় ঘাট, অসুস্থ মাকে দেখতে এসে যেখানে মধু তাবু গেড়ে ১৪ দিন কাটিয়েছিলেন। পিতার কঠোরতায় সাহস করে পা রাখতে পারেনি রাজপ্রাসাদে। কবির শৈশবের সাথি কাঠবাদাম গাছ টা আজও যেন মধুসূদনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। নদীর তীরেই রয়েছে বই হাতে মাইকেলের বড় একটি ভাস্কর্য, নির্মাধীন বাউফাউ পার্ক, জেলা পরিষদের ডাক বাংলো, কপোতাক্ষ নদের বুকে মাঝির নৌকা ভ্রমণ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

এখানে ঘুরতে আসা দেশ বিদেশের দর্শনার্থীরা জানান, কবির গৌরবময় সাহিত্যকর্ম, পরিবার থেকে বিচ্ছেদের কথা। তাদের দাবি যোগাযোগ ও আবাসন ব্যবস্থা ভালো হলে সাগরদাঁড়ীতে অনেক পর্যটক আসবে। স্থানীয়রা বলেন মহাকবির জন্য সাগরদাঁড়ী সারাবিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করাতে তারা গর্বিত। অবসরে মনের খোরাক মেটাতে বিভিন্ন সময় মধুসূদন দত্তের মধুপল্লী ও কপোতাক্ষ নদের তীরে ভীড় করে দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক।

প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে কবির জন্মদিন উপলক্ষে ৭ দিন ব্যাপি মধুমেলার আয়োজন করে জেলা প্রসাশক। করোনার কারণে ২ বছর মধু মেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবার ২০২৩ সালের ২৫ শে জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ৭ দিন ব্যাপী মধুমেলা। মধু মেলায় হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে মধুকবির পূর্ণ জন্মভূমি। সাগরদাঁড়ী দেশের পর্যটন খ্যাতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। তবে এখানে প্রয়োজনের তুলনায় কম দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করেন অনেকেই।

(এসএ/এসপি/ডিসেম্বর ২৭, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test