E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কৃষি বর্জ্য ও মাটি থেকে পরিবেশ বান্ধব ইট তৈরি করলেন ঠাকুরগাঁওয়ে আরমান রেজা

২০২৩ জানুয়ারি ০৫ ১৮:০২:৫২
কৃষি বর্জ্য ও মাটি থেকে পরিবেশ বান্ধব ইট তৈরি করলেন ঠাকুরগাঁওয়ে আরমান রেজা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : দেশের উত্তরের কৃষি নির্ভর ও অনুন্নত জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের ছেলে আরমান রেজা শাহ্। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনয়ারিং বিভাগের ছাত্র তিনি। বিশ্বব্যপি করোনার মহামারিতে লকডাউনের সময় একই বিভাগের অধ্যাপক রেজা খন্দকারের সাথে পিএইচডি-র ‘কৃষি বর্জ্য ও মাটি থেকে পরিবেশবান্ধব ইট’ কিভাবে তৈরি করতে হয় এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা শুরু করেন। সম্প্রতি তারা তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। ৭ মাস গবেষণার পর এই সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

আধুনিক ইমারত নির্মাণে এই পরিবেশ বান্ধব ইট সুদূরপ্রসারি ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী তারা। আরমান রেজা শাহ্ ঠাকুরগাঁও শহরের সরকারপাড়া এলাকার অধ্যাপক মো. আব্দুল কুদ্দুস শাহ্-র ছেলে।

ইট উৎপাদনের কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে সে জমির বারোটা বাজানো কিংবা জ্বালানি কাঠ, গাড়ির পুরোনো টায়ার ও রাবার পুড়িয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির নানা চিত্র। গতানুগতিক এই ধারার বাইরে কৃষি বর্জ্য ও মাটি থেকে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরিতে সফলতা অর্জন করেছেন তারা। পোড়ানো ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব আধুনিক পদ্ধতির ইট হিসেবে এটি পরিচিত হবে- এমনটাই আশা তাদের।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দাবি, কৃষিবর্জ্য ও মাটি দিয়ে তৈরি ইট পোড়ানো ইটের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এছাড়া ব্যয় সাশ্রয়ীও। আর এই ইটের ওজন অনেক কম হওয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধাও রয়েছে।

গবেষণার বিষয়ে আরমান রেজা শাহ্ জানান, কোভিড পরিস্থিতির জন্য যখন সারাদেশের সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ, অনলাইন সেমিস্টার চলছিল, সে-সময়ই মূলত এই গবেষণা করার আগ্রহ জন্ম নেয়। আমি প্রফেসর ড. নাদিম রেজা খন্দকার স্যারের সাথে যোগাযোগ করি এবং স্যার এ বিষয়ে কাজের জন্য আগ্রহ পোষণ করে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি আমার দাদাবাড়ি (ফুলবাড়ি, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়) যাই। আমি ছোটবেলা থেকেই এ অঞ্চলে মাটির ঘরের প্রচলন দেখে এসেছি। সেদিক থেকে প্রচন্ড আগ্রহ থেকে কাজ শুরু করি।

প্রথমদিকে ওই এলাকার মাটির বাড়িগুলো পরিদর্শন করি এবং এসব বাড়ির বাসিন্দাদের সাথেও কথা বলি। তারা কি কি ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করেন, তৈরী করতে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হন এবং মাটির বাড়ির ব্যবহারের সুবিধা নিয়েও আলোচনা করি। দেখি, এই অঞ্চলে প্রচুর ধানের চাষ হয় এবং ফসল তোলার পর উচ্ছিষ্ট বিশাল একটা অংশ তারা পুড়িয়ে ফেলেন যেটাকে আর কোনোভাবেই ব্যবহার করা হয়না। সেখান থেকেই চিন্তায় আসে, এই বর্জ্য থেকে মাটির বাড়ির জন্য ইট প্রস্তুত করার বিষয়টি। সেখান থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করি (মাটি, কৃষিবর্জ্য) এবং কয়েকটি রেশিও ধরে ইটের স্যাম্পল প্রস্তুত করে ফেলি। সেগুলোকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং ড. নাদিম রেজা স্যারের তত্বাবধানে এই ইটের স্যাম্পলগুলোকে ২৪ ইসিবি, বাংলাদেশ আর্মি ল্যাবে কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থ টেস্ট করানো হয়। সেখানে আশাব্যঞ্জক ফল পাই আমরা।

আমদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলকে মাথায় রেখে পরিবেশ বান্ধব ইন্সট্রাকশন ম্যাটেরিয়াল তৈরী করা, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমানো, পরিবেশ বান্ধব বাসস্থান ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।

আমদের সফলতার মধ্যে রয়েছে এই ইট প্রস্তুত করতে খরচের পরিমান প্রায় শূণ্য, যেহেতু এগুলো প্রস্তুত করতে পোড়ানোর প্রয়োজন হয়না, তাই কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূণ্য, অধিক চাপ নিতে পারার ক্ষমতা থাকায় গ্রামের মানুষেরা দীর্ঘদিন একটি মানসম্মত বাসস্থানে থাকতে পারবে, তরুণ সমাজকে গবেষণায় উদ্ভুদ্ধ করা।

আরমান রেজা শাহ আরো বলেন, পোড়ানো ইটের শক্তির মাত্রা থাকে মানভেদে কৃষিবর্জ্য ও মাটি দিয়ে তৈরি ইট বেশ শক্তিশালী ও পরিবেশবান্ধব। গবেষণাতেও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। এই ইট বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরুর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. নাদিম রেজা খন্দকার বলেন, আমরা গবেষণায় দেখেছি কৃষিবর্জ্য ও মাটি দিয়ে তৈরি ইট পোড়ানো ইটের তুলনায় ভালো। কারণ একদিকে এটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবদান রেখে পরিবেশ ভালো রাখবে, সেই সাথে কাঁচামালের জোগানও স্থানীয়ভাবে মোকাবেলা করা যাবে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাটির ঘর নির্মাণ করছে কারণ এই ঘরে বসবাস করা বেশ আরামদায়ক। আমরা মানুষকে মাটির ঘর নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করতেই এই গবেষণা করেছি। সফলতাও পেয়েছি। এখন এই ইট বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে অর্থের প্রয়োজন। সরকার আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলে তাহলে কৃষিবর্জ্য দিয়ে তৈরী এই ইট বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি করা সম্ভব।

(এফ/এসপি/জানুয়ারি ০৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০১ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test