E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

কমিটিতে পদের লড়াইয়ে তুঘলকি কান্ড!

বেতাগীতে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ১৭ ১১:৫৭:৩৬
বেতাগীতে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম

আসাদ সবুজ, বরগুনা : বরগুনার বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাওয়ার লড়াই নিয়ে চলছে তুঘলকি কান্ড। উপজেলা ছাত্রলীগের প্রধান দুটি পদ দখলের লড়াইয়ে একাধিক গ্রুপের মধ্যে একের পর এক হামলা, ভাংচুর সহ কুপিয়ে জখম করার ঘটনা এখন ‘টক অব-দ্যা টাউনে’ পরিনত হয়েছে। এমন সব তুঘলকি কান্ডের জের ধরেই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান সিকদারকে (২৮) পিটিয়ে ও কুপিয়ে দু-পায়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বেতাগী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষীপুরা খেয়াঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে কুপিয়ে জখম করার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবী করেন ছাত্রলীগ নেতা রফিক।

এদিকে পুলিশ খবর পেয়ে আহত ছাত্রনেতা মেহেদী হাসানকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য পাঠালেও অবস্থা গুরতর হওয়ায় দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছেন বলে জানান বেতাগী থানা পুলিশ। আহত ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান ও রফিকুল ইসলাম দুজনেই উপজেলা ছাত্রলীগের আসন্ন কমিটিতে সভাপতি পদপ্রার্থী।

হামলার শিকার আহত ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসানের স্বজনরা জানান,‘ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার লক্ষীপুরার আকন বাড়ি খেয়াঘাট এলাকার একটি দোকানে একজন মেহমান নিয়ে লোক নিয়ে চা খাচ্ছিলেন মেহেদী হাসান। দোকানে তেমন লোকজন না থাকার সুযোগে বেতাগী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকসহ ১০-১২ জন লোক নিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মেহেদীর ওপর হামলা করে।

আহত ছাত্রলীগ নেতা মেহেদীর দেয়া ভাষ্যমতে, তারা প্রথমে পাইপ দিয়ে দু-পায়ের ওপর পিটিয়ে জখম করে, পরে ধাঁরালো দাঁ দিয়ে দু-পায়ে এলোপাথারি কুপিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে মেহেদীকে উদ্ধার করে বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসকরা গুরতর জখম দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন দু-পায়েরই রগই কেটে গেছে, প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। হয়তো উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাও পাঠাতে হতে পারে।

মেহেদীর পরিবার আরো জানান,‘ আসন্ন ছাত্রলীগের সভাপতি পদ পেতে জেলার নেতাদের কাছে মেহেদীর সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতা বেশি থাকায় ক্ষীপ্ত হয়ে রফিক ও তার সাথে থাকা মাস্তান বাহিনীরা মেহেদীকে উৎক্ষাত করতে চায়।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশ বলছেন, ছাত্রলীগ নেতা রফিক মানেই আতঙ্ক। জেলা ছাত্রলীগে পদ পাওয়ার পরপরই নানা অপকর্মের দায়ে হয়েছেন একাধিক মামলার আসামী। তারপরও থেমে নেই ওই ছাত্রলীগ নেতা রফিকের অপকর্ম।

স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর দাবী, পৌর ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা হঠাৎ জেলা ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার পর একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা রফিক। তৈরী করেছেন নিজস্ব ছাত্রলীগের বলয়। তারই নির্দেশে তার গ্রুপের নেতাকর্মীরা করছেন একের পর এক হামলা,সংঘর্ষ ও কুপিয়ে জখমসহ নানা অপকর্ম। এর আগেও ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেয়া নিয়ে বিতর্কের ঘটনায় তাইফুল ইসলাম নামে আরেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী নেতাকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছিল ওই ছাত্রলীগ নেতা রফিকের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও সূত্র জানায়- ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ, ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালের ৩০মার্চ, ২০১৭ সালের ১৮ মে এবং ২১ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে মারামারি ও কুপিয়ে জখমসহ নানা অপকর্মের জন্য বেতাগী থানায় রুজু হওয়া এসব মামলার প্রধান আসামী হিসেবে অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম।

গত ২৭ অক্টোবর ২০২২ তারিখে বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পৌর ও উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করলে একক আদিপত্য বিস্তার ও ভাইটাল পদ দাবী করে, পদপ্রত্যাশীদের মাঝে দেখা দেয় নানা গ্রুপিং ও বিশৃঙ্খলা যার উত্তেজনা যেন কাটছেই না।

তবে এসকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বেতাগী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন‘ রাজনৈতিক ঝামেলার প্রেক্ষপটে আমাকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে উৎক্ষাত করার জন্যই একটি কুচক্রিমহল আমাকে নানা ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ফাঁসানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। একের পর এক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেও ফাঁসানো হচ্ছে, অথচ এসব ঘটনার সাথে আমার আদৌ কোন ধরণের সম্পৃক্ততা নেই। গতকাল রাতে যে ঘটনা ঘটেছে এ সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা। ঘটনাস্থলে যেহেতু পুলিশ গিয়েছে তারাই তদন্ত করুক ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম কিনা, তাহলেই সত্যতা বেড়িয়ে আসবে। আমার ওপর যেসকল অভিযোগ উঠেছে তা শতভাগ মিথ্যা।’

বেতাগী থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন,‘ স্থানীয়রা খবর দিলে পুলিশ গিয়ে মেহেদীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বেতাগী হাসপাতলে নিয়ে আসে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য দায়িত্বরত চিকিৎসক আহত মেহেদীকে বিভাগীয় শহরে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে এ ব্যাপারে পুলিশি তদন্ত চলমান রয়েছে, এছাড়া এ ঘটনায় কেউ এখনও লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা মুঠোফোনে বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমরা খোজ খবর নিচ্ছি। এ ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের কোন কর্মীর সম্পৃক্ততা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(এএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০১ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test