E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

রাষ্ট্রীয় শোকের দিনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রদর্শনী!

২০২৩ অক্টোবর ২৩ ১৪:০৩:০৭
রাষ্ট্রীয় শোকের দিনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রদর্শনী!

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন ও হামলায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের দিনে জামালপুরের ইসলামপুরে সংগীতানুষ্ঠান করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল। সংগীতানুষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনা না করায় অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ দর্শকরা। এ নিয়ে জেলাজুড়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

গত শনিবার (২১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নের গুঠাইল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ওই সংগীতানুষ্ঠান।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, 'রাষ্ট্র ঘোষিত যুদ্ধবিগ্রহ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের স্মরণে শোক পালনের দিনে গানবাজনা করায় রাষ্ট্রবিরোধিতার সামিল। তবে আয়োজকদের দাবি, ফিলিস্তিনি নাগরিকদের স্মরণে শোক পালনে সরকারের ঘোষণাটি তাদের জানা ছিলো না।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের উদ্যোগে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের উন্নয়নমূলক কাজগুলোর জানান দেওয়ার উদ্দেশ্যে 'প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী ও বাউল সংগীত’ নামে অনুষ্ঠিত হয় গানের ওই অনুষ্ঠানটি। এতে প্রধান আকর্ষণ ছিলো চিত্র নায়ক ফেরদৌস এবং চিত্র নায়িকা নিপুণ। নৃত্য ও গান পরিবেশের জন্য তাঁদের সফরসঙ্গী ছিলেন ২০ জন সংগীত শিল্পী। এছাড়া কুষ্টিয়া থেকে আগত বাউল সংগীত পরিবেশন করতে আসেন আরও একটি বাউল শিল্পী গোষ্ঠী। কিন্তু বিশৃঙ্খলায় রাত ১২টার দিকে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হন আয়োজকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, লোকজন জমায়েত করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জানান দিতে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে হাফডজন তোরণ নির্মাণ করা।

সংগীতানুষ্ঠান উপলক্ষ্যে নির্মিত এসব তোরণে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর ছবি বড় আকারে অঙ্কিত করা হয়। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই সংগীতানুষ্ঠানের বিষয়ে উপজেলাজুড়ে মাইকিং করা হয়।

ইসলামপুর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, 'একদিকে বিদেশি নাগরিকদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক পালন। অন্যদিকে, অনাড়ম্বর সংগীত অনুষ্ঠান উপভোগ করাটা বড়ই বেমানান। পাশাপাশি এধরণের অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী পদে দায়িত্বে থেকে উপস্থিত হওয়াটাও সমীচীন নয়।’

ইসলামপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নূর ইসলাম নূর বলেন, 'রাষ্ট্র যেখানে যুদ্ধবিগ্রহ ফিলিস্তিনি নিহত নাগরিকদের স্মরণে শোক পালনের নির্দেশনা দেয়, সেখানে নারী-পুরুষ সম্মিলিত গানবাজনার অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী কীভাবে হাজির হন, সেটা রুচির দুর্ভিক্ষই বটে। এছাড়া রাষ্ট্র ঘোষিত বিদেশি নাগরিকদের স্মরণ শোক পালনের দিনে গানবাজনার অনুষ্ঠান করায় রাষ্ট্রেবিরোধীর সামিল। আমরা ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর বেমানান কাজের নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ করা হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানের আয়োজক উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চিনাডুলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, 'সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। প্রায় ১৫ বছরে এ উপজেলায় প্রতিমন্ত্রী তাঁর উন্নয়ন চিত্র প্রদর্শনী দেখে ঘণ্টাখানেক পর তিনি চলে যান। এরপর হঠাৎ করে কিছু লোকজন উত্তেজিত হয়ে চেয়ার ভাংচুর করে। এতে সংগীতানুষ্ঠান শেষ করতে পারিনি। তবে এদিন যে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের স্মরণে শোক পালনের সরকারের ঘোষণা ছিলো, সেটা আমার জানা ছিলো না। এদিন অনুষ্ঠান করাটা ভুল হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সংগীতানুষ্ঠানের অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে ওখানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী স্যারের উন্নয়ন চিত্র প্রদর্শনীর নির্ধারিত কর্মসূচি ছিলো।’

ইসলামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন তালুকদার বলেন, 'আয়োজকরা সংগীতানুষ্ঠানের অনুমতি নেয়নি। বিশৃঙ্খলারোধে অনুষ্ঠানে আগতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একদল পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।’

সংগীতানুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকারী ওসি তদন্ত (পুলিশ পরিদর্শক) মো. আনছার উদ্দিন তরফদার বলেন, 'আয়োজকরা যথাযথভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা না করতে পারায়, দর্শকরা উত্তোজিত হয়ে কিছু চেয়ার ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা মূহুর্তের মধ্যেই উত্তোজিত দর্শকদের নিবৃত্ত করেছি।’

এবিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও মোবাইল ফোনের সংযোগ না পাওয়ায় তাঁর কোনো মন্তব্য নেওয়া যায়নি।

তবে চিনাডুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিউর রহমান নাজির বলেন, 'ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শুধু তাঁর উন্নয়ন প্রদর্শনী দেখেছেন। সংগীতানুষ্ঠান শুরুর আগেই প্রতিমন্ত্রী চলে গেছেন।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনের পাশে থাকার কথা জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে আয়োজিত ১৫০ সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শোক পালনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইদিন এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সরকার এই মর্মে সিদ্ধান্তগ্রহণ করেছে যে, গাজাসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য স্থানে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে।

এ উপলক্ষে শনিবার সকল সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকে।

(আরআর/এএস/অক্টোবর ২৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test