E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মৌলভীবাজারে রাতের আঁধারে অর্ধশত সেগুন গাছ উধাও, মুখ খুলছেন না স্থানীয়রা!

২০২৩ নভেম্বর ১১ ১৬:৫৮:২২
মৌলভীবাজারে রাতের আঁধারে অর্ধশত সেগুন গাছ উধাও, মুখ খুলছেন না স্থানীয়রা!

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলা সদরের কামালপুর ইউনিয়নের ওয়াপদা বাঁধের উপর নির্মিত বীর নিবাসের পাশে সরকারি ভুমিতে লাগানো শতাধিক সেগুণ গাছের মধ্যে প্রায় অর্ধশত বিশালাকৃতির সেগুণ গাছ রাতের আঁধারে গাছকাটা শ্রমিক লাগিয়ে ট্রাকে ভরে কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৪ ফুট চওরা ও ৫০ থেকে ৬০ ফুট লম্বা মূল্যবান ওই গাছগুলো মধ্যরাতে কেটে নিয়ে গেলেও কারও কোন প্রতিবাদ নেই। স্থানীয়রাও কেউ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য মুখ খুলছেন না। বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও নিরব। মধ্যরাতে কারা কেটে নিয়ে গেলো গাছগুলো এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বীর নিবাস সংলগ্ন ভুমির উপর প্রায় ৪০ বছর পূর্বে শতশত সেগুন লাগান ওই এলাকার লন্ডন প্রবাসী তাজুল মিয়া। ১৯৯৭ সালে দখলকৃত ওই ভুমি সরকার উদ্ধার করে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকার জন্য দিয়ে দেন। দীর্ঘ সময়ে গাছগুলোও বিশাল আকৃতি ধারণ করে। এতেই নজর পরে একটি চক্রের।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৪ অক্টোবর বনবিভাগের লোকজন গাছগুলোর বিষয়ে কথা বলতে যান ইউপি চেয়ারম্যান আপ্পান আলীর সাথে। তিনি বনবিভাগের লোকজনকে গাছগুলোর বিষয়ে কোন পরামর্শ কিংবা সহায়তা প্রয়োজন হলে প্রস্তুত আছেন বলে জানান। এর ৪দিন পর ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে একটি চক্র নিরবে বিনা বাঁধায় গাছগুলো কেটে নিয়ে চম্পট দেয়।

পরদিন ২০ অক্টোবর বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি গাছ কাটার দৃশ্য সরেজমিন দেখেও সেখানে অবশিষ্ট থাকা ছোট ছোট সেগুন গাছগুলোতে লাল রঙের মার্কার কালিতে মার্কিং করে দিয়ে চলে আসেন। বিষয়টি নিয়ে আশপাশের কেউ মুখ খুলছেনা। স্থানীয়রা কোন প্রতিবাদও করছেন না। ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয়দের ম্যানেজ করেই চক্রটি গাছকাটার কাজ সম্পন্ন করে। গাছগুলো কেটে নিলেও এখনো দৃশ্যমান রয়েছে কাটা গাছের অবশিষ্ট গুড়াগুলো। জানা যায়, কেটে নেয়া একেকটি গাছের মূল্য হবে অন্তত ৪৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হবে বলে ধারণা।

কেটে নেয়া গাছগুলোর পাশেই রয়েছে সরকারি অর্থে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস। সেখানকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিশ চন্দ্র সেন জানান, রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম, কে বা কারা গাছ কেটেছে জানা নেই। তিনি জানান, গাছকাটার পরদিন বন বিভাগের লোকজন এসে ছোট গাছগুলোতে মার্কিং করলেও কাটা গাছ নিয়ে তাঁরা কিছু জানতেও চাননি। ক্ষিতিস চন্দ্র সেনের মতো প্রতিবেশী অন্যদেরও একই বক্তব্য।

বিষয়টি নিয়ে কামালপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আপ্পান আলী ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, কামালপুর মৌজার ’বীর নিবাস’ সংলগ্ন ওয়াপদার বাঁধের উপরে সেগুন জাতীয় ৮০ থেকে ৮৫টি গাছ ছিলো। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫টি গাছ কে বা কারা চুরি করে কেটে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে বন বিভাগ অবশিষ্ট ছোট গাছগুলো মার্কিং করে যান। কিন্তু দু:খের বিষয় বন বিভাগের লোকজন মার্কিং করতে এসে চুরি হওয়া গাছের গুড়া দেখতে পেলেও কোন প্রদক্ষেপ নেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মজনু প্রামানিক বলেন, গাছ কেটে নেয়ার বিষয়টি জানা নেই তবে অবশিষ্ট অন্যান্য গাছগুলোতে বনবিভাগ কর্তৃক মার্কিংয়ের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাবেদ ইকবাল বলেন, বিষয়টি জানা নেই, খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেয়ে এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(একে/এএস/নভেম্বর ১১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test