শ্রীমঙ্গলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, আবাদি জমি সহ স্লুইসগেট হুমকির মুখে

মো: আল-আমিন, শ্রীমঙ্গল : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামে অবস্থিত বড়ছড়া থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু তুলছে স্থানীয় যুবলীগ নেতা জুয়েল মিয়ার নেতৃত্বে একটি চক্র। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে এলাকার সাতটি গ্রামের ২০-২৫ হাজার কৃষকদের চাষাবাদের জন্য কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুইসগেট, সরকারি সেতু, চা বাগানের প্লান্টেশন টিলার অংশবিশেষ। ইতোমধ্যে সুইসগেটটির পেছন দিকে প্রায় ২০ ফুট ছড়া নিচের দিকে দেবে গেছে এবং দিনারপুর চা বাগানের একটি সেকশনের কিছু অংশ ছড়াগর্ভে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ট্রাক ও ট্যাক্টর দিয়ে বালু পরিবহণের কারনে গ্রাম্য আভ্যন্তরীণ সড়ক ও চা বাগান সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিট করা হলে উচ্চ আদালত ওই ছড়া থেকে বালু উত্তোলনে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালুখেকো চক্রটি বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন মহলে আবেদন-নিবেদন করার পরও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
জানা যায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী চক্রের মূল হোতা মির্জাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা জুয়েল মিয়ার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইন এবং বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মামলাসহ একাধিক মামলা থাকার পরও এলাকায় সে দাপটের সাথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ছড়ার বিভিন্ন অংশের বালু উত্তোলন করে বিক্রির জন্য মজুদ করে রাখা হয়েছে। গ্রাম্য আভ্যন্তরীণ সড়কে বালু পরিবহনের জন্য ট্রাক ও ট্যাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াতের কারনে সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃক নির্মিত সুইসগেটের পেছনের অংশ ছড়া দেবে গেছে। এছাড়া দিনারপুর চা বাগানের একটি টিলার চা প্লান্টেশন এলাকা ছড়ায় নিমজ্জিত ও বাগানের সেতু ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় কৃষক মো. শফিক মিয়া বলেন, ‘বড়ছড়া সুইসগেট আমাদের সাতটি গ্রামের প্রাণ। আজ এটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। আমাদের এলাকার হাজার-হাজার হেক্টর জমি এই সুইসগেটের পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল ফলিয়ে আমরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছি। আওয়ামী লীগের কিছু লোকেরা আমাদের এই ছড়ার মধ্যে বালু তোলার ফলে সুইসগেটটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। এলাকার ঘর-বাড়ি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন আমাদের এলাকা বাঁচান।’
কৃষক ইসহাক মিয়া বলেন, ‘সুইসগেট যদি নষ্ট হয় তাহলে এটি আমরারে কে দিবো? সরকার একবার দিছে। আরতো দিতো না। বালু তুইল্লা আমরার বাড়িঘরও একবারে শেষ।’
বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শেখ সবুজ আলম বলেন, ‘২০০৬-০৭ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ এই এলাকার সাতটি গ্রামের ২০-২৫ হাজার মানুষের শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির একমাত্র উৎস এই বড়ছড়া সুইসগেটটি নির্মাণ করে। এর ফলে এই এলাকায় কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমে সেখানে চাষাবাদ করে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অথচ এই বালু দস্যুদের কারনে আমরা আজ ক্ষতিগ্রস্থ। ২০১৭ সাল থেকে আমরা এই বালু বন্ধের জন্য সরকারের উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন মহলে লেখালেখি করে আসছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারনে উনারা আমাদের সেই দাবিটি আমলে নেয়নি। আওয়ামী রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তারা দীর্ঘদিন যাবত বালু তুলে যাচ্ছে। আমাদের সুইসগেটটি যেকোন সময় উল্টে যেতে পারে। এটি উল্টে গেলে ২০-২৫ হাজার কৃষক চাষাবাদ করতে পারবে না। ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাবে। তাই প্রশাসনের কাছে দ্রæত বালু উত্তোলন বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোহাম্মদ মছদ্দর আলী বলেন, ‘এলজিইডি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ২০১৯ সালে অফিস থেকে আমাদের জানান, বালু উত্তোলন বন্ধ করতে না পারলে সুইসগেটটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। আপনারা এলাকাবাসী সোচ্ছার হন। আমরা সোচ্ছার হলেও বিগত দিনে আওয়ামী লীগের প্রভাবের কারনে আমরা বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারিনি। যুবলীগ নেতা জুয়েল, জাহাঙ্গির, শাহজাহান প্রমুখরা এখনো আমাদের হুমকি দেয়। তারা আমাদের সেক্রেটারিকে হুমকি দিয়ে বলে হাইকোর্টে রিট করায় তার যদি বালু তোলা বন্ধ হয় তাহলে ১৬ লাখ টাকা তাকে দেওয়া লাগব। আমরা এখনো আওয়ামী লীগের বালু দস্যুদের কাছে জিম্মি অবস্থায় আছি।’
১ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (সদস্য) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এই এলাকায় প্রচুর বালু উত্তোলন হবার ফলে এলাকার সুইসগেটসহ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া এলাকায় ২-৩ স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী আছে। গ্রাম্য ছোট সড়কে বড় বড় ট্রাক ঢোকানোর ফলে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটতে পারে। আর সুইসগেটটি ভেঙ্গে গেলে এলাকার প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কৃষকের কপালে দুর্ভোগ নেমে আসতে পারে।’
দিনারপুর চা বাগানের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক ‘আমাদের বাগানের সাইড দিয়ে বালু দস্যুরা নিয়মিত বালু তোলে। আমরা বাগানের পক্ষ থেকে ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার চিঠি দেয়া হলেও কোন কিছুতেই কাজ হয় না। রাস্তার উপর সরকারি ব্রিজটিও যেকোন সময় বসে যাবে। আমাদের চা বাগানের সেকশনের প্রায় ২০ শতাংশ ছড়ার মধ্যে চলে গেছে। এই ছড়ায় একটি সুইসগেট আছে বালু তোলার জন্য এটি বারবার রিপিয়ারিং করার পরও ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমরা চাইছি সরকার বালু উত্তোলন বন্ধ করার পদক্ষেপ নেক। নতুবা সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা যাবে না।’
এ ব্যাপারে মির্জাপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা জুয়েল মিয়া বলেন, ‘আমি দুই বছরের জন্য বড়ছড়া লিজ এনেছি। বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মছদ্দর আলী আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন। আমি তাদের ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছি। তার পরও আমার লিজ নেওয়া বালুর ঘাট তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি একাধিক মামলার কারণে এখন আত্মগোপনে আছি। আমি কীভাবে বালু উত্তোলন করছি?’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বালুর লিজ খনিজ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়। আমার কাছে একটা আবেদন আসছে রিটের একটা ইন্টেরিম অর্ডার (মামলা বিচারাধীন থাকাকালীন আদালত কর্তৃক জারি করা আদেশ) এগ্রিমেন্ট কন্টিনিউ না করার কথা বলা হইছে। তারা রিটের কপিটা আমাকে দিয়েছে। আমি এসি ল্যান্ডকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি। এছাড়া বালু মহাল যেহেতু খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক লিজকৃত তাই যারা আবেদন করেছেন তাদেরকে বলেছি আবেদনের একটি কপি ও রিটের কপি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে।’
(এএ/এসপি/জানুয়ারি ০২, ২০২৫)
পাঠকের মতামত:
- তুমুল সংঘর্ষের পর কক্সবাজার পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়
- ধামরাইয়ে যাত্রীবেশে ছিনতাইকালে ৪ জন আটক, গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
- ফরিদপুরে যৌথ অভিযানে দুই চাঁদাবাজ হাতেনাতে গ্রেফতার, কারাদণ্ড
- ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আলী আজগরের পরিবারের পাশে এসডিআই
- রাজবাড়ীতে আ.লীগ-ছাত্রলীগের ৪ নেতা গ্রেফতার
- ‘শেখ মুজিবের করা কালো আইনেই নিষিদ্ধ হতে পারে আ.লীগ’
- মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চায় সরকার : পার্বত্য উপদেষ্টা
- ফরিদপুরে বিস্ফোরক মামলায় মুক্তিযোদ্ধাসহ আ.লীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার
- বিএনপি অফিস ভাঙচুরের প্রতিবাদে ফরিদপুরে মানববন্ধন
- ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন হাসনাত
- ‘আ.লীগ সংবিধানকে নিজেদের দলীয় সংবিধানে পরিণত করেছিল’
- আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ
- ‘বাগেরহাটকে আন্তর্জাতিক পর্যটন হাব প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে সরকার’
- বাঘের তাড়া খেয়ে লোকালয়ে হরিণ, উদ্ধার করে সুন্দরবনে অবমুক্ত
- নড়াইলে আউড়িয়া ও মুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৪, জেলহাজতে প্রেরণ
- মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী নিহত
- অবশেষে সেই ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
- রাজধানীর ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দিলো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
- বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
- ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ঘিরে সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবির টহল বৃদ্ধি
- বরিশালের হত্যা মামলার প্রধান আসামি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার
- মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট হয়েছে, উন্নয়ন হয়নি
- কাশিমপুর কারাগারে সাবেক মেয়র আইভী
- ‘সরকার নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাইছে’
- সোনাতলায় পুলিশের অভিযানে ভিকটিম উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪
- দাবদাহের পর ঈশ্বরদীতে স্বস্তির বৃষ্টি
- গ্যালাক্সি এ০৬ স্মার্টফোন উন্মোচন করল স্যামসাং
- টাঙ্গাইলের পথেঘাটে দীপ্তি ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া
- ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ ১৪৮নং সামরিক বিধি জারি করে
- পঞ্চগড় বৈশাখি লোক নাট্যোৎসবে দ্বিতীয় দিনের পালা 'বাবার শেষ বিয়ে'
- প্রতি লিটার ১৬২.১৯ টাকা দরে পাম অয়েল কিনবে সরকার
- সোনার দামে ফের রেকর্ড, ভরি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা ছাড়ালো
- ‘চট্টগ্রামের রাজাঘাট এলাকা পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়’
- মিশন হেক্সা, আনচেলত্তির সঙ্গে ব্রাজিলের চুক্তি চূড়ান্ত, ঘোষণা শিগগিরই
- জামিন পেলেন মডেল মেঘনা
- অ্যাগুয়েরোর রেকর্ড ভেঙে সবার ওপরে সালাহ
- রাজবাড়ীতে ব্যাটারী চালিত অটোবাইকের নম্বর প্লেট’র ফি কমানোর দাবিতে মানববন্ধন স্মারকলিপি
- বাবাকে কুপিয়ে হত্যার পর পুলিশের কাছে ধরা দিলেন মেয়ে
- ‘মানবিক করিডোর’
- বাংলাবান্ধার জিরো পয়েন্ট এলাকার সৌন্দর্য বর্ধন কাজের উদ্বোধন
- সাতক্ষীরায় ঘেরের জমি লীজ দিতে রাজী না হওয়ায় মালিককে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা
- রাজবাড়ীতে আম পাড়ায় শিশুকে গাছে বেঁধে নির্যাতন
- বাগেরহাটে ৩২৩ মেধাবী শিক্ষর্থীকে সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান
- সোনারগাঁয়ে নিখোঁজের ৫ দিন পর মিললো সিরাজুল ইসলামের লাশ
- চিৎমরমে মারমা তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাসে চলছে সাংগ্রাইয়ের প্রস্তুতি