E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নির্বাচন কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেনের প্রতিবাদ করায় মিথ্যা মামলা 

নড়াইলে ইউপি সদস্যের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মানববন্ধন

২০২৫ মার্চ ০২ ১৮:৫১:৪৪
নড়াইলে ইউপি সদস্যের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মানববন্ধন

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের কালিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার জান্নাতুল ফেরদৌসের ঘুষের লেনদেনের প্রতিবাদ করায় এক ইউপি সদস্য ও এক ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ তুলে গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার চাঁচুড়ি বাজার এলাকায় নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। এসময় তারা নির্বাচন কর্মকর্তার বিচার, তার দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং কারাগারে আটককৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করেছেন।

কারাগারে আটক ওই ইউপি সদস্যের নাম আনিস শেখ। তিনি কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। অন্যজন চাঁচুড়ি বাজার বণিক সমিতির প্রচার সম্পাদক মিল্টন মোল্যা।

মানববন্ধনকারীদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার হালনাগাদের কাজ কাজ চলছিল। সেখানে উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের নেতৃত্বে কাজ করছিলেন একটি দল। ওই দলের একজনের নাম সাকিল, তাঁর মাধ্যমে ভোটার হতে আসা সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে ঘুষ নিচ্ছিলেন নির্বাচন কর্মকর্তা। এসময় পরিষদে অবস্থানরত ইউপি সদস্য আনিস ও ব্যবসায়ী মিল্টন এ কাজে বাঁধা প্রদান করেন। একপর্যায়ে যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল তাঁদের একজনকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন সাকিল ও নির্বাচন কর্মকর্তা। টাকা ফেরত দেওয়ার ভিডিও একটি ফুটেজে ফেসবুকে ঘুরছে। অথচ ওইদিন এখান থেকে কালিয়া থানায় গিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি মিথ্যা মামলা করেন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার রাতেই ইউপি সদস্য আনিস ও ব্যবসায়ী মিল্টনকে রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

চাঁচুড়ি বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান সবুজ বলেন, মামলায় বলা হয়েছে, সরকারি কাজে বাঁধা ও সরকারি কর্মকর্তাদের মারধর করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এখানে তেমন কিছুই ঘটেনি। অন্যায় দুর্নীতি করল ওরাই (নির্বাচন কর্মকর্তা ও টিমের সদস্য), ঘুষের টাকা ফেরতও দিল, তারপরও কোন ক্ষমতাবলে ওনারা মামলা করল? অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়। আমরা এ অন্যায় মেনে নিতে পারি না।

নির্বাচন অফিসের লোকজনদের নিজেদের দোষ ঢাকতে আনিস ও মিল্টনের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা আনিস ও মিল্টনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আজ এখানে সমবেত হয়েছি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানাচ্ছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের মুক্তি না দিলে আসরা নির্বাচন অফিস ঘেরাও করব।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে কালিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। একাধিকবার ফোন দিলেও তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে শনিবার রাতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল ছালেক প্রথম আলোকে বলেন, আমি যতটুকু জানি, ভোটার হালনাগাদের সময় ইউপি সদস্য আনিস বারবার অপ্রাপ্তবয়স্কদের ব্যক্তিদের ভোটার করার জন্য হালনাগাদকারীদের চাপ দেন। এ কাজে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বাঁধা দেন৷ তখন তাঁরা (ইউপি সদস্য ও তাঁর সঙ্গীরা) কোনো পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হালনাগাদ কাজে নিয়োজিত নির্বাচন অফিসের এক আউটসোর্সিং কর্মীর সঙ্গে টাকাপয়সার লেনদেন করছে। এটা পরিকল্পিতভাবেই তাঁরা করেছে।

তিনি বলেন, কর্মী দোষ করে থাকলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিবো৷ কিন্তু তাঁরা সরকারি কাজ করার সময় ওই ছেলেকে মারপিট করেছে। একইসাথে তাঁরা উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে আটকে কিছু অপ্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের ফর্মে স্বাক্ষর নিয়েছে৷ আমার জানামতে এটুকু হয়েছে। এরপরও কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালিয়া থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তার করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাঁদের কারাগারে প্রেরণ করে। মামলার তদন্ত চলছে, সেক্ষেত্রে মানববন্ধনকারীদের অভিযোগও মাথায় রাখা হচ্ছে।

(আরএম/এসপি/মার্চ ০২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test