E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মিথ্যা অভিযোগ ও সংবাদের প্রতিবাদে জামালপুরে সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

২০২৫ এপ্রিল ০৭ ১৯:১৯:৪০
মিথ্যা অভিযোগ ও সংবাদের প্রতিবাদে জামালপুরে সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে মিথ্যা অভিযোগ এবং সংবাদপত্রসহ নানা মিডিয়াতে অসত্য খবর পরিবেশনের প্রতিবাদে জামালপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।

সোমবার (৭ এপ্রিল) সকালে পৌর শহরের তালুকদার মার্কেটের একটি রেস্টুরেন্টে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনান তিনি।

তিনি বলেন, আমি ১৯৯১ সালে জামালপুর সদর -৫ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপির সরকারের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে কোম্পানী কমান্ডার হিসাবে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা রেখেছি। আমার জানা মতে আমি এমন কোন কাজ করিনি যা দল বা দেশের ভাবমূক্তি ক্ষুন্ন হয়। সেই দিনের বিএনপির অফিসে গিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে নেতা কর্মীদের হুমকির যে অভিযোগ গণমাধ্যমে আনা হয়েছে তা জেনে ও শুনে মর্মাহত হয়েছি।

তিনি বলেন, শহরের স্টেশন রোডে সফি মিয়ার বাজার মোড়ে আমার বাবার ক্রয়কৃত সম্পত্তির টিনসেড হাফবিডিং ঘরটি জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসাবে ওয়ারেছ আলী মামুনকে বিএনপির অফিস পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে জেলা বিএনপির কার্যালয়টি মামুন তার ব্যক্তিগত অফিস হিসাবে ব্যবহার শুরু করে।
তার অনুসারী ছাড়া বিএনপির কোন নেতা কর্মীকে দলীয় অফিসে প্রবেশ করতে দেয় না। ১৮ বছর ধরে আমি যদি অফিসটির ভাড়া হিসাবে ধরতাম তাহলে এ পর্যন্ত ভাড়া বাবদ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা হতো। এখানে দলের কার্যক্রম চলবে তাই বিনামূল্যে অফিসটি ব্যবহার করার জন্য দিয়েছিলাম। কিন্তু দলের সার্বিকভাবে অফিসটি ব্যবহৃত হচ্ছে না পরিণত হয়েছে ব্যক্তিগত চেম্বারে। ওই অফিস ঘরের মালিক আমার বড় ছেলে বাবু ঘরের বিষয়ে কথা বলতে গেলে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন, তার বড়ভাই আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান ও ভাগিনা খন্দকার আহসানুজ্জামান রুমেলসহ সন্ত্রাসীরা মারধর করে আমার ছেলে বাবুকে আটকে রাখে। খবর পেয়ে তাদের কবল থেকে আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে গেলে তারা সকলেই আমার উপর মারমুখী হয়ে উঠে। আমি ও আমার ছেলের জীবন বাঁচাতে ও নিরাপত্তার স্বার্থে আমার লাইসেন্সকৃত পিস্তল উঁচিয়ে আমার ছেলেকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। প্রকৃত এই ঘটনা বিকৃত করে ঘটনার খন্ডাংশের ভিডিও ক্লিপ ও মিথ্যা তথ্য সাংবাদিকদের সরবরাহ করে আমার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সম্মান হানি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে যা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুনের বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতার একাধিক অভিযোগ উঠেছে। তার ভূমি দুস্যুতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে নিজ দলের নেতা কর্মী ও তাদের পরিবারের সম্পদ রক্ষায় তার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আমি নিজেও তার ভূমি দুস্যুতার শিকার হতে যাচ্ছি। শহরের পাঁচরাস্তা মোড়ের নয়াপাড়া এলাকায় আমার প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে মামুনের। এই জমির প্রকৃত মালিক ইয়াকুব আলী ১৪ শতাংশ নিজে রেখে নাকি জমি বিভিন্ন জনকে সাব কবলা লিখে দেন। ইয়াকুবসহ সাব কবলাদাররা আমাকে মেয়াদহীন ও বিক্রি করার অধিকার উল্লেখ করে পাওয়ার অব এটর্নি মুলে লিখে দেন। মৌখিক দান দাবীকারী নাজির হোসেন এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা করলে নিন্ম আদালতে দুবার আমার পক্ষে রায় ঘোষনা করে। পরে প্রতিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করায় মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। সেই জমি প্রতিপক্ষকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে দখলের পায়তারা করছে মামুন।

ওয়ারেছ আলী মামুন শহর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তার আজ্ঞাবহ ফরিদুল কবির অলুকদার শামীমকে জেলা বিএনপির সভাপতি পদে রেখে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। তার স্ত্রী মাসুমা আরমিন মিতুকে শহর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা মহিলা দলের সহ-সভাপতি, ভাগিনা খন্দকার আহসানুজ্জামান রুমেল জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ছোট ভাই শাহ মাসুদ শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদকসহ তার অন্যান্য আত্মীয়স্বজন দলের বিভিন্ন পদে রয়েছেন। দলের চিত্র দেখলে মামুনের পরিবারতন্ত্রের চিত্রটিও ফুটে উঠে।

জামালপুরে সদর উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদ ওয়ারেছ আলী মামুনসহ তার পরিবার ও তার চেলা চামুন্ডারা দখল করেছে। ওয়ারেছ আলী মামুন নিজে ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, তার স্ত্রী মাসুমা আরমিন মিতু ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, তার ভাগিনা খন্দকার আহসানুজ্জামান রুমেল ১টি কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ছোটভাই মুরশেদ একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, তার দখনাবাজির অন্যতম সহযোগী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন মিলন ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সফিউর রহমান সভাপতি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ মামুনের অনুসারীরা সদর উপজেলার ৯৯ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদ দখলে নিয়েছে। শুধুই কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দখল লুটপাট চাঁদাবাজির অভিযোগের শেষ নেই মামুন বাহিনীর বিরুদ্ধে। ৫ আগষ্টের রাত থেকেই ওয়ারেছ আলী মামুনের নির্দেশে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সজীব খান টেলিফোনে হুমকি ধামকি করে ব‍্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা আদায়, ঠিকাদারদের পাওয়া টেন্ডারের কাজ, গরুর খামার লুট, মাছের খামার লুট, সদর উপজেলার ২২টি বালু মহল দখল, বাসস্ট্যান্ড, সিএনজিস্ট্যান্ড দখল, 'ইটভাটা বেদখল, টেন্ডারবাজী, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন সহ দখল লুটপাটের রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। ফলে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।

দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারীদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলের নীতি নির্ধারকদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ, সদস্য মোশাররফ হোসেন, খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান আরমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

(আরআর/এএস/এপ্রিল ০৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test