E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

তারুণ্যের মেধা বিকাশে অনন্য উদ্যোগ 

২০২৫ মে ০৩ ১৭:৫০:৩৩
তারুণ্যের মেধা বিকাশে অনন্য উদ্যোগ 

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : শিক্ষার্থীরা মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে প্রবেশের জন্য আন্দোলন করেছে। আন্দোলনের মুখে তৎকালীন সরকার কোটা সংস্কার করে মেধাবীদের চাকরির সুযোগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে বাধ্য হয়েছে। এটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বড় অর্জন। ফলে মেধাবীরা চাকরিতে প্রবেশের বেশি সুযোগ পাচ্ছেন। মেধাবীরা চাকরিতে প্রবেশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে বিনির্মাণ করতে পারবেন। এখন তরুণ প্রজম্মের মেধার বিকাশ ঘটানোর সময় এসেছে। সে লক্ষ্যেই এবছর গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসন নকলমুক্ত পরিবেশ এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করছে।

মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এ বছর উপজেলার ৪ টি কেন্দ্রে মোট ৩ হাজার ৮শ’৭৯ জন শিক্ষার্থী এসএসসি, দাখিল ও ভকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে এসএসসিতে ৩ হাজার ২শ’ ১জন, দাখিলে ৫শ’১৫ জন ও ভকেশনালে ১৬৩ জন রয়েছে। অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে এসএসসিতে ৫ জন, দাখিলে ৩ জন ও ভকেশনালে ১ জনকে বহিস্কার করা হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আগামী ১৪ মে পরীক্ষা শেষ হবে।

নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা দিতে পেরে উচ্ছসিত শিক্ষার্থী জাহানারা খানম, অন্তরা খানম, সাহারা খানম ও আয়েশা আক্তার বলে, আগের বছরগুলোতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নকলের মহোৎসব চলেছে।বহিরাগতরা পুকুর পার হয়ে, গাছ বেয়ে বা দেওয়াল টপকে হলে ঢুকত। প্রশ্ন বাইরে নিয়ে যেত। তারপর নকল সরবরাহ করত।এ চক্রটি দীর্ঘ বছর ধরে টাকার বিনিময়ে এ কাজ করে আসছিল। এ চক্রের সাথে অসাধু শিক্ষক, অভিভাবক কিশোর গাং, বখাটে শ্রেণির মানুষ জড়িত ছিল। আমাদের অগ্রজরা মেধার মূল্যায়নে রক্ত দিয়েছে। তারা কোটা বিরোধী আন্দোলন করেছে। মেধাবীদের চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি করেছেন। তাই মেধা বিকাশে এ বছর উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও শিক্ষকরা নকল রোধে পরীক্ষার হলে কঠোর অবস্থান নেন। সবার সহযোগিতায় আমরা নকলমুক্ত পরিবেশে শান্তিপুর্ণভাবে পরীক্ষা দিতে পেরেছি। এতে হয়ত পাশের সংখ্যা একটু কমবে।কিন্ত আমাদের মধ্যে থাকা মেধাবীরা ভাল করবে। শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।দেশকে আমরা নতুন করে সাজাতে পারব। কল্যাণকর রাষ্ট্র বানাতে পারব।

অভিভাবক সাজিয়া পারভীন সোমা ও লায়লা বেগম বলেন, নকলমুক্ত পরিবেশে আমাদের সন্তানরা পরীক্ষা দিচ্ছে। এতে তারা মেধা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে।

মুকসুদপুর কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে সংযুক্ত কর্মকর্তা জাকিয়া খাতুন পরীক্ষার হল নকলমুক্ত করতে পরীক্ষার শুরুর সকাল থেকে শেষ পর্যন্ত (দুপুর) আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। তিনি এ কাজে সাফল্য অর্জন করেছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন করছি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পরীক্ষা অনেক ভাল হচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতায় বহিরাগতদের কেন্দ্রে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। বহিরাগতের উৎপাত নেই । শিক্ষার্থীরা নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা দিতে পারছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় হলগুলোকে নকলমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

সরকারি মুকসুদপুর কলেজ কেন্দ্রের হল সুপার মোঃ লুলু হোসেন মুন্সি বলেন, প্রশাসন কঠোর হলে নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। তেমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনিম আক্তার। তার হাত ধরে এ ক্ষেত্রে গুনগত পরিবর্তন আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

মুকসুদপুর উপজেলার কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিমোহন মন্ডল বলেন, নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা হলে মেধার বিকাশ ঘটে। শিক্ষকের সম্মান বাড়ে। দেশে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে মেধাবীরা অবদান রাখতে পারে। এতে দেশ, জাতি উপকৃত হয়। তাই নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহনের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনিম আক্তার বলেন, একটি অভিযোগ ছিল এখানে নকল বেশি হয়। আমরা সম্মিলিতভাবে নকল প্রতিরোধে উদ্যোগ গ্রহন করি। যার যার জায়গা থেকে টেষ্টা করেছি। আমি প্রতিদিন কেন্দ্র পরিদর্শন করছি। যাতে বাইরে থেকে নকল সরবরাহ করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আইন শৃংখলা বাহিনী সহ সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছেন। শিক্ষার্থীদের নকলমুক্ত পরিবেশ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও কিছু শিক্ষার্থী বহিস্কার হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নিয়মিত মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে আইন মান্যকরে যাবতীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।

(টিবি/এসপি/মে ০৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test