E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কর্ণফুলীর হেফজখানায় ‘ছদ্মাবেশে’ ডাকাতি, ৮ মাসেও অধরা আসামিরা

২০২৫ মে ০৭ ১৭:২২:২৮
কর্ণফুলীর হেফজখানায় ‘ছদ্মাবেশে’ ডাকাতি, ৮ মাসেও অধরা আসামিরা

স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা টিম পরিচয়ে একটি হেফজখানা ও এতিমখানায় ডাকাতির ঘটনায় মামলা দায়েরের ৮ মাস পার হলেও পুলিশের তদন্তে অগ্রগতি নেই। ৫ লাখ টাকা, দিরহাম ও রিয়াল লুট হলেও আজও উদ্ধার হয়নি একটি টাকাও। মামলার আসামিরা অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই—যা পুলিশের কার্যকারিতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে চরপাথরঘাটার খোয়াজনগর এলাকায় আলত্বাফিয়া ইয়াছিনিয়া আল এজাজ ইন্টারন্যাশনাল হেফজ ও এতিমখানায় ঘটে ডাকাতির ঘটনা। ঘটনার রাতেই জনতার সহায়তায় চারজনকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। পরদিন প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক মামলা করেন কর্ণফুলী থানায়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ, হামলাকারীরা ‘সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা টিম’ পরিচয়ে মাদ্রাসায় ঢুকে অস্ত্র খোঁজার নামে বিভিন্ন রুম তল্লাশি করে। এক পর্যায়ে লকার ভেঙে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা এবং ওয়ারড্রপ থেকে প্রায় ৬ হাজার দিরহাম ও রিয়াল লুট করে তারা। পালানোর সময় চারজন ধরা পড়লেও বাকিরা টাকা ও ওয়াকিটকি নিয়ে পালিয়ে যায়। মামলার ৯ আসামির মধ্যে একজন ছিলেন কর্মরত সেনাসদস্য, অন্যরা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক পরিচয়ধারী ব্যক্তি ও পরিবহন শ্রমিক নেতা।

এতে সীতাকুণ্ড থানার ভাটিয়ারী বিএমএ সেনানিবাসে কর্মরত সার্জেন্ট মো. সুহেল আনোয়ার বীর-এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৯৫ ধারায় কর্ণফুলী থানায় দায়েরকৃত মামলাটি বর্তমানে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন ছিল। তবে মামলাটি যৌথ এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় তা সেনা আইনের আওতায় বিচারযোগ্য বিবেচিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সেনা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পরবর্তীতে ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে সেনা আইন ১৯৫২ এর ধারা ৫৯(১) অনুযায়ী সার্জেন্ট মো. সুহেল আনোয়ারের বিচার অনুষ্ঠিত হয়। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিনি সামরিক ও অসামরিক সহযোগীদের নিয়ে কর্ণফুলীর খোয়াজনগরে অবস্থিত পীর সাহেব কেবলা দরবারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালকের বাসভবনে প্রবেশ করে জোরপূর্বক নগদ ৩ লাখ টাকা, ৬ হাজার দিরহাম/রিয়াল এবং একটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেন, যা স্পষ্টভাবে দণ্ডবিধির ৩৯৫ ধারার অধীনে একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

বিচারকালে অভিযুক্ত নিজেকে দোষী স্বীকার করলে সেনা আইন ৪৪(২) এর বিধান অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপিত সকল সাক্ষ্য-প্রমাণ আমলে নিয়ে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। এরপর সেনা আইন ৫৯(১)(এ) এবং ৬০ ধারার অধীনে তাকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও পদাবনতির আদেশও দেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, তাকে এই দণ্ড সাজার মেয়াদ অসামরিক কারাগারে ভোগ করতে হবে। এ বিষয়ে ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শাল কনভেনিং অফিসার এবং চট্টগ্রাম বিএমএর কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল খন্দকার মো. শাহিদুল এমরান আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত নিশ্চয়তা প্রদান করেন।

অপরদিকে, বাকি আসামিদের অনেকে জামিনে থাকলেও বাকিরা পলাতক। মূলত যাদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কার্যকর ভূমিকা অনুপস্থিত। আদালতের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে আরো জানা গেছে, গ্রেপ্তার বিদ্যুৎ কান্তি দে কারাগারে রয়েছেন। মো. শফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সাত্তার টিটু হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। সুমন কান্তি দে চার্জশিট হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম আদালত হতে জামিনে রয়েছেন। সৈনিক রুবেল আনোয়ার সেনা হেফাজতে রয়েছেন। সৈনিক জামাল পলাতক।

অন্যদিকে, যেখানে সামরিক আইনের আওতায় একজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে, সেখানে অসামরিক অভিযুক্তদের বিষয়ে পুলিশের তদন্তে অগ্রগতি নেই বললেই চলে।

এটি একদিকে যেমন বিচার প্রক্রিয়ার বৈষম্য তুলে ধরে, তেমনি জনমনে পুলিশের সদিচ্ছা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্নও তৈরি করে। বিশেষ করে মামলা দায়েরের আট মাস পরও লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার না হওয়া এবং অধিকাংশ আসামির পলাতক থাকা পুলিশের ব্যর্থতাকে সামনে এনে দেয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এমনকি বারবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি, যা দায়িত্বজ্ঞান হীনতার দৃষ্টান্ত।

তবে থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ বলছেন, 'তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে মামলার তদন্ত করছে, লুট হওয়া অর্থ উদ্ধারের পাশাপাশি বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।' তবে এতদিনেও দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও সম্ভবত প্রভাবশালীদের চাপের কাছে নতিস্বীকারের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত একটি জঘন্য ডাকাতির ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে এবং সামরিক-অসামরিক অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত সময়ের দাবি। পুলিশের দায়িত্বশীল আচরণ ও স্বচ্ছতা ছাড়া এ মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা ফিরবে না।

(জেজে/এসপি/মে ০৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test