E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আদালতের নির্দেশ অমান্য: পিতা-মাতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ছেলে

২০২৫ মে ১৬ ১৯:১২:২০
আদালতের নির্দেশ অমান্য: পিতা-মাতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ছেলে

বিশেষ প্রতিনিধ : রাজবাড়ীর পাংশায় ক্ষমতা খাটিয়ে পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার পৌর এলাকা ও বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাড়ি এলাকার জমির ভাগ নিয়ে এমন টালবাহানা করা হচ্ছে।

অনুসন্ধান সূত্রে দেখা যায়, ভুক্তভোগী পাংশা পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ নূর-ই-আলম (ইমরোজ) এর বড় ভাই সৈয়দ নূর-ই-সামস (নওরোজ) পরিবারের মতামত ছাড়াই বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাড়ি এলাকাধীন সৈয়দ মুর্তুজ আলীর জ্যেষ্ঠ্ কন্যা সৈয়দা শাহিমা আক্তারকে বিয়ে করার ফলে পাংশা পৌর এলাকার নারায়ণপুরে মাতা সৈয়দা নুরুননাহারের নিজ নামীয় সম্পত্তির উপর স্থাপিত বসতবাড়ী থেকে ৫০ বছর আগে বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাড়ি এলাকার পৈত্রিক বিশাল বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।

প্রথম স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হলে নবাবপুর ইউনিয়নের কুরর্শি গ্রামের এহসানুল হাকিম সাধনের (বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান) সহদর ভগ্নি মারুফা আক্তার এ্যানি কে বিয়ে করেন। এহসানুল হাকিম সাধন সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মোঃ জিল্লুল হাকিমের চাচাতো ভাই সেই কারণে ক্ষমতার দাপটে এহসানুল হাকিম সাধনের ভগ্নিপতি সৈয়দ নুর-ই-সামস (নওরোজ) ও ভাগ্নে সৈয়দ নূর-ই-আকরাম (সেভান) মরহুম সৈয়দ বায়তুল্লাহ ও সৈয়দা নুরুন্নাহারের ওয়ারিশ কৃত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছে সৈয়দ নুর-ই-আলম (ইমরোজ) কে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মরহুম সৈয়দ বায়তুল্লাহ, পিতা মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ মাতা মরহুমা সৈয়দা বিবি হাজেরা খাতুনের নামে পাংশা উপজেলা ও বালিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় রেকর্ডীয় সম্পত্তি আছে। যা পৈতৃক সূত্রে ওয়ারিশ কৃতভাবে পরিবারের সদস্যগণের নামে রেকর্ড ভুক্ত হয়েছে আবার অনেক সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে।

মরহুম সৈয়দ বায়তুল্লাহ ও সৈয়দা নুরুন্নাহারের দুই পুত্র ও দুই কন্যা রয়েছে। জ্যেষ্ঠ্য পুত্র সৈয়দ নুর-ই-সামস (নওরোজ) পরিবার পরিজন নিয়ে পৈত্রিক বাড়ি বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাড়িতে বসবাস করেন। অন্যদিকে কনিষ্ঠ পুত্র সৈয়দ নুর-ই-আলম (ইমরোজ) মাতা সৈয়দা নুরুন্নাহার কে নিয়ে পাংশা পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের নারায়নপুরে বসবাস করেন।

সরজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী জেলার এলাকাধীন থানা ও উপজেলা পাংশা মৌজা নারানপুরের মধ্যে এস,এ-৬০৬ নং খতিয়ানের আর,এস ও এস, এ-৬৫২ নং দাগের ১ আনায় ৭৫ শতাংশ জমির মালিক সৈয়দা বিবি হাজেরা খাতুন। ১৯-৮-১৯৭৭ তারিখে ৬০৯৩ নং দানপত্র দলিল মুলে পুত্রবধূ সৈয়দা নুরুন্নাহার মালিকানা প্রাপ্ত হয়ে ভোগ দখলে থাকা অবস্থায় ১০-৬-২০০৬ তারিখে উক্ত ৭৫ শতাংশ জমির মধ্যে বসবাসরত বাড়ীর এরিয়ায় থাকা ৪২.২৫ শতাংশ জমি কনিষ্ঠ পুত্র সৈয়দ নুর-ই-আলম (ইমরোজ) কে মৌখিকভাবে হেবা ঘোষণা করে দখল বুঝিয়ে দেন। সৈয়দ নুর-ই-আলম (ইমরোজ) জমির দখল বুঝি নেওয়ার পর বাড়ির চারপাশে পাকা ওয়াল তৈরি করে ভিতরে পাকা বাড়ি ফলজ গাছপালা রোপন করে ভোগদখলে থাকা অবস্থায় ১-৯-২০০৬ তারিখে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করার জন্য পাংশা পৌরসভায় আবেদন দাখিল করে। ১৯-৯-২০০৬ তারিখে ভবনের নকশা অনুমোদন হয়।

৩-১০-২০০৬ তারিখে স্মারক নং পা: পৌ:/ প্রকৌ:/ ০৬/১৭২ এর মাধ্যমে ভবনের অনুমতি পত্র পায়। ভবন নির্মাণের পর থেকে ওই ভবনে বসবাস করছে সৈয়দ নুর-ই-আলম (ইমরোজ) পরিবার। পাকা ভবন নির্মাণ করলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ (১৯৮৪ এর ৩৬ নং অধ্যাদেশ) এর অধীনে আয়কর রিটান দাখিল করার জন্য ৪২.২৫ শতাংশ জমির মধ্যে হতে ১৮/১১/২০০৭ তারিখে ৮৫৮৯ নং দলিলে ০৬.৪৫ শতাংশ জমি বড় ভাই সৈয়দ নুর-ই-সামস (নওরোজ) এর প্রথম স্ত্রী সৈয়দা শাহিমা আক্তার কে সাক্ষী করে পরবর্তী সময়ে ৩৫.৮০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দিবে মর্মে মাতা সৈয়দা নুরুন্নাহার দলিল করে দেন। সৈয়দ নুর-ই-আলম (ইমরোজ) ৬.৪৫ শতাংশ ও ৩৫.৮০ শতাংশ মোট ৪২.২৫ শতাংশের উপর বসবাস সহ ভোগদখল থাকা অবস্থায় ৮-৫-২০১০ তারিখে পারিবারিক বন্টন নামা করিয়া পিতা মরহুম সৈয়দ বায়তুল্লাহ এর ওয়ারিশকৃত সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার পরও বড় ভাই সৈয়দ নুর-ই-সামস (নওরোজ) ছোট ভাই সৈয়দ নু-ই- আলম (ইমরোজ) এর বন্টনামা অনুযায়ী পাওয়া সম্পত্তি ২৩২১ নং দলিলের মাধ্যমে ৯ শতাংশ জমি (যার মূল্য ১ কোটি টাকা) বিক্রি করে নিয়েছে।

মৌজা নারানপুর ১৯১/২০৩ এস,এ ৬০৬ নং খতিয়ানের আর,এস ও এস,এ ৬৫২ নং দাগের ৭৫ শতাংশ জমির মধ্যে বাড়ি ৪২.২৫ শতাংশ জমি বর্তমান বি,এস ৪৬৬ নং খতিয়ানে ১৫১৪ নং দাগে ৩৫.৮০ শতাংশ ১১১৭ নং খতিয়ানে ১৫১৪ নং দাগে ৬.৪৫ শতাংশ মোট ৪২.২৫ শতাংশ বি,এস রেকর্ড ভুক্ত হয়েছে। মাতা সৈয়দা নুরুন্নাহারের কনিষ্ঠপুত্র সৈয়দ নুর-ই- আলম (ইমরোজ) কে বসতবাড়ির ৪২.২৫ শতাংশ জমি দিয়েছেন। সে কারণে জ্যেষ্ঠ পুত্র সৈয়দ নুর-ই-সামস (নওরোজ) মাকে দিয়ে বি,এস ৪৬৬ নং খতিয়ানের ১৫১৩, ১৫১৫ দাগ থেকে দলিল নং ২১৪৭ জমি ৪.৫০ শতাংশ দলিল নং ১৮১৫ জমি ৬ শতাংশ দলিল নং ১৮১৬ জমি ৪.৪৫ শতাংশ দলিল নং ১৮১৭ জমি ৪.৪৬ শতাংশ দলিল নং ৩৭৯৪ জমি ৫.৩৬ শতাংশ দলিল নং ৩৭৯৫ জমি ৪.৫৯ সর্ব মোট ২৯.৩৬ শতাংশ জমি (মূল্য ৪ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা) বিক্রি করে নিয়েছে। উক্ত ৪২.২৫ শতাংশের আংশিক জমিতে ১-৭-২০১৯ তারিখে সৈয়দ নুর-ই-আলম (ইমরোজ) দোকান ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে তা সমাপ্ত করেন। ১৫-৪-২০২২ তারিখে বড় ভাই সৈয়দ নুর-ই-সামস (নওরোজ) বয়বৃদ্ধ মাতা সৈয়দা নুরুন্নাহার কে বালিয়াকান্দি দক্ষিণবাড়ী পৈতৃক বাড়িতে নিয়ে যায়।এরপরেই মায়ের কাছ থেকে উক্ত মার্কেট সহ বসতবাড়ির ৩৫.৮০ শতাংশ জমি কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে লিখে নেয়।বিষয়টি জানাজানি হলে বড় ভাইয়ের ছেলে সৈয়দ নুর-ই-আকরাম (সেভান) বিভিন্ন সময় বহিরাগত লোকজন বাড়িতে নিয়ে এসে হুমকি দিতে থাকে।

সৈয়দ নুর-ই-আলম (ইমরোজ) বলেন,মায়ের কাছ থেকে নেওয়া ১৭-৫-২০২২ তারিখে রেজিস্ট্রিকৃত ৩৭৯৩ নং হেবা ঘোষণা পত্র দলিলের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী জজ কোর্টে মুসলিম আইনে হকসাফা (দলিল অগ্রক্রয়ের) মামলা নং ২৭/২৪ চলমান রয়েছে। মামলা চলমান থাকার পরও গত ৫-১২-২০২৪ তারিখের বসত বাড়ির ঘর ফলজ গাছপালা ভাঙচুর কর্তন করে জোরপূর্বক পাতা ওয়াল তৈরি করার চেষ্টা করিলে পাংশা পৌরসভায় ১৭৮৯ নং পত্রের মাধ্যমে নির্মাণ বন্ধ করার আবেদন করিলে প্রশাসক পাংশা পৌরসভার নির্দেশে তা বন্ধ হয়। গত ১৭-৪-২০২৫ তারিখে আবার সৈয়দ নূর-ই-আকরাম (সেভান)সন্ধ্যা ৬.২০ মিনিটের সময় বসত বাড়ির ৪২.২৫ শতাংশ জমি দখল করার জন্য বহিরাগত ৪-৫ জন লোক নিয়ে খুন জখম করে বাড়ি ভাঙচুর করার হুমকি দিলে পাংশা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সৈয়দ নুর-ই-আলম (ইমরোজ)। জিডি নং ৬৬৭।

উক্ত ৪২.২৫ শতাংশ জমিতে ২১-৪-২০২৫ তারিখে মিসপিটিশন নং ২১০/২০২৫ এবং বিজ্ঞ আদালতের স্মারক নং অতি: জে: ম্যা: আ: রা: /৪৬৭ (২) ধারা ফৌ:কা:বি: ১৪৪/১৪৫ প্রদান করেছেন এবং পাংশা মডেল থানা কর্তৃপক্ষ সবাইকে অবহিত করার পরও সৈয়দ নূর-ই-সামস (নওরোজ) ২৪-৪-২০২৫ তারিখে পাংশা পৌরসভা কার্যালয়ে জমি মাপার আবেদন করেন। নোটিশের স্মারক নং ১০৯/২০২৪-২৫ জমি মাপার তারিখ ২৭-৪-২০২৫ সময় ২.০০ টায় সংবলিত নোটিশ পাই। ২৭-৪-২০২৫ তারিখে উক্ত বাড়ির ৪২.২৫ শতাংশ জমিতে বহিরাগত বিভিন্ন লোকজনের মহড়া চলতে থাকে।

এমনকি বালিয়াকান্দি উপজেলার পৈত্রিক ওয়ারিশকৃত পরিবারের সকল সদস্যকে বাদ দিয়ে সৈয়দ নুর-ই-সামস (নওরোজ) তার একার নামে সমস্ত সম্পত্তি বি,এস জরিপে রেকর্ড ভুক্ত করেছেন। আমি সৈয়দ নুর-ই-আলম (ইমরোজ) তার বিরুদ্ধে সংশোধনী মামলা নং ৬০/২০২৩ দাখিল করার ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

(একে/এসপি/মে ১৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test