E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

অর্ধশত বিঘা নদী দখল করে রেখেছে আ.লীগ নেতা ও তার পরিবার, প্রশাসন নীরব দর্শক

২০২৫ মে ১৮ ১৮:২৯:৩৯
অর্ধশত বিঘা নদী দখল করে রেখেছে আ.লীগ নেতা ও তার পরিবার, প্রশাসন নীরব দর্শক

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ভৈরব নদী এখন আর শুধুই একটি জলপ্রবাহ নয়, এটি রীতিমতো একটি দখলদার চক্রের কবলে পড়া সম্পদে পরিণত হয়েছে। উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শমসের এবং তার দুই ভাই শফিকুল শমসের ও তরিকুল শমসের দীর্ঘদিন ধরে অর্ধশত বিঘারও বেশি নদীর জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দখলদারিত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কৃষকদের নদীতে নামতে পর্যন্ত বাধা দেওয়া হচ্ছে। নদীর পাড় ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে পাকা প্রাচীর, যাতে সাধারণ মানুষ নদীমুখীই হতে না পারে। এলাকার মানুষের ভাষায়, এটা কোনো সাধারণ জমি দখল নয়, বরং এটি একটি সংঘবদ্ধ ও রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের প্রকাশ্য তাণ্ডব।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঘোপপাড়া ও সাদিকপুর গ্রামের নদীর দুই পাড়জুড়ে শস্যখেত। কিন্তু তা কোনো কৃষকের নয়, বরং প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের কবজায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের ছায়ায় রাশেদ শমসের ও তার ভাইয়েরা বছরের পর বছর ধরে এই জমিগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। প্রতিবাদ করলেই হুমকি, মামলা, হয়রানি।

স্থানীয় কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, "নদীর দুই পাড় পুরো দখলে। আমরা নদীতে নামতেই পারি না। ব্রিজের পাশে দেয়াল তুলে দিয়েছে, যেন কৃষকরা একফোঁটা পানিও না পায়। এটা কি স্বাধীন দেশে সম্ভব?"

অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দা, জাহাঙ্গীর আলম সর্দার বলেন, "তারা শেখ মুজিবের মুর‌্যাল বানিয়ে, কলেজের নাম ব্যবহার করে নদী ও সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছে। কলেজ সরকারি করার পেছনেও ছিল রাজনৈতিক প্রভাব। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এখন আবার নতুন করে দখল শুরু করেছে শফিকুল শমসের।" এমনকি সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জমিও রেহাই পাচ্ছে না এই চক্রের হাত থেকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, "আমার কেনা জমির নিচে নদীর জায়গা ছিল। সেটি দখল করে তাতে ছাতা স্থাপন করেছে শফিকুল। এখন সে আমার জমিতেও প্রাচীর তুলছে। আমি আদালতে গিয়েছি, ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে, তবু কাজ থামেনি। এটাই কি আইনের শাসন?"

অভিযোগের বিষয়ে রাশেদ শমসেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও শফিকুল শমসের ছাতা নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, "এটা স্থায়ী কিছু না। চাইলে ভেঙে দেবো।" নজরুল ইসলামের জমি দখলের অভিযোগ তিনি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কুমার দাস বলেন, দীর জায়গা দখল করে চাষাবাদ করার কোন সুযোগ নেই। আমরা দ্রুতই লোক পাঠিয়ে তালিকা করব। যদি দখল হয় তা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নিব।

(এসআই/এসপি/মে ১৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test