E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নড়াইলের লোহাগড়ার কুমারডাঙ্গা

আসামিপক্ষের ৪০ বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি 

২০২৫ মে ২১ ১৯:৪০:০২
আসামিপক্ষের ৪০ বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি 

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের কুমারডাঙ্গা গ্রামে খাজা মোল্যা (৪২) হত্যাকাণ্ডে আসামিপক্ষের লোকজনের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে বাদীপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। 

গত এক সপ্তাহ ধরে আসামিপক্ষের প্রায় ৪০টি বাড়িতে দফায় দফায় হামলা হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের কারণে নারী ও শিশুরা পর্যন্ত বাড়িছাড়া।

ভাংচুর ও আগুনে পুড়ে ঘরবাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় এক বৃদ্ধা গরুশুণ্য গোঁয়াল ঘরে মানবেতর বসবাস করছেন তারা। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, শতাধিক গরু-বাঁছুর, হাঁস-মুরগি, ধান-পাটসহ অন্য শস্য লুটপাট এবং বাড়ি ভাঙচুরে কমপক্ষে দুই থেকে তিন কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনায় পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে আরও জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্তরা আইনি প্রতিকার পাওয়ার জন্য ঘটনা উল্লেখ করে থানায় মামলা দিতে গেলেও মামলার এজাহার গ্রহণে নানা তালবাহানা করছে পুলিশ।

ক্ষতিগ্রস্ত আইউব শেখের স্ত্রী ফারজানা ববি জানান, তার মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী সায়রা ইসলাম ব্রেণ টিউমারে আক্রান্ত। মেয়ের চিকিৎসার জন্য ঘরে রাখা নগদ ৫ লাখ টাকা, ২০ ভরি স্বর্ণ, ছোট-বড় ১৩টি গরু লুটপাট করে নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। তারা শুধু লুটপাট করে ক্ষান্ত হয়নি, ঘরে আগুন দিয়ে একশ’ মণ পাট, ৮০ মণ ধানসহ দুটি আমগাছ পুড়িয়ে ফেলেছে। আসবাপত্রসহ বাড়ির মালামাল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। আমার ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে পড়ুয়া ছেলে আপন শেখকে হত্যা করবে বলে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।

পলাশ শেখের স্ত্রী সাবিনা ইসলাম বন্যা জানান, আমার স্বামী কুমারডাঙ্গা গ্রামসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় এবং অন্যায়-অপরাধমূলক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার কারণে তাকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমার বাড়ির ঘরের টিন কেটে ফেলায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। লুটপাট ও ভাংচুর হয়েছে বাড়ির মালামাল। প্রতিপক্ষের ভয়ে ছেলে মেয়ের স্কুল ও কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের এসকেন্দার শেখের সাথে খাজা মোল্যার ব্যক্তিগত শত্রুতা ও পূর্ববিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান।

ইনসান শেখের স্ত্রী বৃদ্ধ মেহেরুন্নেসা কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, খাজা মোল্যা হত্যার পর বাদীপক্ষের লোকজন মধ্যযুগীয় কায়দায় আমার ঘরবাড়ি ও মালামাল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ায় সর্বস্ব হারিয়েছি। আমার বৌমা ও পুতা ছেলেকে দালান ঘরে অবরুদ্ধ করে আগুন ধরিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল প্রতিপক্ষরা। দরজা ভেঙ্গে তাদেরকে দ্রুত সরিয়ে আনায় এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছে তারা। আমার ১২টি মাছের ঘের, ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা এবং কোরবানির গরুসহ বাড়ি পোষা বেশ কয়েকটি গরু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। আমি অসুস্থ মানুষ। বর্তমানে গোয়াল ঘরে বসবাস করছি।

ব্যবসায়ী রওশন শেখের স্ত্রী রওশন আরা বেগম জানান, তাদের বাড়িতে থাকা একশ’ মন ধনেসহ বিভিন্ন ধরনের শস্য ও বাড়ির মালামাল লুটপাট হয়েছে। এছাড়া ইব্রাহীম শেখ, মনিরুল মোল্যা, সাদ্দাম শেখসহ একাধিক বাড়ি থেকে গরু ও অন্যান্য মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষ লোকজন। মারপিট করে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে বৃদ্ধ গোলক ও বাবু বিশ্বাসকে। মঙ্গলবার (২০ মে) রাতেও শহীদ শেখ, শাহীন শেখ ও মিলন মোল্যার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে অভিযোগে জানা গেছে।

নিহত খাজার ভাই মামলার বাদী আলী হায়দার মোল্যা জানান, আমাদের লোকজন আসামিপক্ষের কোনো বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট কিংবা অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত নেই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার উপ-পরিদর্শক মো. আজিজুর তালুকদার জানান, হত্যা মামলাটির তদন্ত চলছে। মামলায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চলছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এখানকার আইনশৃংখলা রক্ষায় পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৪ মে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কুমারডাঙ্গা বাজারে একটি চায়ের দোকানের সামনে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে খুন হন কৃষক খাজা মোল্যা। জমিজমা এবং পূর্ব বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

(আরএম/এসপি/মে ২১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test