E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পিবিআই’র ছায়া তদন্ত প্রতিবেদন

আত্মরক্ষার জন্য ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সজীব 

২০২৫ মে ২৩ ১৮:০৩:৪৬
আত্মরক্ষার জন্য ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সজীব 

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়ায় ঢাকা-ভাঙ্গা-কাশিয়ানী-নড়াইল-বেনাপোল ট্রেন রুটের নড়াইলের লোহাগড়ার সারুলিয়া এলাকায় অজ্ঞাত যুবকের লাশের পরিচয় এবং মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোর 'ছায়া তদন্ত' সম্পন্ন করেছে। এই সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, লোহাগড়ার সারুলিয়া এলাকায় রেল লাইনের পাশে পড়ে থাকা অজ্ঞাত যুবককে কেউ হত্যা করে নাই, আত্মরক্ষার জন্য ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওই যুবক। পিবিআই যশোরের ইন্সপেক্টর মো: মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , গত ১৮ মে সকাল ৯ টার দিকে পিবিআই, যশোর নড়াইল লোহাগড়া থানা পুলিশের মাধ্যমে সংবাদ পান যে, জেলার লোহাগড়া থানার কাশিপুর ইউনিয়নের সারুলিয়া এলাকায় রেল লাইনের পাশে একজন অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেছে।

উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে পিবিআই যশোরের ক্রাইমসিন টিম প্রয়োজনীয় ক্রাইমসিন সরঞ্জামসহ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃত অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় সনাক্তের জন্য অজ্ঞাতনামা লাশের একাধিক ফিজ্ঞারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে। কিন্তু ফিজ্ঞারপ্রিন্ট ম্যাচ না করায় অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় সনাক্তের জন্য ছায়া তদন্ত শুরু করে।

ছায়া তদন্তকালে মৃত দেহের পরিধেয় প্যান্টের পকেট থেকে একটি ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায়, যা পর্যালোচনায় একটি জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। উক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বরে সূত্র ধরে মৃত দেহের পরিচয় সনাক্ত করা হয়।

ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম মোঃ সোহানুর রহমান সজীব। তার বয়স ২০ বছর। তার পিতার নাম মৃত মোঃ নুরুল ইসলাম বাচ্চু এবং মাতার নাম সালমা বেগম। তার বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার ডেফুলিবাড়ি।

ছায়াতদন্তকালে আরও জানা যায়, উক্ত যুবক তার স্ত্রী রুশা খাতুনকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতো। সেখানে যশোর অভয়নগরের জনৈক রেজাউল ইসলাম গাজীর (৪৪) সাথে তাদের পরিচয় ও পরিচয় পরবর্তী সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। উক্ত সম্পর্কের খাতিরে তারা রেজাউল ইসলাম গাজীর বাড়ি যশোর অভয়নগরে মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসতো।

সুসম্পর্কের কারণে গত ৬ মে তারা রেজাউল ইসলাম গাজীর বাড়িতে বেড়াতে আসে। এর দুইদিন পর গত ৮ মে সজীব রেজাউল ইসলাম গাজীর বাসা থেকে তার ছেলে মামুন (২৫) এর একটি এক লক্ষ টাকা মূল্যের মোবাইল ফোনসহ কিছু টাকা পয়সা নিয়ে তার স্ত্রীকে রেখে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় রেজাউল গাজী যশোর অভয়নগর থানায় গত ১২ মে একটি মোবাইল হারানো জিডি দায়ের করে। জিডি নং-৬৬১। জিডি দায়ের করার পর অভিযুক্ত সজীবের সাথে তার স্ত্রী রুশা এবং রেজাউল গাজীর পরিবারের লোকজন কথা হয়। কথাবার্তার একপর্যায়ে অভিযুক্ত সজীব জানায় যে, চুরি করা মোবাইলটা সে ঢাকার বসুন্ধরা মার্কেটে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে ফেলছে এবং মোবাইল বিক্রির টাকা খরচ করেছে।

অভিযুক্ত সজীব আরও বলে যে, মোবাইলটা যার কাছে বিক্রি করছে তার কাছ থেকে সে মোবাইলটা নিয়ে দিবে কিন্তু মামুনরা যেনো থানা পুলিশ না করে।

পরবর্তীতে গত ১৮ মে রেজাউল গাজীর ছেলে মামুন ঢাকায় গিয়ে অভিযুক্ত সজীবকে নিয়ে বসুন্ধরায় মার্কেটে যায় ও মোবাইল উদ্ধারের চেষ্টা করে।

কিন্তু মোবাইলটি এরমধ্যে কয়েকজনের কাছে হাতবদল হয়ে যাওয়ায় তারা মোবাইল উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে বসুন্ধরা মার্কেটে অভিযুক্ত সজীব ও ক্ষতিগ্রস্ত মামুনের মধ্যে তর্ক বিতর্ক হলে সেখানে উৎসুক লোকজন জড়ো হলে তারা বলে যে, ' মোবাইল যে বিক্রি করছে সে ধরা পড়ছে , তার কাছ থেকে মামুন যেনো জরিমানা আদায় করে, তা না হলে থানায় মামলা করে। তখন অভিযুক্ত সজীব বলে যে, সে তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মামুনকে দিয়ে দিবে।

এরপর ওই দিন রাতে অভিযুক্ত সজীব ও ভুক্তভোগী মামুন ঢাকা বিমান বন্দর থেকে জাহানাবাদ ট্রেনে করে যশোরে আসার সময় ট্রেনটি নড়াইলের লোহাগড়া সারুলিয়া রেল ব্রিজ অতিক্রম করার সময় সজীব তার পরিবারের সাথে টাকা পয়সা আনার বিষয়ে কথা বলবে এরকম বলে মামুনের কাছে থাকা মামুনের স্ত্রীর মোবাইলটা নেয়।

এক পর্যায়ে সে ঘটনাস্থলে ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের যাত্রী এনএসআই ফিল্ড অফিসার আব্দুল হাকিমসহ (খুলনায় কর্মরত, বাড়ি সাতক্ষীরা) অন্যান্য যাত্রীরা বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন। তখন পরবর্তীতে কোন পুলিশি ঝামেলা হতে পারে ভেবে ক্ষতিগ্রস্ত মামুন উক্ত এনএসআই সদস্যের নাম ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে।

ছায়া তদন্তকালে উক্ত এনএসআই সদস্যের সাথে কথা বলে ও স্থানীয় তদন্তে এবং মৃত সজীবের শরীরের আঘাতের চিহ্ন পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণে প্রতীয়মান হয় যে, অভিযুক্ত সজীব যশোর অভয়নগরে বর্ণিত রেজাউল ইসলাম গাজীর বাড়িতে আসার পর তার নামে মামলা মোকদ্দমা হতে পারে বা তাকে থানা পুলিশে সোপর্দ করা হতে পারে- এরকম ভয়ে ট্রেন থেকে ঝাপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে ঘটনাস্থলে পড়ে সে মৃত্যুবরণ করে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

পিবিআই যশোরের ইন্সপেক্টর মো: মাহাবুব আলম জানান, 'ছায়া তদন্ত শেষ হয়েছে এবং ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে সজীবের মৃত্যুর বিষয়ে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

(আরএম/এসপি/মে ২৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test