E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

অভয়নগরে বাতাসে পেট্রোল পোড়া গন্ধ, ১৮ বাড়িতে লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ

২০২৫ মে ২৭ ০০:৩৭:০৩
অভয়নগরে বাতাসে পেট্রোল পোড়া গন্ধ, ১৮ বাড়িতে লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ

রঘুনাথ খাঁ, অভয়নগর থেকে ফিরে : যশোর জেলার অভয়নগরের হিন্দু অধ্যুষিত ৯৬ গ্রাম। এরই অংশ সুন্দলী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ডহর মশিয়াহাটির গ্রামের বাড়েদাপাড়ায় সনাতন ধর্মালম্বী মতুয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। এ পাড়ায় বাস করেন চার ঘর বৈষ্ণব। মতুয়া সম্প্রদায়ের গুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের  তিন দিনব্যাপি বাৎসরিক মহোৎসবকে ঘিরে ২১ মে বুধবার সন্ধায় মহিতোষ বিশ্বাসের বাড়িতে শুরু হয় অধিবাস।

পরদিন সকাল থেকে আটটি দলের সমন্বয়ে শুরু হয় নাম সংকীর্তন। ২৩ মে দ্বিপ্রহারিক নাম সংকীর্তনের পর মহোৎসব শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিধি বাম। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে পরিকল্পিত হামলায় শেষ হয়ে যায় মহোৎসব। কৃষকদল নেতা তরিকুল সরদারের মৃত্যুকে ঘিরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পরিবারের সদস্যদের মারপিট করে এলাকাছাড়া করার পর ১৮টি বাড়িতে নির্বাচারে লুটপাট ও ভাংচুর চালানোর পর পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাদি যায়নি গোয়ালঘরও। বর্তমানে ওইসব বাড়ির পুরুষ মানুষ ও শিশুরা বাড়ি ছাড়া। বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন থাকা ওইসব বাড়িতে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিনযাপন করছেন এক বস্ত্রে।

সরেজমিনে রবিবার ও সোমবার অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়নের ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের বাড়েদাপাড়ায় যেয়ে দেখা গেছে, কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলাম সরদার যে বাড়িতে খুন হন সেই পিল্টু বিশ্বাসের বাড়ি তালা মারা। ওই বাড়ির সামনের বাড়ি ডাঃ তপন বিশ্বাসের বাড়ি অক্ষত রয়েছে। পরিতোষ বিশ্বাস, সুকৃতি বিশ্বাস, মনিকান্ত বিশ্বাস,, বারিন বিশ্বাস, শঙ্কর বিশ্বাস, কামনা বিশ্বাস, বিকাশ বিশ্বাস, প্রতাপ বিশ্বাস, বাসুদেব বিশ্বাস, প্রণব বিশ্বাস, অজিত বিশ্বাস, পবন বিশ্বাস, বিশ্বানাথ বিশ্বাস, শিমুল বিশ্বাস, সমর বিশ্বাস ও মহিতোষ বিশ্বাসের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট শেষে পেট্রোলের আগুণ দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার ক্ষত চিহ্ন দগদগ করছে। টিভি, ফ্রিজ বাড়ির আসবাবপত্রসহ পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র ঘরের মধ্যে , বারান্দায় ও উঠানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ওইসব ঘর থেকে পেট্রোলের পোড়া গন্ধ ছড়াচ্ছে। রয়েছে পুলিশ মোতায়েন। বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। সহিংসতার বিভষ্যতা দেখে অনেকেই হয়েছেন বাকরুদ্ধ। এটা যেন ২০১২ সালের ৩১ মার্চ ও পহেলা এপ্রিলের সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ফতেপুর -চাকদাহ ট্রজেডিকে হার মানিয়েছে। হামলাকারিরা বাড়েদা পাড়ায় হামলা শেষে সুন্দলী বাজারের চৌরাস্তা এলাকায় মিষ্টির দোকানে, সাগর বিশ্বাসের মুদি দোকান, প্রশান্ত বিশ্বাসের বিকাশ এজেন্ট দোকান, হরিচাঁদের রীতা হোটেলে, সান্ত্বনা সরকারের হাড়ি পাতিলের দোকান, ডাঃ প্রশান্তক বিশ্বাস ও ডাঃ আইনস্টাইন এর চেম্বার, ডিউটান এর মুদি দোকান, পল্লব বিশ্বাসের ডিশ ও ওয়াইফাই এর দোকান, নিত্যানন্দ সরকারের মুদি দোকান, বিদ্যুৎ বিশ্বাস এর ঔষধের দোকান দিশা ট্রেডার্সে ভাংচুর করে বারান্দায় আগুন, হিমাংশু বিশ্বাসের মোটর মেরামতের দোকান, ছিদাম ওরফে প্রদীপ বিশ্বাসের ভ‚ষি মালের দোকান ভাংচুর ও লুটপাট শেষে কয়েকটিতে আগুণ ধরিয়ে দেওয়া হয়।

সুন্দলী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য পবিত্র বিশ্বাস ও ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য শিশির সরকার বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন হিন্দু অধ্যুষিত এ এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার ও দেশী রাজাকাররাও এখানে ঢুকতে সাহস পায়নি। গত বছরের ৫ আগষ্টের পরও একটি চক্র এখানে হামলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তাই নওয়াপাঙা পৌর কৃষকদলের সভাপতি তরিকুল ইসলামকে পরিকল্পিত খুন করার পর বাড়েদা পাড়ার ১৮টি মতুয়া সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। শুধু মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৮টি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে তারা ক্ষান্ত হয়নি। সুন্দলী বাজারের চৌরাস্তার পাশে কমপক্ষে ১৫টি দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। পেট্রোল ঢেলে আগুণ দেওয়া হয়েছে চারটি দোকানে।

সুন্দলী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, বাড়েদাপাড়ায় তরিকুল খুন হওয়ার পর ধোপদী মোড় থেকে ডুমুরতলা হয়ে ডহরমশিরাহাটিতে একটি মাইক্রো সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে বাদড়েপাড়ায় যায়। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি মটর সাইকেলে স্ন্দুলী বাজার হয়ে বাড়েদাপাড়ায় যায় সন্ত্রাসীরা। রাত ৯টা ২৭ মিনিটে তরিকুলের লাশ নিয়ে সুন্দলী বাজার অতিক্রম করার পরপরই উপজেলা বিএনপির সদস্য হরিশপুরের পরিমল মণ্ডল, শচীন সরদার ও আড়পাড়ার অশোক ধর চিৎকার করতে করতে হামলাকারি আসছে বলে ব্যবসায়িদের দোকান বন্ধ করতে বলে। এতে ভীত হয়ে অনেকেই দোকান বন্ধ করে চলে যায়। এর ১০ মিনিটের মধ্যেই দুটি প্রাইভেট কার ও কয়েকটি মটর সাইকেলে পিস্তল, সট গান ও বন্দুক নিয়ে সন্ত্রাসীরা বাজারের ১৫টির মত দোকানে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় অস্ত্রধারীরা বাড়েদাপাড়ার দিকে যাওয়ার রাস্তা বাদে তিনটি রাস্তার মুখে পিস্তল ও বন্দুক তাক করে ত্রাস সৃষ্টি করে।

বাড়েদাপাড়ার হরিগুরুচাঁদ মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ বিশ্বাস জানান,তাদের পাড়ায় বিল বোকড় বিলে ডহর মশিয়াহাটি, হাটগাছা, বাজে কুলটিয়া, ভাটবিনা, সড়াডাঙা, সুজাতপুর ও ধোপাদী গ্রামের ৯৯ ভাগ হিদু সম্প্রদায়ের মানুষের ২৪০ বিঘা জমি রয়েছে। ওই জমি লীজ নিয়ে কেশবপুরের পাজিয়া এলাকার ফেরদৌস বাবু ওরফে চিকন বাবু ২০১৩ সাল থেকে ইজারা নিয়ে ঘের করতেন। তিনি ঠিকমত ইজারার টাকা না দেওয়ায় দুই গত মার্চে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাকে আর ইজারার মেয়াদ না বাড়িয়ে অন্য কোন ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বাড়েদাপাড়ার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন। এ নিয়ে কয়েকদিন আগে মাইকিং করা হয়।এক সপ্তাহ আগে বাড়েদাপাড়ার বটতলায় গ্রামবাসিদের সভা আহবান করা হলেও প্রবল বৃষ্টির কারণে সভা হয়নি। এরপর থেকে নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল সরদার ও যশোরের এক সাবেক বিএনপি মন্ত্রীর আত্মীয় ফিরোজ খান ওই ২৪০ বিঘা জমি লীজ নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামেন। তবে ওই পাড়ার ১৮টি বাড়ি থেকে এক কোটি টাকারও বেশি সোনা, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বােেড়দা পাড়ার কয়েকজন প্রবীন জানান, বৃহষ্পতিবার দুপুর থেকে ফিরোজ খানের লোকজন বাড়েদাপাড়া থেকে কয়েকজন জমির মালিকের মাথায় পিস্তল ধরে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে জমির লীজ ডিডে সাক্ষর করিয়ে নেয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে কৃষকদল নেতা তরিকুল সরদারকে মটর সাইকেলে নিয়ে বাড়েদাপাড়ার পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে আসে সুমন সরদার। তরিকুলের পিল্টুর বাড়িতে আসার খবর পেয়ে ফিরোজ খাঁনের পক্ষে চুক্তিপত্রে সাক্ষর করানোর কাজে নিয়োজিত লোকজন পিল্টুর বাড়িতে চলে যায়।

সুমন সরদার জানান, পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে এসে তরিকুল ইসলাম তার কাছে থাকা একটি চুক্তিপত্রে নিজেই কয়েকটিতে একই হাতে পাঁচজন জমির মালিকের সাক্ষর করেন। তারপর দেড় বিঘা জমির মালিক পিল্টুকে সাক্ষর করিয়ে নিয়ে অন্য কয়েকজন মালিককে সাক্ষর করিয়ে আনার কথা বলেন। এরপরই পিল্টু বিশ্বাসের মেঝ মেয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া চুমকির হাতে মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেন তরিকুল। প্যাকেট থেকে বের করে একটি মিষ্টি চুমকি তরিকুলের মুখে গুজে দিতেই পিছন দিক থেকে তরিকুল ইসলামকে চার থেকে পাঁচজন ধরে ফেলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পিল্টুর ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে গুলি করা হয়। এ সময় তিনি (সুমন) ভয়ে পাশের বাড়ির খাটের তলায় আত্মগোপন করে ফোন করতে চেষ্টা করেন। সেখান থেকে বের হয়ে তিনি তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন। রাস্তার দিকে আসতেই দেখেন হত্যাকারিরা অস্ত্র উচিয়ে বাড়েদাপাড়ার দক্ষিণ দিকে যাচ্ছে।

বাড়েদাপাড়ার মহিতোষ বিশ্বাসের স্ত্রী স্মৃতি রানী বিশ্বাস জানান,তাদের বাড়িতেই হরিচাঁদ ঠাকুরের বাৎসরিক উৎসব উপলক্ষে ৮টি দল কীর্তন পরিবেশন করছিল বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায়। বাজছিল মাইক ও ডাং।এ সময় চলছিল ৮০০ লোকের প্রসাদ রান্নার কাজ। এমনই এক সময়ে দুটি মটর সাইকেল ৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে ঢুকে মালিককে খুঁজতে থাকে। তিনি ওই বাড়ির গৃহীনি বলামাত্র তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়“ তরিকুল ভাইকে খুন করে আনন্দ করছিস” বলে তার দুই হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে বাম পায়ের নীচে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। ছেলে কলেজ ছাত্র মনিমোহন তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। রান্নার ডেক থেকে লোহার বড় খুনতি নিয়ে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি পিটাতে শুরু করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্তের মধ্যে বাড়ি লোকজন শূন্য হয়ে যায়। মানুষজন দিক হারিয়ে ছুঁটতে থাকে। এ সময় পাড়ার সুজিত বিশ্বাসের ছেলে খুলনা থেকে নাসিং প্রশিক্ষণ শেষ করা সাগর বিশ্বাস তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাকে পেটানো শুরু করলে তার জীবন রক্ষায় জাপটে ধরে তাকে বাাঁচাতে চাইলে তাকেও পেটে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। অস্ত্রের মুখে সাগরকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হামলাকারিরা। ভয়ে তিনি পার্শ্ববর্তী বিলের পাশে আত্মগোপন করেন। পরে সাগর বিশ্বাসকে নির্যাতন করে পুলিশে দেয় হামলাকারিরা। সাগরকে সোমবার তরিকুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানোর তীব্র নিন্দা জানান তিনি।

গোপাল বিশ্বাসের স্ত্রী বৃদ্ধা তুলসী দাস বলেন, বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়িতে বসে ছিলেন একাকী। এ সময় কয়েকজন সন্ত্রাসী তাকে ধরে জোরপূর্বক রাস্তায় নিয়ে আসেন। তিনি আবারো বাড়িতে গেলে তাকে মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে ছেলে বিষ্ণুপদ বিশ্বাস ও প্রদীপ বিশ্বাসের বাড়িতে লুটপাট ও ভাংচুর শেষে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে দীলিপ বিশ্বাসসহ কয়েকজনের বাড়িতে লুটপাট ও ভাংচুর শেষে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার কথা বলেন ৯১ বছরের বৃদ্ধ পূর্ণচাঁদ বিশ্বাস।

অজিত বিশ্বাসের সদ্য এইচএসসি পাশ করা ছেলে ফালগুন বিশ্বাস বলেন, তাদের বাড়ি লুটপাটের পর আগুন দেওয়ায় আসবাবপত্রের সাথে তারসহ দাদা আকাশ বিশ্বাসের সকল বই ও শিক্ষা সনদ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন অন্যের প্যান্ট পরে লজ্জা নিবারন করছেন।

প্রতাপ বিশ্বাসের মেয়ে সুন্দলী এসটি স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী জ্যোতি বিশ্বাস বলেন, আগুনে বাড়ির সবকিছু শেষ। বাদ যায়নি গোয়ালঘরও । আগুনের লেলিহান শিখায় তার বাড়ির সব কিছু শেখ হয়ে গেছে। পুড়েছে তার বইপত্র ও শিক্ষা সনদ। এ অবস্থা শুধু তারই একার নয়। পাড়ার প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর বই ও শিক্ষা সনদ পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার ব্রিগেড আগুন নেভাতে গেলে তাদেরকে কাজ করতে দেয়নি সন্ত্রাসীরা। এমনকি পুলিশও নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের সামনেই হয়েছে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। রবিবার থেকে রাস্তার লাইন দিলেও বাড়ি বাড়ি মিটারে বৈদ্যুতিক সংযোগ না দেওয়ায় ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আগুনের লেলিহান শিখায় কলাগাছ, আমগাছ, বেলগাছসহ বিভিন্ন গাছ ঝলসে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন জ্যোতি।

শংকর বিশ্বাস জানান, আগুনে তার গোয়ালঘরে থাকা একটি গরুর মুখ মপুড়ে যায়। দুই পায়ে কোপ দেওয়া হয়। অনেকের বাড়ি থেকে গরু নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা ব্যর্থ হয়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যশোর জেলা শাখার সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন বলেন, এটা একটি পরিকল্পিত ঘটনা। বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের বিতাড়িত করতে বাড়েদাপাড়ায় পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তিনি কৃষকদল নেতা তরিকুল সরদারের হত্যাকারিদের গ্রেপ্তারের পাশপাশি মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৮টি পরিবারের উপর নির্যাতন ও নিপীড়নকারিদের বিচার দাবি করেন।

স্ন্দুলী ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, অপারেশন করার পর বয়সের ভারে তিনি অসুস্থ। ঘটনার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি ন্যয় বিচার দাবি করেন।

অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফরাজী বলেন, খবর পেয়ে তিনি দেরীতে হলেও ঘটনান্থলে যাওয়ার সময় পুলিশের মুখোমুখি হন। পুলিশ নিজে অসহায় বোধ করায় ঘটনার ব্যপ্তি ঘটেছে। এটাকে পরিকল্পিত ঘটনা উল্লেখ করে ন্যয় বিচার দাবি করেন তিনি। তবে পুলিশ তরিকুল হত্যা ও মতুয়া সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাপারে কতদূর এগিয়ে যেতে পারবে তা নিয়ে তিনি সন্দীহান।

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলীম জানান, জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার রওনক জাহানসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পিছু ছয় বান টিন ও ছয় হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। তরিকুলের হত্যার ঘটনায় তার ভাই শ্রমিকদলের নওয়াপাড়া শিল্পশাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম টুলু বাদি হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ২৫ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে সোমবার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় সাগর বাড়েদা পাড়ার সাগর বিশ্বাস ও জনৈক ফিরোজ খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া বাড়েদাপাড়ায় মারপিট, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সুশান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী কল্পনা রানী বিশ্বাস বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোমবার থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে এ মামলায় কোন গ্রেপ্তার নেই। এলাকায় শান্তি রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

(আরকে/এএস/মে ২৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test