E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রাজবাড়ীতে মব’ সৃষ্টি করে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ

২০২৫ মে ৩১ ১৫:৫২:৩৮
রাজবাড়ীতে মব’ সৃষ্টি করে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি আড়কান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক পলাশ কুমার দে। মব থেকে বাঁচতে তিনি পদত্যাগ করেছেন উল্লেখ করে ৩০ মে, বালিয়াকান্দি থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। 

বুধবার (২৮ মে) দুপুরে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার মব সৃষ্টির উস্কানী দাতার নাম উল্লেখ করে বালিয়াকান্দি থানায় এ অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় উপজেলার শিক্ষকদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক পলাশ কুমার দে উল্লেখ করেন, বিদ্যালয়ের তিনজন সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসেন, আব্দুল কাদের ভুইয়া ও সঞ্জয় বিশ্বাস বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের ক্লাস ফাকি দেয়ার কারনে তাদের নিষেধ করায় তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।বিভিন্ন ভাবে বিবাদীগণ আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার (২৮ মে) আনুমানিক ৩ টার সময় বিবাদীগণ বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থী ও কতিপয় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে মব সৃষ্টি করিয়া আমার বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রবেশ করে। এরপর তারা আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক আমাকে পদত্যাগ করায়।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক পলাশ কুমার দে বলেন, গত মঙ্গলবার (২৭ মে) মুনছুর আলী কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক ও আমার পরিচিত বন্ধু আওলাদ হোসেন তার ব্যাংক ঋনের জামিনদার হিসেবে আমার স্বাক্ষর নেয়ার জন্য বিদ্যালয়ে আসে। স্কুলে লেখাপড়া বিষয়ে গল্পের এক পর্যায়ে আওলাদ হোসেন বিজ্ঞান ক্লাসে প্রবেশের জন্য অনুরোধ জানান। এক পর্যায়ে সরল মনে আমি সহকারী প্রধান শিক্ষক তাপস দাসকে সাথে নিয়ে আওলাদ হোসেনকে শ্রেণি কক্ষে নিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর আমি সেখান থেকে চলে আসি। পরে জানতে পারি আওলাদ হোসেন একজন শিক্ষার্থীকে science বানান না পারার কারনে ধমক ও লজ্জা দেয়। পরে কিছু শিক্ষার্থী এসে আমার কাছে বললে আমি পরদিন অর্থ্যাৎ ২৮ তারিখে আওলাদ হোসনকে আমার বিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে দু:খপ্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করি। এসময় বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বহিরাগত শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের দায়ে আমি এবং আওলাদ হোসেন ক্ষমা প্রার্থনা করি। কিন্তু বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসেন, আব্দুল কাদের ভুইয়া ও সঞ্জয় বিশ্বাস শিক্ষার্থীদের ইন্দন দিয়ে মব সৃষ্টির মাধ্যমে বিদ্যালয়ে ভাংচুর শুরু করে এবং আমার ও আওলাদ হোসেনের জীবনশংকার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে পদত্যাগে বাধ্য করে। পদত্যাগের সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিত ছিলেন, তিনি সে সময়ের পরিস্থিতি দেখেছেন। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।

অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক পলাশ কুমার দে কি কারণে আমাকে অভিযুক্ত করছে আমি জানি না।তার সাথে আমার কোন ঝামেলা নাই।তবে তার অবর্তমানে আমাকে অনেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে বলছে, এতেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অভিযুক্ত করতে পারে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মানবেন্দ্র মজুমদার
বলেন, বহিরাগত শিক্ষক ক্লাস নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে অসভনীয় আচরণ করেছে এমন অভিযোগ পেয়ে বুধবারে বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল প্রধান শিক্ষক পলাশ কুমার দে ও বহিরাগত শিক্ষক আওলাদ হোসনকে ক্ষমা চাইতে হবে। তারা দুইজন দুঃখ প্রকাশ করলেও পরে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবী শুরু করে।পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে আমি

সহকারী কমিশনার (ভূমি) এহসানুল হক শিপন ও থানা পুলিশ কে আসতে বলি।তারা এসেও পরিস্থিতি শান্ত করতে না পারলে প্রধান শিক্ষক সাদা কাগজে পদত্যাগ পত্র লিখে। পরে প্রধান শিক্ষক ও বহিরাগত শিক্ষক কে নিয়ে আমরা চলে আসি।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এহসানুল হক শিপন বলেন, শিক্ষার্থীরা যখন প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের একদফা বাদে করে স্লোগান দিতে শুরু করে। আমি তাদের ডেকে পদত্যাগের কিছু নিয়মনীতির কথা বলি।তারা আমার কথা না শুনে আমাকে বলে শেখ হাসিনাও পদত্যাগের জন্য ৫ মিনিটের বেশি সময় পায়নি। তাহলে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের ক্ষেত্রে কিসের এতো নিয়মনীতি!

(একে/এএস/মে ৩১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test