E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ঈশ্বরদী ইপিজেডে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি, আরও ১ নারী শ্রমিকের মৃত্যু

২০২৫ জুন ০৪ ০০:২০:৫৯
ঈশ্বরদী ইপিজেডে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি, আরও ১ নারী শ্রমিকের মৃত্যু

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদী রপ্তানি  প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি ও নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিতপত্রে সোমবার বিকেলে পাবনার সিভিল সার্জনকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত কমিটিকে সংশ্লিষ্ট ডায়রিয়া এলাকায় গমন, পরিদর্শন ও তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ছয় সদস্যের কমিটিতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক এ এইচ এম মোস্তফা কামালকে টিম লিডার করা হয়েছে। অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন-টেকনিক্যাল অফিসার শরিফ উদ্দিন হাসনাত, চাঁদপুর উত্তর মতলব ষাটনল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ফাহমিদা ফাইজা, খাগড়াছড়ি চেঙ্গির সহকারী সার্জন রাজেশ দেব, আইইডিসিআরের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সোহেল রানা এবং ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট সজিবুল ইসলাম। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আলী এহসান এবং ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক শহীদুল ইসলাম বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানান, সোমবার বিকেল থেকেই তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। কমিটি প্রথমে ঈশ্বরদী ইপিজেড এলাকা পরিদর্শন করেন।

২৯ মে থেকে শুরু হওয়া ডায়ারিয়া পরিস্থিতি ছয়দিনেও উন্নতি হয়নি। ঈশ্বরদী ইপিজেডে ডায়রিয়া মহামারি রূপ ধারণ করেছে। আক্রান্ত হয়েছে সহস্রাধিক শ্রমিক। এরইমধ্যে মঙ্গলবার (৩ মে) সকাল নয়টায় নাকানো সুইং অপারেটর পদে কোম্পানীতে কর্মরত সুমিতা খাতুন (২৩) মারা গেছে। তার বড়ি পৌরসভার পিয়ারাখালি এলাকায়। সোমবার রাত ১টায় সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের কণা খাতুন (২৫) নামে এক শ্রমিক মারা যায়। কণা ইপিজেডের আইএইচএম কোম্পানির কোয়ালিটি কাটিং সেকশনের কর্মী ছিলেন।

মঙ্গলবার (৩ মে) ঈশ্বরদী হাসপাতালে ২৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। আর ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে ৫২ জন চিকিৎসা গ্রহন করেছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ঈশ্বরদী হাসপাতালে মোট ভর্তির সংখ্যা ৩১৬ জন। এছাড়া ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে গত ২৯ মে থেকে ৭৮২ জন ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা গ্রহন করে।

ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লালপুর ও আটঘরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঈশ্বরদী ইপিজেডের ডায়রিয়া আক্রান্ত কর্মীরা ভর্তি হয়েছে। এসব হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি রোগী ভর্তি করা হয়। গুরুতর আক্রান্ত রোগীরা পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আবার অনেকেই প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়িতেই চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে তারা হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।

এদিকে ইপিজেডের বিপুল সংখ্যক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় ঈশ্বরদী, লালপুর ও আটঘোড়িয়ায় স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে কিছু ফার্মেসি বেশি দামে স্যালাইন ও ডায়াপার বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম কর্মী নাকানোর সুমিতা খাতুন মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখ জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। মঙ্গলবার মেডিকেল সেন্টারে যে ৫২ জন চিকিৎসা নিয়েছে, এরমধ্যে পুরাতন রোগীও আছে। সাপ্লাই পানি পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

প্রসংগত: বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ইপিজেড এলাকায় দুপুরের খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, বমি ও মাথা ব্যথায় শ্রমিকরা অসুস্থ হতে শুরু করেন। তাৎক্ষণিক কয়েকজন শ্রমিক ছুটি নিয়ে চলে যান। পরে মধ্যরাত থেকে শুক্রবার, শনিবার, রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার শত শত শ্রমিক পেটের সমস্যা ও ডায়রিয়া জনিত রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিতে ঈশ্বরদী, লালপুর ও আটঘড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি এবং ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহন করে।

ইপিজেডের পানি পান করে রেনেসাঁ, নাকানো, এ্যাবা ও রহিম আফরোজ, আইএইচএম, স্টিল হেয়ার, অস্কার বাংলাসহ কয়েকটি কোম্পানির প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিক অসুস্থতার শিকার হয়েছেন। শ্রমিকরা বলছেন, ইপিজেডে সরবরাহকৃত পানি পান করে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

(এসকেকে/এএস/জুন ০৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test