E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কবরের পাশে শিশুর কান্না, স্তব্ধ স্ত্রী

চৌধুরী বংশের রক্তাক্ত অধ্যায়ে যুক্ত হলো আরও দুই লাশ

২০২৫ জুন ১১ ২৩:২১:০৮
চৌধুরী বংশের রক্তাক্ত অধ্যায়ে যুক্ত হলো আরও দুই লাশ

সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : ঘাতকদের হাতে নিহত স্বামী মুরসালিনের কবরের পাশে দেড় বছরের শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে নিথর বসে রয়েছেন সোনিয়া বেগম। চোখে অশ্রু, মুখে কোনো শব্দ নেই, কেবল নিথর দৃষ্টি। পাশেই মুরসালিনের চাচাতো ভাই আজিজুলের কবর। আজিজুলের বড় ভাই তাইজুল চৌধুরী তার ভাইয়ের কবরের পাশে আজিজুলের দুই ছোট শিশু নিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। বাড়ীর ওঠানে নিহত মুরসালিনের দুই বোনের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে পরিবেশ।

চৌধুরী বংশের রক্তাক্ত অধ্যায়ে যুক্ত হলো আরও দুই লাশ

বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার সিংগাতি গ্রামে চৌধুরী বংশের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘ ৫০ বছরের পুরানো। প্রথমে মধুমতি নদীর চরের জমিজমা নিয়ে শুরু হয় এই বিরোধ। এরপর থেকে ওই বিরোধের রুপ নেয় আধিপত্যের দ্বন্দ্বে। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৭ জন। এর মধ্যে শনিবার (৭ জুন ঈদুল আযহার দিন) কোরবানির মাংস বিতরণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে বিএনপির দুই গ্রুপ চৌধুরী বংশের এরশাদ চৌধুরী ও মাসুম চৌধুরীর লোকজন। এসময় নিহত হন এরশাদ চৌধুরীর ছেলে মুরসালিন চৌধুরী (৩০) ও তার ভাইপো আজিজুল চৌধুরী (৪০)। আহত হন উভায় পক্ষের অন্তত ৩০ জন। যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংকা জনক।

নিহত মুরসালিনের বোন রহিমা বেগম বলেন, আমার ভাই মুরসালিনকে বাঁচাতে আমি থানার ওসিসহ মাসুম চৌধুরীর লোকজনের পা জড়িয়ে ধরেছি, তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। ওরা আমার ভাইকে জবাই করে হত্যা করে। আমার ভাইয়ের ৮ বছর বয়েসী একটি ছেলে ও দেড় মাসের একটা শিশু বাচ্চা রয়েছে, ওদের এখন কি হবে। আমি এর বিচার চাই, আমি ওদের ফাঁসি চাই।

নিহত আজিজুল চৌধুরীর বোন লিনচিনা বেগম বলেন, আমার ভাইয়ের ছোট ছোট ৪টি ছেলে সন্তান রয়েছে। ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। ওরা কি ভাবে বাঁচবে। আমি এর বিচার চাই, আমি আমার ভাইয়ের হত্যকারিদের ফাঁসি চাই।

এদিকে, সরজমিনে সিংগাতি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মোল্লাহাট উপজেলার মধুমতি নদীর পাশে অবস্থিত এক সময়ের প্রাণবন্ত সিংগাতি গ্রাম এখন আতঙ্কের জনপদে পরিনত হয়েছে। গ্রামের চৌধুরী বংশের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা। সিংগাতি গ্রামের বাসিন্দাদের এখন একটাই দাবি, এই দ্বন্দ্বের স্থায়ী সমাধান।

সিংগাতি গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা লিজা বেগম বলেন, আমাদের গ্রামে চৌধুরী বংশের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘ ৫০ বছরের পুরানো। এই দ্বন্দ্বের কারনে এখন পর্যন্ত ৭ জন নিহত হয়েছেন। এরশাদ চৌধুরী ও মাসুম চৌধুরী সম্পর্কে আপন চাচা-ভাইপো, সবাই এক বংসের লোক। এই দ্বন্দ্বের অবসান কবে হবে, এই দ্বন্দ্বের অবসান কি হবে না?

একই গ্রামের জিতু হাসান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসচ্ছি এই বিরোধ। একের পর এক লাশ পরছে তারপরও এই বিরোধের শেষ হচ্ছে না। কোরবানির দিনও এই বিরোধের জেরে দুইজন মানুষ মারা গেছে। দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে উভায় পক্ষের ভাঙ্গা বসত বাড়ী গুলো। ঘটনার পর পুরুষ শূণ্য হয়ে পরেছে পুরো চৌধুরী পাড়া। আর কত এর সমাধান কি কখনই হবে না।

অপরদিকে, মাসুম চৌধুরীর স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম বলেন, কোরবানির দিন মাংস বিতারন করতে গেলে ওরা (এরশাদ চৌধুরীর লোকজন) প্রধমে আমাদের লোকের উপর হামলা চালায়। এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত হত্যাকা-, আমাদের পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের পরিবারের কেউ জড়িত না।

মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যেই অভিযান চালিয়ে শাহবুদ্দিন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি মাসুম চৌধুরির লোক। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে দুটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। যার একটির বাদী এরশাদ চৌধুরি ও অপরটির বাদি তার ছেলে দিন মোহাম্মদ চৌধুরী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিংগাতি গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

(এস/এসপি/জুন ১১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test