E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রাজবাড়ীতে জমি দখল নিতে দোকানে হামলা-ভাঙচুর, স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ গ্রেপ্তার ২

২০২৫ জুন ১৩ ১৭:২০:৪৬
রাজবাড়ীতে জমি দখল নিতে দোকানে হামলা-ভাঙচুর, স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ গ্রেপ্তার ২

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে জমি দখল নিতে বহিরাগতদের নিয়ে দোকানে হামলা, ভাঙচুর, মারধর, চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক যৌথবাহিনীর অভিযানে বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী (দোপপাড়া) গ্রামের মৃত মজিদ এলাহী (মটর) ছেলে ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আকিদুল ইসলাম (৪২) ও বালিয়াকান্দি মিয়াপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমান মিয়ার ছেলে তারেক মিয়া আলমাস (৩৫) কে আটক করে। তবে এ বিষয়ে থানায় মামলা না হওয়ায় তাদেরকে ১৫১ ধারায় বৃহস্পতিবার সকালে রাজবাড়ী আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। 

হামলার শিকার বালিয়াকান্দি (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের মৃত হোসেন আলী শেখের ছেলে মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার মশিউল আজম চুন্নু, ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী আশিক মাহমুদ, বালিয়াকান্দি বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও জামায়াত ইসলামীর নেতা মোঃ উসমান গনি মানিক, মোঃ মুরাদ, ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের নেতা মোঃ আকিদুল ইসলাম, তারেক মিয়া আলমাস, মোঃ নুরু, কসাই মোঃ সালাউদ্দিন, মোঃ কামাল, মোঃ খলিল সহ অজ্ঞাত নামা ২০-২৫ জন বুধবার (১১ জুন) সকাল সাড়ে ১০ টার সময় বালিয়াকান্দি বাজার চৌরাস্তা মোড়ে উত্তর পাশে সোনাপুর রোডে আরোগ্য ফার্মেসী' ওষুধের দোকানে আগ্নেয় অস্ত্র পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র রামদা, হাসুয়া, লোহার রড, হকিষ্টিক, লোহার পাইপ নিয়ে প্রবেশ করে। অকথ্য ভাষায় গালিগলাজ শুরু করে।

গালিগলাজের কারণ জিজ্ঞাসা করলে চুন্নু আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, তোর কাছে ১০লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়েছিলাম। সেটা এখনো পরিশোধ করিস নাই কেন? চাঁদার টাকা পরিশোধ না করলে তোর এ ওষুধের দোকান লুটপাট করে নিয়া যাইবো। এখনি চাঁদার ১০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করবি, তা না হলে তোকে প্রাণে শেষ করে ফেলবো। তখন ভীত ও নিরুপায় হয়ে প্রকাশ করি যে, আমি এতো টাকা কী ভাবে দিবো। চাঁদা বাবদ আমি কোন টাকা পয়সা দিতে পারবো না। তখন চুন্নু হুকুম দেয় যে, শালাকে জানে শেষ কইরা দে। এরপর আশিক মাহমুদ বুকের উপর লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেয়। হাতে থাকা আগ্নেয় অস্ত্র সাদৃশ্য বুকের উপর চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে থাকে, চাঁদার ১০ লক্ষ টাকা না দিলে এখনি প্রাণে শেষ করে ফেলবো। তখন ওসমান গণির হাতে থাকা হাসুয়া দিয়ে হত্যার উদ্দ্যেশে মাথা লক্ষ করে স্বজোরে কোপ মারলে কোপ মাথার পিছনের ডানপাশে লেগে গুরত্বর হাড় কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। আকিদুলের হাতে থাকা রামদা দা দিয়ে হত্যার উদ্দ্যেশে মাথা লক্ষ করে কোপ মারলে কোপ মুখের উপর লেগে গুরুত্বর রক্ত কাটা জখম হয়। মুরাদের হাতে থাকা লোহার রড, নুরুর হাতে থাকা লোহার পাইপ, সালাউদ্দিনের হাতে থাকা হকিষ্টিক, কামালের হাতে থাকা লোহার রড এবং খলিলের হাতে থাকা লোহার পাইপ দিয়ে ওষুধের দোকানে ওষুধ ভর্তি তাকে এলোপাতাড়ি ভাংচুর করতে থাকে। চুন্নু হুকুম দেয় যে, দোকানের সকল মালামাল লুট করে নিয়ে যা। তখন সকলে দোকানের সব মালামাল লুট করতে থাকে। সালাউদ্দিন গলার উপর পা দিয়ে চেপে ধরে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করতে থাকে। আর বলে, চাঁদার টাকা দ্রুত দে। নিরুপায় হয়ে দোকানের লকারে থাকা ওষুধ বিক্রির নগদ ৮ লক্ষ টাকা চাঁদা বাবদ হাতে তুলে দেই।

তিনি আরও বলেন, চাঁদা বাবদ আদায়কৃত ৮ লক্ষ টাকা বুঝে নেয়। চাঁদা বাবদ আদায়কৃত ৮ লক্ষ টাকা সকলে ভাগ করে নেয়। সকলে মিলে ওষুধের দোকান ও পাশের রমেশ কুন্ডুর মিষ্টির দোকানের সমস্ত মালামাল যে যার মতো লুট ও ভাংচুর চালায়। এতে ক্ষতির পরিমাণ ওষুধের দোকানের ২০ লক্ষ টাকা এবং মিষ্টির দোকানে ২লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে। ডাক চিৎকারে আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হুমকি দিয়ে বলে যায় যে, চাঁদা বাবদ ৮লক্ষ টাকা নিয়া গেলাম। বাকী চাঁদা বাবদ ২ লক্ষ টাকা আগামী ৭ দিনের মধ্যে পরিশোধ করবি, এ বিষয় নিয়ে কোন প্রকার থানা কোর্ট করলে তোর ও তোর পরিবারের সকল সদস্যদেরকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবো। তাৎক্ষণিক যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ঘটনাস্থল থেকে আকিদুল ইসলাম ও তারেক মিয়া আলমাসকে আটক করে। অন্যান্যরা দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। যৌথ বাহিনী আটক ২জনকে বালিয়াকান্দি থানায় কর্তব্যরত পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এলাকার লোকজনের সহায়তায় আমাকে উদ্ধার করে অটো ভ্যান যোগে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তিনি আরও বলেন, খোন্দকার মশিউল আযম চুন্নু বালিয়াকান্দি থানা এলাকায় বেপরোয়া ভাবে লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং দখলবাজিতে সম্পৃক্ত থেকে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এর আগেও চাঁদাবাজির অপরাধে যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিল। সে চিহ্নিত মাদক সেবী ও চুন্নু বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিত। তার কোন অপরাধ মূলক কাজে বাঁধা দিলে বা প্রতিবাদ করলে তাদের উপর ভয়ানক ভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে খুন জখমের ভীতি সহ চাঁদা আদায় করে থাকে। ইতিমধ্যে তিনি একাধিক চাঁদাবাজি মামলায় আসামী হয়েছেন এবং জেলও খেটেছেন। কিছু কিছু মামলায় তার দৌরাত্বের কারণে রেকর্ড করতে দেন নাই। আমিও থানায় অভিযোগ দিতে গেলে আমার অভিযোগটি গ্রহণ করেনি। তবে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে অভিযোগ দায়ের করেছি।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বালিয়াকান্দি বাজারের জমি নিয়ে ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী আশিক মাহমুদ ও আকিদুল ইসলামদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধীয় জমি দখল করতে গিয়ে দোকান ভাংচুর ও মারধর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার মশিউল আজম চুন্নু ও ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী আশিক মাহমুদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি।

বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করতে বলেছি। পরে আর তারা অভিযোগ দায়ের করেনি। এ কারণে যৌথবাহিনীর অভিযানে আটককৃত ২জনকে বৃহস্পতিবার সকালে ১৫১ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

(একে/এসপি/জুন ১৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test