E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফরিদপুরে জমি লিখে না দেওয়ায় প্রবাসী ছেলের নির্যাতনে হাসপাতালে বাবা

২০২৫ জুন ২৩ ১৬:১৬:৩৪
ফরিদপুরে জমি লিখে না দেওয়ায় প্রবাসী ছেলের নির্যাতনে হাসপাতালে বাবা

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : "কষ্ট করে ফইর‌্যাত (অন্যের জমিতে খেটে) দিয়ে ছেলেরে বড় করছি, এখন সে আমারে চিনেই না..." – কথাগুলো বলতে বলতে চোখের জল থামাতে পারছিলেন না ষাটোর্ধ্ব নূর ইসলাম বিশ্বাস।

জমি লিখে না দেওয়ায় প্রবাসী ছেলের হাতে মারধরের শিকার হয়ে এখন ফরিদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। অভিযোগ, সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছোট ছেলে সজিব বিশ্বাস (২৮) এবং তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে বাবাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে।

নূর ইসলাম ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের চরজ্ঞানদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। বড় ছেলে পরিবার নিয়ে অন্যত্র বসবাস করেন। বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ স্ত্রী রিজিয়া বেগমকে নিয়ে অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে সংসার চালান তিনি।

নূর ইসলাম জানান, ২০১৬ সালে জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে ছোট ছেলে সজিবকে সিঙ্গাপুরে পাঠান। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই ছেলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে দেশে ফিরে গ্রামের এক তালাকপ্রাপ্ত নারীকে পরিবারের অমতে বিয়ে করে সে।

সম্প্রতি ৬ বছর পর দেশে ফিরে শ্বশুরবাড়িতে উঠেন সজিব। এরপর থেকেই পিতার ওপর বসতবাড়ির জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

ভুক্তভোগী নূর ইসলাম বলেন, "এই জমিই আমার শেষ সম্বল। এটা লিখে দিলে আমাকে হয়তো কালকেই ঘাড় ধইরা বাড়ি থেকে বের করে দিবে। আমি কোথায় যাবো? আমার তো আর কিছুই নাই। আমি চাই, এর সঠিক বিচার হোক। যাতে আর কোনো বাবা এভাবে ছেলের হাতে নির্যাতিত না হয়।"

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ১৯ জুন সকালে সজিব, তার স্ত্রী তানজিলা, শ্বশুর হালিম শেখ, শ্যালক জিহাদ শেখসহ কয়েকজন এসে তাকে গালিগালাজ করে এবং মারধর করে। বুকের পাশে লাথি, ঘাড়ে কিলঘুষি মেরে তাকে গুরুতর আহত করে। এমনকি পরে একটি ট্রাকে করে তার পোষা গরুও নিতে আসে, তবে প্রতিবেশীরা বাধা দিয়ে গরু নিয়ে যেতে দেয়নি।

নূর ইসলাম ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় ওই দিন বিকেলে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে ছেলেসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করেন। কিন্তু তিনি দাবি করেন, পুলিশ এখনো মামলা নেয়নি।

এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন,
"বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটি পারিবারিক বিরোধ থেকে উদ্ভূত। অভিযোগ পেয়েছি, আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।"

সজিব বিশ্বাসের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার পরিবারের সদস্যদের সাথেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

(ডিসি/এএস/জুন ২৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test