E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

শ্যামনগরের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রফিকুল

১৬ বছর বয়স কম দেখিয়ে চাকরি করছেন বহাল তবিয়তে, তাকে বাঁচাতে আরো ৫ পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক

২০২৫ জুন ২৩ ১৯:১০:৫৮
১৬ বছর বয়স কম দেখিয়ে চাকরি করছেন বহাল তবিয়তে, তাকে বাঁচাতে আরো ৫ পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরি করাসহ তার পাঁচ সহকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। 

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চৌদ্দরশি গ্রামের হাবিবুল ইসলাম ও গাইনবাড়ি এলাকার আসমত আলী জানান, তাদের এলাকার জিএম মতিয়ার রহমানের ছেলে জিএম রফিকুল ইসলাম তাদের সহপাঠী। ১৯৮৬ সালে রফিকুলসহ তারা একই সাথে গাবুরা গাইনবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। তবে চাকুরির বয়স পেরিয়ে যাওয়ার আগেই সে নতুন বয়স দেখিয়ে (১৯৮৬ সালের পহেলা নভেম্বর) গাবুরা নিজামিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০০২ সালে দাখিল পাস(৩.৬৭) করে। ২০০৪ সালে সে খুলনা জেলার কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস (জিপিএ-২.৬০) করে। জাতীয় পরিচয়পত্রে সে জন্ম তারিখ হিসেবে পহেলা নভেম্বর ১৯৮৬ উল্লেখ করে। ২০১২ সালে তৎকালিন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হকের ভাগ্নে জিম এর মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা দিয়ে ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করে। বর্তমানে রফিকুল কয়রায় বসবাস করে। নিয়মিত অফিসও করে না। তার চার বছরের বড় স্বাস্থ্য কর্মী বড় ভাই গত বছরের শেষের দিকে এলপিআরে গেছেন। অথচ ৩৮ বছর বয়স দেখিয়ে রফিকুল বহাল তবিয়তে চাকুরি করে যাচ্ছেন।

হাবিবুল ইসলাম ও আসমত আলী আরো জানান, ২০১৩ সালে শ্যামনগর উপজেলা পরিবার পরিকেল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রবীর কুমার সেন। ২০ জন পুরুষ ও মহিলা বন্ধ্যাত্ব গ্রহণ সংক্রান্ত ২০১৩ সালের মার্চের উপাত্ত দাখিল না করায় তাকে তিন দিনের মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শাণোর জন্য ওই বছরের ২৪ মার্চ নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তী বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি এমআইএস ফর্ম-২ পূরণে ভুল করায় তাকে কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেওয়া হয়। এরপরও রফিকুল বহাল তবিয়তে। রফিকুলের রক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন নূরনগর ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মোঃ আবু আল শাহ আলম, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক এসকে নূরন্নবী, আটুলিয়া ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রক্তিম ইসলাম, ভুরুলিয়া ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মহিউদ্দিন আহম্মেদ, বুড়িগোয়ালিনি পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মোঃ জিল্লুর রহমান।

কেন্দ্র থেকে আট কিলোমিটারের বেশি দূর না হলেও তারা প্রভাব খাটিয়ে কেএম মঈনুল ইসলাম উপজেলা পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকালিন মোঃ আবু আল শাহ আলম ১৩ হাজার টাকা টিএ বিল উত্তোলন করেছেন। একইভাবে রফিকুল ইসলামসহ আরো চার পরিদর্শক একই বিল পান। পরবর্তীতে শাকির হোসেন যাতে টাকা ফেরৎ না যায় সে জন্য গত বছরের বরাদ্দকৃত দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা ৫৭ জন কর্মীদের মাঝে বন্টন করে দেন। প্রত্যেক পরিদর্শক পিছু সাড়ে সাত হাজার টাকা করে ভাগ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন আবু শাহ আলম, নুরন্নবী, রফিকুল ইসলাম, রক্তিম ইসলাম, মহিউদ্দিন আহম্মেদ, জিল্লুর রহমান। শাহ আলমের বিরুদ্ধে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পলাশ দত্তের কাছ থেকে ২০২২ সালে এফডব্লিউএ দের বাবদ নেওয়া ৮০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

তারা আরো জানান, নূরন্নবীর বিরুদ্ধে চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। চাকুরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে চেক দেওয়ার ঘটনায় ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ আদালতে চেক ডিজ অনারের মামলা করেছেন নুরন্নবীর বিরুদ্ধে। তার বাড়ি পাতাখালি হলেও থাকে আটুলিয়ায়। ঠিক মত অফিস না করা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদকাসক্তের অভিযোগ রয়েছে। পরিদর্শক রক্তিম ইসলামের বিরুদ্ধে হেঞ্চি বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে খাস জমি দখল করে দোকান বানানো ও ঘের করার অভিযোগ রয়েছে। সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে ঋণে জর্জরিত পরিদর্শক মহিউদ্দিন। তার মূল কাজ সুপারভাইজিং রিপোটিং নিজে না করে এফডব্লিউএ ভুরুলিয়ার চন্দনা সরকারকে দিয়ে করান।
বাবা নূর মোহাম্মদ ভুরুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভাই মোস্তাফিজুর রহমান যুবলীগের সভাপতি হওয়ার সুবাদে এফডব্লিউএ কর্মীদের ইচ্ছামত ব্যবহার করেছেন পরিদর্শক জিল্লুর রহমান। বর্তমানে পূর্ব কালিনগর নিজের শ^শুরবাড়ি এলাকায় আত্মগোপনে থেকে নিজের কাজ বহাল রেখেছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক বলেন,একপর্যায়ে বদলা নিতে তারা উপজেলা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তোলেন। অভিযোগের তদন্তে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারি পরিচালক ডাঃ প্রবীর মুখার্জীর নেতৃত্বে গত ২০ এপ্রিল তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হলেও ২৩ জুন পর্যন্ত তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তবে নীতিমালা বহির্ভুতভাবে তদন্ত কমিটিতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অধঃস্তন কর্মী এটিএফ কামাল হোসেনকে সম্পৃক্ত করায় ওই কমিটির কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

শ্যানগরের নকিপুর হরিচরণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শাহ আলম লাভলু বলেন, তিনি ১৯৮৯ সালে এইচএসসি পাস করেছেন। রফিকুল ইসলাম তার চার বছরের ছোট। তাহলে রফিকুলের জন্ম তারিখ ১৯৮৬ সালে কিভাবে হলো? রফিকুলের বড় ভাই তার সমবয়সী। সে গতবার স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে এলপিআরে গেছে।

এ ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম তার ও তার কয়েকজন সহকর্মীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ অস্বীকার না করেই বলেন, কাজে ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। তবে ঢালাও অভিযোগ ঠিক নয়।

শ্যামনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাকির হোসেন বলেন, উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের দূর্ণীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে ইতিপূর্বে হেনস্তা হতে হয়েছে। তবে রফিকুলসহ অন্য কোন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

(আরকে/এসপি/জুন ২৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test