E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পাউবো-এলজিইডির ঠেলাঠেলি, ৪ মাস ধরে বন্ধ সড়কের নির্মাণ কাজ 

২০২৫ জুন ২৪ ১৭:৪৮:৪৯
পাউবো-এলজিইডির ঠেলাঠেলি, ৪ মাস ধরে বন্ধ সড়কের নির্মাণ কাজ 

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের পানতিতা খেয়াঘাট থেকে টেপারি গ্রামের অভিমুখে এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মধ্যে মালিকানা ও অনুমতি নিয়ে মতপার্থক্যের জেরে গত চার মাস ধরে বন্ধ হয়ে আছে এই সড়ক নির্মাণের কাজ। এতে করে ভোগান্তি ও দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী।

সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা কাঁদায় ভরে আছে। কেউ জুতা হাতে হাঁটছেন, কেউ মোটরসাইকেল ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন, কেউবা আবার সাইকেল কাঁধে করে হাঁটছেন। রাস্তার দুই পাশে ইটের খোয়া স্তূপ করে রাখা। বর্ষার পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে, তিন গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ এটি।

জানা গেছে, সড়কটি নির্মাণে ২ কোটি ৯২ লাখ ৮৫ হাজার ৯২৭ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ফকির এন্টারপ্রাইজ’। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু করলেও অর্ধেক কাজ হওয়ার পর পাউবো বাঁধা দিলে বন্ধ হয়ে যায় সড়কের নির্মাণকাজ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, এলজিইডির অনুমোদন নিয়েই তারা কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু মাঝপথে পাউবো জানায়, ওয়াপদার আওতায় থাকা ওই সড়কে কাজ করতে হলে তাদের ‘অনাপত্তি সনদ’ (এনওসি) নিতে হবে।

বিষয়টি জানার পর এলজিইডি তড়িঘড়ি করে এনওসি চাইলেও ততদিনে পাউবোর আওতাধীন একই সড়কে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। ফলে প্রকল্প মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো সংস্থাকে কাজ করতে দেবে না বলেই জানায় পাউবো।

এলাকাবাসীরা বলছেন, দীর্ঘদিন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখায় বর্ষা মৌসুমে চলাচলে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। কাদা ও পানিতে চলাফেরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী, কৃষক ও সাধারণ মানুষের জন্য।

পানতিতা গ্রামের বাসিন্দা দীপক বিশ্বাস বলেন, বর্ষাকালে কাদার ওপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে অনেক সময় জুতা খুলে হাতে নিয়ে চলতে হয়েছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাফেরা করা তখন ভীষণ কষ্টকর হয়ে পড়ে। রাস্তাটি পাকা করার কাজ শুরু হলে আমরা কিছুটা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, রাস্তার কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। কাটা মাটি স্তূপ করে রাখা হয়েছে রাস্তার একপাশে। এতে চলাচল আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুনছি রাস্তায় মালিকানা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিডি মধ্যে বিরোধ চলছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন ' সড়ক তুমি কার?

এদিকে, নির্মাণ কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও বিপাকে পড়েছে। তারা জানায়, এলজিইডি অনুমতি দিয়েছিল বলেই কাজ শুরু করেছিলেন। এখন হঠাৎ বাঁধার মুখে তাদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ফকির এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, আমরা এলজিইডি থেকে অনুমোদন নিয়ে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু করি। কিন্তু মাঝপথে এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় পাউবো। এনওসির প্রয়োজনীয়তার কথা বলে এলজিইডি কাজ আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে অর্ধেক কাজ শেষ হওয়ার পর হঠাৎ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ এলজিইডি সড়কটি পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) মালিকানাধীন হলেও কাজ শুরুর আগে প্রয়োজনীয় অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নেয়নি। পরবর্তীতে পাউবো বাধা দিলে সৃষ্টি হয় জটিলতা।

এলজিইডির নড়াইল সদর উপজেলার প্রকৌশলী মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কটি নির্মাণের জন্য পাউবোর এনওসি না নেওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

অন্যদিকে, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, ওয়াপদার এই সড়কে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্প চলমান। সেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কাউকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

(আরএম/এএস/জুন ২৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test