E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

২০২৫ জুন ২৫ ১৩:৫৬:৫৯
ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

আঞ্চলিক প্রতিনধি, বরিশাল : দেশব্যাপী সরকারের উন্নয়নে ভূমি অধিগ্রহণের সম্পর্ক নিবিড় হলেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের শেষ নেই ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়। অফিসের ছোট-বড় সবার সমন্বয়ে তৈরি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য। আর এ সিন্ডিকেটের মুলহোতা ভূমি অধিগ্রহণ (এল/এ) শাখার সার্ভেয়ার আসাদুল রহমান আসাদের বিরুদ্ধে ভূক্তভোগীদের অভিযোগের যেন শেষ নেই।

ওই সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে বিস্তার অভিযোগ এনে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পাঁচকোরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন মৃধা।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন মৃধা অভিযোগ করে বলেন, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার আসাদুল রহমান আসাদই এখানকার সব। ভুমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে হলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ১০ থেকে ১৫% করে ঘুষ দিতে হয় সার্ভেয়ার আসাদ সিন্ডিকেটকে। ঘুষ না দিলে ক্ষতিগ্রস্থদের ফাইল দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, সার্ভেয়ার আসাদ সিন্ডিকেটকে ঘুষ দিলে জমির জাল দলিলেও অধিগ্রহণের টাকা পাওয়া যায়। সার্ভেয়ার আসাদ সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত রয়েছেন সার্ভেয়ার ফারুক হোসেন, আনোয়ারুল, সার্ভেয়ার কমল, সার্ভেয়ার মনিরুজ্জামান, কানুনগো শহিদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন।

সূত্রমতে, পায়রাকুঞ্জে নির্মাণাধীন ব্রিজের দুই পাড়ের অধিগ্রহণকৃত জমির ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র বানিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা আসাদ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন।

বাউফলের দাস পাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার মিয়ার ছেলে আব্দুস সালাম মিয়া অভিযোগ করেন, তার এলএ কেস নাম্বার ১৬/২০১৭-১৮, খতিয়ান নম্বর ৩৭৮, ৪০৩ ও ৪১৬ এর প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আসাদ ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এছাড়াও তিনি (আসাদ) তার বাবা ও শশুরের নামে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভূমি অধিগ্রহণের ৮৯ লাখ টাকার চেক আত্মসাত এবং এমনকি সার্ভেয়ার আসাদুর রহমান নিজের স্ত্রীর নামে জাল কাগজপত্র তৈরি করে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা স্ত্রীর নামে উত্তোলন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট অফিসের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সার্ভেয়ার আসাদুর রহমানের পদায়ন খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হলেও রহস্যজনক কারণে তিনি বিগত ১১ বছর ধরে সংযুক্তিতে পটুয়াখালীতে কর্মরত রয়েছেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় যোগদানের পর একটানা পাঁচ বছর ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কাজ করার পর ২০২০ সালে তাকে গলাচিপা উপজেলা ভূমি অফিসে বদলি করা হয়। কিন্তু ছয়মাস যেতে না যেতেই তদবির করে তিনি (আসাদ) পূর্ণরায় পটুয়াখালী ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় চলে আসেন। পরবর্তীতে ব্যাপক দুনীতি ও অনিয়মের অভিযোগে তাকে মির্জাগঞ্জে বদলী করা হলেও সেখানে ছয় মাস যেতে না যেতেই তিনি (আসাদ) আবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় বদলি হয়ে চলে আসে।

ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে সার্ভেয়ার আসাদুর রহমান আসাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অভিযোগের ব্যাপারে সার্ভেয়ার আসাদুর রহমান আসাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা দিয়েও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, অধিগ্রহণ বিষয়ে যথেষ্ট স্বচ্ছতার সাথে কাজ করা হয়। সেবা প্রার্থীদের কোনো ধরনের হয়রানির করার সুযোগ নেই। তারপরেও সেবা প্রার্থীদের হয়রানির সাথে যদি কেউ সম্পৃক্ত থাকে সে ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কাওছার বলেন, পুরো বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এএস/জুন ২৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test