E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

দিনাজপুরে ১০ হাজার টাকার জন্য বন্ধুকে হত্যা

২০২৫ জুন ২৮ ২০:১০:০৯
দিনাজপুরে ১০ হাজার টাকার জন্য বন্ধুকে হত্যা

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য বন্ধুকে হত্যা করেছে আরেক বন্ধু। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে পুকুর থেকে সাধন চন্দ্র রায় (২২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধারের পাঁচ দিনের মধ্যে ঘটনার রহস্য ও মূল আসামিকে গ্রেফতারের বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। আসামির স্বীকারোক্তিতে মরদেহ উদ্ধারের পুকুর থেকেই  শনিবার (২৮ জুন) উদ্ধার হয়েছে নিহত বন্ধুর ব্যবহার করা মোটরসাইকেল।

পুলিশ জানিয়েছে, মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য সাধন চন্দ্র রায়কে হত্যা করে লাশ ও তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল পুকুরে ফেলে দেয় তারই বন্ধু মনদীপ রায় (২০)।

শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন, দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেন।

পুলিশ সুপার মারুফাত জানান, এই ঘটনায় মনদীপ রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার মনদীপ রায় একই গ্রামের তপন কুমার রায়ের ছেলে। আর নিহত সাধন চন্দ্র রায় রনটি গ্রামের মিনাল চন্দ্র রায়ের ছেলে। তিনি স্থানীয় বাজারে ওষুধের দোকান করতেন। নিহত সাধন চন্দ্র রায় ও আটক মনদীপ রায় দুই জনই বন্ধু ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিং এর সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সিফাত-ই-রাব্বানী, কাহারোল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ও বোচাগঞ্জ থানার ওসি হাসান জাহিদ সরকার উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ আরো জানান, গত ২৩ জুন (সোমবার) উপজেলার ইশানিয়া ইউপির রনটি গ্রামের পুকুর থেকে সাধক চন্দ্র রায়ের লাশ উদ্ধার করে বোচাগঞ্জ থানা পুলিশ। এই ঘটনায় গত বুধবার নিহতের পরিবার বোচাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় নিহতের বন্ধু মনদীপ রায়কে আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মনদীপ পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

আসামি জবানবন্দি বলেন, ' ২৩ জুন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে মোবাইলে সাধনকে পুকুর পাড়ে ডেকে এনে ধার দেওয়া টাকা ফেরত চান। কিন্তু এরই মধ্যে উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে মনদীপ বাঁশের লাঠি দিয়ে সাধনের মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। অবস্থা বেগতিক দেখে লাশ ও তার মোটরসাইকেলটি পুকুরে ফেলে দেন।

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন,এই ঘটনায় শনিবার বেলা ১১টায় আসামিকে সঙ্গে নিয়ে ওই পুকুর পাড়ে উপস্থিত হন। আসামির দেওয়া তথ্যমতে, পুলিশ পুকুরে ডুবে থাকা ডিসকভার-১২৫ মোটরসাইকেল ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি বাঁশের লাঠি উদ্ধার করে।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, গত ৩ মে অভিযুক্ত মনদীপ ভুক্তভোগী সাধনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নেন। কথা ছিল ৩ জুনের মধ্যে তা পরিশোধ করবেন এবং সঙ্গে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা দেবেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়েও টাকা ফেরত না দেওয়ায় পরিবারের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর সাধনের মা মনদীপের মাকে বিষয়টি জানালে তিনি ছেলেকে বকাঝকা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মনদীপ ২৩ জুন রাতে সাধনকে ডেকে নিয়ে যান ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বাড়ির পুকুর পাড়ে। সেখানে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। পরে লাশ ও মোটরসাইকেলটি পুকুরে ফেলে দেন। বুধবার পুকুরটিতে লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ও সিআইডির একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।

বোচাগঞ্জ থানার ইনচার্জ হাসান জাহিদ সরকার জানান, ছেলে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন পিতা মনোজ চন্দ্র রায়। তদন্তে নেমে নেপথ্য কারন উদঘাটনসহ জড়িতকে চিহিতসহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।
এদিকে আজ শনিবার দুপুরে ঘটনাস্হল পরিদর্শনে যান পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন। এসময় মোনদ্বীপ রায়ের দেখানো স্হান থেকে সাধক রায়ের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল এবং হত্যায় ব্যবহৃত বাঁশের লাঠি উদ্ধার করেছেন তারা। এসময় ছেলে হত্যায় জড়িতের ফাঁসি দাবি করেন সাধক রায়ের পিতা মনোজ চন্দ্র।

(এসএএস/এএস/জুন ২৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test