E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

চাল-সবজির আগুনে পুড়ছে সংসার, স্বস্তির আশায় তাকিয়ে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত

২০২৫ জুলাই ০৪ ১৬:২৬:৪৯
চাল-সবজির আগুনে পুড়ছে সংসার, স্বস্তির আশায় তাকিয়ে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত

 দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ‘‘আগে মাসে এক বস্তা চাল কিনে ২৫ দিন চলতাম, এখন ২০ দিনও টিকে না। মাছ-মাংস তো স্বপ্ন। এখন পেঁপে, ডাল আর ভাতেই সংসার চলে,’’—ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের বাসিন্দা রোজিনা বেগম কথাগুলো বললেন কষ্টের সঙ্গে।

চলমান বাজার পরিস্থিতি যেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে নেমে আসা এক অনাহুত দুর্যোগ। ঈদের পরে চাল ও সবজির লাগামহীন দাম বাড়ায় প্রতিটি পরিবারে ব্যয় বেড়ে গেছে। অথচ আয় সেই আগের মতোই রয়ে গেছে।

চালের বাজার, যেন স্বস্তির নামগন্ধ নেই
ফরিদপুরের নিউমার্কেট ও কানাইপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে, যা কয়েক সপ্তাহ আগেও ছিল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। মিনিকেট, জিরাশাইলের মতো মাঝারি ও সরু চালের দাম ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। বস্তায় করে কিনলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে পাইকারি ক্রেতাদের। ফলে প্রতিদিনের খাবারেই সবচেয়ে বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে একমুঠো ভাত।

সবজির বাজারেও আগুন
বরবটি, কাকরোল, ঝিঙা, ঢ্যাঁড়স—প্রায় প্রতিটি সবজিই এখন ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অনেক জায়গায় বরবটি ও কাকরোল ১০০ টাকা কেজিও ছুঁয়েছে।
ফরিদপুর সেজান বাজারে বিক্রেতা সাইফুল বলেন, “গোড়ার পাইকারি দামই এখন বেশি। গরমের কারণে ক্ষেতেও সবজি টিকছে না। আমরা তো নিজেরাই হিমশিম খাচ্ছি।”

মুরগি ও ডিমে কিছুটা স্বস্তি, তবে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত
বাজারে ব্রয়লার মুরগি মিলছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ১৮০ টাকার বেশি। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে। ডিমের দামও কমে এখন ১১৫–১২০ টাকায় পৌঁছেছে, যা আগে ছিল ১৪০ টাকা।

এই স্বস্তির পেছনে লুকিয়ে আছে খামারিদের দীর্ঘশ্বাস। স্থানীয় ডিম উৎপাদক মজনু মিয়া জানান, “এই দামে বিক্রি করলে প্রতি ডজনেই ১৫–২০ টাকা লোকসান গুনতে হয়। তারপরও বিক্রি করতে হচ্ছে। না হলে খাওয়ার খরচই ওঠে না।”

মুদি পণ্যের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল
তেল, চিনি, ডাল, ময়দা ও আটা এখনও আগের দামে পাওয়া যাচ্ছে। তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যদি পরিবহন বা জ্বালানির খরচ বাড়ে, এই পণ্যগুলোর দামেও প্রভাব পড়বে।

জীবনযাত্রার কঠিন বাস্তবতা
একজন বেসরকারি স্কুলশিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বললেন, “বেতন তো আগের মতোই, কিন্তু বাজারে যাই আর লিস্ট দেখি, মনে হয় ফেলে পালিয়ে আসি।”
এমন অসহায় অভিব্যক্তি আজ প্রায় প্রতিটি পরিবারেই শোনা যায়। কেবল চাল, সবজি নয়—জীবনের প্রতিটি খাতে যেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেড়েছে ব্যয়।

সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও তা যেন সাময়িক স্বস্তি দেয়। স্থায়ী সমাধান আসেনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, মোকাম ও চালকল পর্যায়ে সিন্ডিকেটের কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি।

দেশের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি শুধু পণ্যের দাম নয়, প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে একটি বড় অংশের জীবিকার ওপর। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এখন চাল আর সবজি কিনতেই পরিকল্পনা করে চলতে হচ্ছে। প্রয়োজন সময়োপযোগী বাজার ব্যবস্থাপনা, দাম নির্ধারণে কঠোর নজরদারি এবং খামারিদের জন্য প্রণোদনা। নইলে “স্বস্তি” শব্দটি দিন দিন কেবল অভিধানে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।

(ডিসি/এএস/জুলাই ০৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test