E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফরিদপুরে এ কে আজাদের বাড়িতে বিএনপির একাংশের হানা

২০২৫ জুলাই ০৪ ১৮:৩৫:৩২
ফরিদপুরে এ কে আজাদের বাড়িতে বিএনপির একাংশের হানা

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুরে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদের বাড়িতে হানা দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। এসয় তাঁদের চড়াও হতে দেখা যায়। ‘আওয়ামী লীগের গোপন মিটিং’ হচ্ছে- এমন অভিযোগ তুলে গেটে আঘাত করে বাড়িতে ঢুকে এমন ঘটনা ঘটান বিএপির ওই নেতাকর্মীরা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী এলাকায় অবস্থিত এ কে আজাদের বাসায় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই বাড়িতে হা-মীম গ্রুপের ল্যান্ড অফিসার মো. রাফিজুল খান, হা-মীম গ্রুপের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন, সিকিউরিটি গার্ড মেহেদী হাসান ও ক্লিনার মো. হান্নান মিয়া প্রমুখ বাসায় ছিলেন।

রাফিজুল খান বলেন, 'কিছু লোক বাড়ির গেটে বারবার আঘাত করলে সিকিউরিটি গার্ড মেহেদী হাসান এগিয়ে যান। এক পর্যায়ে গেট খুলে দিলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম নাহিদসহ কয়েকজন বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তারা বাড়িতে আওয়ামী লীগের গোপন সভা হচ্ছে কিনা– এই বলে ধমকাধমকি করেন। এক পর্যায়ে খালি বাড়ি দেখে তারা বেরিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ কে আজাদের বাসা থেকে বের হয়ে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা পাশে ভূমি অফিসের সামনে জড়ো হন। পরে সেখানে শতাধিক লোক জড়ো করা হয়। তারা মিছিল বের করে। মিছিলটি ভূমি অফিসের সামনে থেকে শুরু হয়ে অনাথের আচারের মোড় এলাকায় যায়।

ওই মিছিলে অন্যদের মধ্যে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলী রেজোয়ান বিশ্বাস, ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শাহরিয়ার হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুনিব হাসান প্রমুখ নেতাকর্মীকে অংশ নিতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ বলেন, ‘আমরা জানতে পারি, ঝিলটুলীর ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য সভা করছে। সে জন্য আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম।’

একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে দেশের শীর্ষ একজন ব্যবসায়ীর বাড়িতে এভাবে চড়াও হতে পারেন কিনা– জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচন করতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে নায়াব ইউসুফ। এ জন্য আমরা কাজ করছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নায়াব ইউসুফ জানান, শহরে এ কে আজাদের অনেক বাড়ি। আজ বিএনপির একটি মিছিল হয়েছে; কিন্তু কোন বাড়িতে বিএনপির নেতাকর্মীরা চড়াও হয়েছে– এ খবর আমার জানা নেই।

নায়াব ইউসুফ দাবি করেন, এ কে আজাদ আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এলাকার মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তবে আমি হিংসার রাজনীতি করি না, হামলার রাজনীতি করি না। আমি এর পক্ষপাতীও নই। সন্ত্রাস-বিশৃঙ্খলা আমি পছন্দ করি না এবং আমার নেতাকর্মীদের করতে দিই না।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী এ বিষয়ে জানান, 'আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। এ কে আজাদের বাড়িতে কিছু ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। কেউ আমাকে কিছু জানায়ও নাই।'

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদ উজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, 'বৃহস্পতিবার বিকেলে খবর পাই এ কে আজাদের বাড়িতে বিএনপির লোকজন গিয়েছে। পরে দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কাউকে পায়নি।'

উল্লেখ করা যেতে পারে, কিছুদিন আগে ফরিদপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের একটি মসদিজে এ কে আজাদের পক্ষ থেকে কিছু টাকা অনুদান দেওয়া হয়। এমন খবর শুনে সেখানে গিয়ে এমনিভাবে চড়াও হন বিএনপি নেতা মিরাজের নেতৃত্বে বেশকিছু নেতাকর্মী। ওই সময় স্থানীয় এক সাবেক কাউন্সিলরকে শাসিয়ে আসেন তিনি। এ কে আজাদের যেনো কোনো নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা না করেন সেই ব্যাপারেও ওই কাউন্সিলরকে সতর্ক করে দেন বিএনপি নেতা মিরাজ।

স্থানীয়রা মনে করছেন, বিএনপি নেতা নায়াব ইউসূফ মনোয়ন পেলে যাতে তিনি নিরস্কুর বিজয় লাভ করেন সেজন্য এ কে আজাদকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে নিরুৎসাহিত করার জন্যই মিরাজ এসব কৃতকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। তবে, নির্বাচনের আগে এসব কাজ নায়ব ইউসুফের পক্ষে না গিয়ে বরং বিপক্ষে যেতে পারে বলে মনে করেন বিএনপির তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।

তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না আসলে নায়াব ইউসূফের বাবার ভোট ব্যাংকেই তিনি এমনিতেই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তার নেতাকর্মীরা যদি উগ্রতা দেখায় সেক্ষেত্রে জনগণের মাঝে এর একটা ব্যাড ইফেক্ট পড়তে পারে, যা নায়াব ইউসূফ ও বিএনপি'র জন্য ভালো খবর নয়। তাঁরা নির্বাচন ও মনোনয়নের আগে নেতাদেরকে সংযত হওয়ারও অনুরোধ জানান।

(আরআর/এসপি/জুলাই ০৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test