E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

এ কে আজাদের বাড়িতে চড়াও

ফরিদপুরে বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ, জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি বিভিন্ন দল ও জোটের

২০২৫ জুলাই ০৫ ১২:৫৮:২৩
ফরিদপুরে বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ, জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি বিভিন্ন দল ও জোটের

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ : ফরিদপুরে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদের আজাদ ওরফে এ কে আজাদের বাড়িতে স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীর চড়াও হওয়ার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় হা-মীম গ্রুপের ল্যান্ড কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাফিজুল খান ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় এজাহার জমা দেন।

যাতে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফাসহ ১৬ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয়ের অন্তত ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন– জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শাহরিয়ার হোসেন, কোতোয়ালি থানা বিএনপির সাবেক সম্পাদক নাজমুল হাসান চৌধুরী, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি ক্যাপ্টেন সোহাগ প্রমুখ।

থানার ডিউটি অফিসার আহাদউজ্জামান জানান, ওসি বাইরে আছেন। আসার পর তাঁকে বিষয়টি জানানো হবে।

এজাহারে রাফিজুল খান বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীর অফিস কাম বাড়িতে আমি কর্মরত ছিলাম। প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার সোলাইমান হোসেন, সিকিউরিটি গার্ড মেহেদী হাসান, কেয়ারটেকার জালাল শেখ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী আব্দুল হান্নান, গৃহপরিচারিকা মাজেদা বেগম, সিসিটিভি অপারেটর সেলিম হোসেন ও সহকারী শাওন শেখ আমার সঙ্গে ছিলেন।

এজাহারে বলা হয়, একদল উগ্র সন্ত্রাসী হঠাৎ বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড মেহেদী হাসানকে খুন-জখমের হুমকি দিয়ে এ কে আজাদের বাড়িতে ঢুকে ত্রাস সৃষ্টি ও গালাগাল করতে থাকে। কক্ষ থেকে তিনি (রাফিজুল) উঠানে আসামাত্র গোলাম মোস্তফা মিরাজ হুমকি দেন– ‘তোর স্যার এ কে আজাদ যেনো ফরিদপুর না আসেন। আসলে তাকে হত্যা করে লাশ পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেবো। তার বাড়িঘর, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যা আছে, সব ভস্ম করে দেব’। জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফা মিরাজ বলেন, ‘বাড়িটিতে আওয়ামী লীগের গোপন সভা হচ্ছে– এমন তথ্য পেয়ে আমরা গিয়েছিলাম। আমরা কেউ কোনো হুমকি-ধমকি দিইনি। একটি ঢিলও ছোড়া হয়নি। যিনি থানায় অভিযোগ করেছেন, তাকেই তা প্রমাণ করতে হবে।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল জলিল জানান, 'অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এদিকে এ কে আজাদের বাড়িতে স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীর চড়াও হওয়াসহ দেশের নানা জায়গায় ‘মব’ সৃষ্টি করে হত্যা-নিপীড়নের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল এবং জোট। পৃথক বিবৃতিতে এসব দল ও সংগঠনের নেতারা অবিলম্বে এসব বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ, জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান।
বিবৃতিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যে যুক্তিতে এ কে আজাদের বাড়িতে বিএনপির নেতাকর্মীরা চড়াও হয়েছেন, তা উদ্ভট ও হাস্যকর। এ কে আজাদের বাড়িতে ‘আওয়ামী লীগের গোপন মিটিং’– এর ধুয়া তুলে চড়াও হওয়া সন্ত্রাসী তৎপরতা ছাড়া আর কিছু নয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে একই অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা করতেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশি ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। অভিযুক্তদের দলীয় পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে গ্রেপ্তার, কঠোর ব্যবস্থা ও আইনানুগ বিচারের দাবি জানান সাইফুল হক।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, শুধু মব নয়, কোনো কোনো দল ও নেতার বক্তব্য-বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান দিয়ে প্রতিস্থাপনের কথা বলা হচ্ছে, যা দেশকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দেবে।

বিবৃতিতে সই করেছেন সিপিবি সভাপতি শাহ আলম, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ প্রমুখ।

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাশাপাশি শুক্রবারেরও দলটি বিএনপির নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কিংবা অসদাচরণ করলে কেউ রেহাই পাবে না বলে কঠোর বার্তা দিয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের এ অবস্থানের কথা জানান।

যে দিন বিএনপির বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ রিজভী সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও মবের বিরুদ্ধে নিজ দল বিএনপির অবস্থান পরিস্কার করে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন, ঠিক সেদিনই একই কার্যকলাপের বর্ণনা দিয়ে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার স্থানীয় বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলো আগের দিনে ঘটনার জেরে। বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদের বাড়িতে স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীর চড়াও হওয়ার ওই ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনা সম্মুখীন হয় দলটি।

(আরআর/এএস/জুলাই ০৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test