E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রাজবাড়ীর হাসপাতাল সড়কের বেহাল দশা

২০২৫ জুলাই ০৮ ১৯:৪০:০০
রাজবাড়ীর হাসপাতাল সড়কের বেহাল দশা

একে আজাদ, রাজবাড়ী : দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি রাজবাড়ীর জনগুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল সড়ক। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে সড়কটিতে। উল্টে যাচ্ছে রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক। আহত হচ্ছেন যানবাহনের যাত্রী, পথচারী। বাধ্য হয়ে বাঁশ, কাঠ, গাছের ডালপালা দিয়ে সড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে পৌর শহরের হাসপাতাল রোডের কাজীকান্দা সেগুনবাগিচা এলাকায় গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজবাড়ীর পাবলিক হেলথ থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত পুরো সড়কের বেহাল দশা। পুরো সড়ক খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি এলে রাস্তায় জমছে হাঁটু পানি। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে সড়ক। এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি অটোরিকশা উল্টে ঘটেছে দুর্ঘটনা। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী বাঁশ, কাঠ ও গাছের ডালপালা দিয়ে সড়কটি আটকে দিয়েছেন। পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে লাল কাপড় দিয়ে বিপজ্জনক চিহ্ন দিয়েছেন। সড়কটি বন্ধ থাকায় অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন বিকল্প পথে।

জানা গেছে, রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা এলাকার পাবলিক হেলথ মোড় থেকে হাসপাতাল রোড হয়ে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়কটি ১ হাজার ৬৭৫ মিটার। রাজবাড়ীর প্রধান সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন ও মাল বোঝায় ট্রাক চলাচল করতে না দেওয়ায় হাসপাতাল রোড দিয়ে ট্রাকগুলো চলাচল করে। প্রায় দুই, তিন বছর ধরে সড়কটির ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন ও মালবোঝাই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, বালুর ট্রাক চলাচল করছে। এতে বিভিন্ন জায়গা খানাখন্দ হয়ে বেহাল দশা হয়েছে সড়কটির। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে হাসপাতাল, মসজিদ, স্কুল, কলেজ, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

পাবলিক হেলথ থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে খোয়া উঠে তৈরি হয়েছে গর্ত। সড়কের পাশের ড্রেনও সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। ফলে ময়লা আবর্জনায় ড্রেনগুলো প্রায় বন্ধ। তাই বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয় সড়কে জালাবন্ধতা তৈরি হয়েছে। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজবাড়ীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে পাবলিক হেলথ মসজিদের সামনে থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়ক পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এছাড়াও রাজবাড়ী রেলগেট-উড়াকান্দা বেড়িবাঁধ রুটে প্রতিদিন কয়েক হাজার অটেরিকশা, রিকশা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহ চলাচল করে। রেলগেট থেকে নুরপুর পর্যন্ত সড়কের খুবই বেহাল অবস্থা। রেলগেট থেকে হরিজন পল্লী হয়ে নূরপুর পর্যন্ত পুরো সড়কেই ভাঙাচোরা। বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে কোথাও খোয়া, কোথাও মাটি বেরিয়ে গেছে। আবার কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

হাসপাতাল রোড, উড়াকান্দা সড়ক ছাড়াও পৌরসভার ড্রাইস ফ্যাক্টরি রোড, গোদারবাজার রোড, টেকনিক্যাল থেকে শ্রিপুর বাজার রোড, দক্ষিণ ভবানীপুর রোড, ধুন্চি রোডসহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি সড়কেরই বেহাল দশা।

রাজবাড়ী পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল রোড, এতিমখানা রোডসহ আরও কয়েকটি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সদর হাসপাতাল রোড ১৬৭৫ মিটার,পান্না চত্বর থেকে তালতলা পর্যন্ত ২১২০ মিটার এবং ২ নম্বর রেলগেট থেকে এতিমখানা রোড সংস্কারের জন্য ওয়ান ব্যাংকের প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি এই মাসের মধ্যে অনুমোদন হয়ে টেন্ডার আহ্বান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কাজিকান্দার সেগুনবাগিচার স্থানীয় বাসিন্দা আহমেদ আলী বলেন, হাসপাতাল রোডের এই সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে মালবাহী ট্রাক, বালুর ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। এই রাস্তা দিয়ে সামনে আগালেই হাসপাতাল। রাস্তার এমন বেহাল দশার কারণে রোগীদের যেতে কষ্ট হয়। মাঝেমধ্যেই গাড়ি উলটে যায়। রাস্তাটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। এখানে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়া দরকার।

মোটরসাইকেল আরোহী শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এই রাস্তার বেহাল অবস্থা, পথচারীসহ যারা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের এই রাস্তার দিকে নজর দেওয়া উচিত।

সুজন শেখ নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, দুই, তিন বছর ধরে রাস্তাটি এমন দেখছি। রাস্তার পাশে পানির লাইন লিকেজ ও ড্রেন থেকে পানি বের হবার কারণে সবসময় পানি থাকে। বড় বড় ট্রাক যাওয়ার কারণে রাস্তাটি ভেঙে গেছে। প্রতি বছর টুকটাক সংস্কার করা হলেও এবার কিছুই করা হয়নি। গতকাল এখানে একটি ইজিবাইক উল্টে গেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকাবাসী রাস্তাটি ব্লক করে দিয়েছে। আমরা দ্রুত এর সংস্কার দাবি করছি।

রাজবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ খান বলেন, পুরো দেশের মতো রাজবাড়ীতেও বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে হাসপাতাল রোডসহ পৌর এলাকায় কয়েকটি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতাল রোড, এতিমখানা রোড ও পান্নাচত্তর থেকে তালতলা রোড এই তিনটি রোডের সমন্বয়ে একটি আরইউটিডিপি প্রকল্প থেকে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে যাবে প্রকল্পটি। প্রকল্পের অনুমোদন হলে এই মাসের মধ্যেই টেন্ডার আহ্বান করবো আমরা।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরই বৃষ্টির সময় এই রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই আমরা টিএসসি মোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উঁচু করেছি। অতিবৃষ্টির কারণে পুরো রাস্তা নষ্ট হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দক ও গর্ত তৈরি হয়েছে। এই রাস্তা সংস্কারের জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরপরেও রাস্তাটি আরসিসি দিয়ে উন্নয়ন করার বিষয়টি হাতে নিয়েছি। এতে জনদুর্ভোগ লাঘব হবে। হাসপাতাল রোডের সঙ্গে এতিমখানা রোড এবং পান্না চত্বর থেকে তালতলা পর্যন্ত একই প্যাকেজে আরসিসি ড্রিলসহ রাস্তা নতুনভাবে নির্মাণ করার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দ্রুতই জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

(একে/এসপি/জুলাই ০৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test