E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

অভিনব পদ্ধতিতে ডাক্তার মনিরের টেস্ট বাণিজ্য

২০২৫ জুলাই ০৯ ২৩:৩৪:৫৮
অভিনব পদ্ধতিতে ডাক্তার মনিরের টেস্ট বাণিজ্য

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : টেষ্ট বাণিজ্যের মধ্যদিয়ে এক শ্রেণীর চিকিৎসকরা অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করভার মনোবৃত্তির কারণে উপজেলা হাসপাতালগুলোর আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। কেউ বা প্রকাশ্যে কেউ আবার ধরা পড়ার ভয়ে অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে টেষ্ট বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থেকে আদায় করে নিচ্ছেন কমিশন। এবার এমনই এক অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে টেষ্ট বানিজ্যের সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত করেছেন বরিশালের গৌরনদী স্বয়ং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মনিরুজ্জামান। 

তার অভিনব পদ্ধতির নাম হলো গাণিতিক চিহ্ন। ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে টেস্টের নামের পাশাপাশি উপরের এক কোনায় লিখে দেন গাণিতিক চিহ্ন। ওই চিহ্ন দেখেই হাসপাতালের মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের দালালরা রোগীকে তাদের সেন্টারে নিয়ে যায় টেষ্ট করানোর জন্য। ওই গাণিতিক চিহ্ন ব্যতিত অন্য কোন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চিকিৎসা করালে পরতে হয় ডাঃ মনিরের রোষানলে। ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেন ভুলভাল ওষুধ। এ অভিযোগ ডাঃ মনিরুজ্জামানের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর পরিবারের।

ডাঃ মনিরুজ্জামানের টেষ্ট বানিজ্যের অভিনব কৌশল এবং রোগীকে ভুলভাল ব্যবস্থাপত্র লিখে দেওয়া নিয়ে মঙ্গলবার রাতে উপজেলার নলচিড়া গ্রামের শাহাদাত মৃধা নামের এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন। যা ইতিমধ্যে পুরো গৌরনদীতে ভাইরাল হয়েছে। পোষ্ট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বুধবার সকালে শাহাদাত মৃধা বলেন, জ্বরে আক্রান্ত আমার মামিকে নিয়ে গত ২ জুলাই উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যাই। নিয়মানুযায়ী টিকিট কেটে ডাঃ মনিরুজ্জামানের কক্ষে যাই। এসময় সে (মনির) বহির্বিভাগীয় রোগির টিকিটের এক কোনায় ৭ নাম্বারের গাণিতিক চিহ্ন লিখে দেয়। পরবর্তীতে ওই চিহ্ন দেখে হাসপাতালের অভ্যন্তরে থাকা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের দালাল আমার রোগিকে হাসপাতাল গেটের সামনে মেমোরিয়াল ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে টেস্ট করাতে নিয়ে যায়। যে কারনে বুঝতে পারি ৭ নাম্বার হলো মেমোরিয়াল ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে গানিতিক চিহ্ন। পরবর্তীতে টেষ্ট করানোর পর রিপোর্ট নিয়ে গেলে টেস্টের ক্যাশ মেমো রেখে দেয়।

তিনি আরও বলেন, আমার রোগীর টেস্টের রিপোর্ট দেখার পূর্বে অন্য এক নারী রোগী টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে আসেন। তার (ডাক্তার মনির) পছন্দমত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে টেষ্ট না করায় রোগীর ওপর চড়াও হয়। এসময় ওই রোগী তাকে (মনির) জানায়, আপনার কথামত ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে গিয়েছিলাম কিন্তু রিসিপশনের মেয়েটা কি টেস্টের কথা লিখেছেন স্পষ্ট বুঝে নাই। তাই অন্য জায়গা থেকে টেস্ট করাইছি। রোগীর মুখ থেকে এ কথা শোনার পর আমাদের সকলের সামনেই ওই ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিককে ফোন দিয়ে রিসিপশনে থাকা মেয়েটার প্রতি খারাপ মন্তব্য করেন। এসময় সে (ডাক্তার মনির) গরম মেজাজে আমার রোগীর রিপোর্ট দেখে ভুলভাল ব্যবস্থাপত্র লিখে দেয়। ব্যবস্থাপত্রে সে এন্টিবায়োটিক লিখলেও একই ওষুধ দু’বার লিখে দেয়। পরবর্তীতে ওষুধ কিনতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পরে।

জানা গেছে বিগত ২০২২ সালে ১৯ মে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন গৌরনদীর নলচিড়া এলাকার বাসিন্দা ডাক্তার মনিরুজ্জামান। যোগদানের পরপরই তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ সরকারের লোক হিসেবে জাহির করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও গৌরনদী পৌরসভার তৎকালীণ মেয়র হারিছুর রহমানের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে হাসপাতালে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে কর্মচারী ও হাসপাতালের পথ্য সরবরাহকারীর বিল থেকে পার্সেন্টিজ আদায়, তিন টাকার টিকিট পাঁচ টাকা আদায় করে টিকিট প্রতি অতিরিক্ত দুই টাকা হাতিয়ে নেওয়া সহ অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ উঠেছিলো। গৌরনদীতে যোগদানের পূর্বে দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জ হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকাকালীণ ডাঃ মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগে বরিশালের সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগীরা। তবে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপট ও তৎকালীণ এক সিভিল সার্জনের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরপরই ভোল পাল্টে ফেলেন ডাক্তার মনিরুজ্জামান। নিজেকে এখন বিএনপি’র সমর্থক দাবী করে পূর্বের সেই অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা অব্যাহত রেখেছেন। দীর্ঘদিন যাবত নিজ উপজেলায় দাপটের সঙ্গে চাকুরীরত এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে টেষ্ট বানিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি ডাক্তার মনিরুজ্জামান বলেন, এসব বিষয়ের কোন ভিত্তি নেই। একই ওষুধ দুই বার লিখে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এরকম হতে পারে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নাই। আমরা কেউই ভুলের উর্ধ্বে নাই। মেহেন্দীগঞ্জ থাকাকালীণ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এবিষয়ে অভিযোগকারাই ভাল বলতে পারবে। সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মেয়রের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে কোন বক্তব্য নাই। তবে প্রশাসনিক চেয়ারে থাকলে সিচুউসেশন বুঝে আমাদের কাজ করতে হয়।

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, যে কোন দূর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা স্বোচ্ছার। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমানিত হলে ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। স্বাস্থ্য সেবা রক্ষার জন্য আমরা কোন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না।

(টিবি/এএস/জুলাই ০৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test