E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফরিদপুর-বরিশাল চার লেন মহাসড়ক

‘দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে ফরিদপুর-ভাঙ্গা অংশের ভূমি অধিগ্রহণ’

২০২৫ জুলাই ১০ ১৯:৪২:১৯
‘দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে ফরিদপুর-ভাঙ্গা অংশের ভূমি অধিগ্রহণ’

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এতোটাই বেহাল দশা যে, এই সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনেকটা অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ঘটেছে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা, হয়েছে প্রাণহানিও। এরই মধ্যে এ অঞ্চলে চলাচল করা ফরিদপুর জেলাবাসীকে এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। স্থানীয়দের মধ্য থেকে দাবি উঠেছে ফরিদপুর-ভাঙ্গা অংশের বর্তমান সড়কটি মেরামত করা সহ প্রায় সাত বছর আগে পাশ হওয়া ফরিদপুর-বরিশাল চার লেন প্রকল্পের ফরিদপুর অংশের কাজ দ্রুত শেষ করার। এ মহাসড়কে চলাচল করা যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে জনস্বার্থে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ। তথ্য অনুসন্ধানসহ মহাসড়কটির শুধু ফরিদপুর অঞ্চল (ফরিদপুর-ভাঙ্গা) নিয়ে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের এই প্রতিবেদক কথা বলেন জেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে।

মহাসড়কের বেহাল দশা সম্পর্কে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী, খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, মহাসড়কটির ফরিদপুর-ভাঙ্গা মেরামতের কাজ শুরু করার জন্য আমরা অলরেডি ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। ভাঙ্গা গোল চত্বর থেকে ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট পর্যন্ত ও ফরিদপুর বাইপাস সড়কের মেরামতের জন্য ৪৯ কোটি টাকার চুক্তিতে এ কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিলায়েবল বিল্ডার্স লিমিটেড।

আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুর সওজ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী, খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার আরও জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি অলরেডি তাদের কিছু যন্ত্রপাতি আনা শুরু করেছেন, দু'একদিনের মধ্যে যাবতীয় নির্মাণ সামগ্রী চলে আসবে। বৃষ্টির কারণে কাজে বিটুমিনের কাজ করতে পারছেনা, তাই আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে স্বল্প পরিসরে ইটের কাজ করা হচ্ছে। বিশেষ করে, সড়কটির যেখানে যেখানে বড় গর্ত হয়ে পানি জমে আছে দুর্ঘটনা এড়াতে ওই গর্ত গুলো ভরাট করে দিচ্ছে। খালিদ আরও জানান, এক বছর যাবত এই রাস্তা মেরামতের কাজ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি, আশা করছি এরপর সড়কটি দু'বছর নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা যাবে।'

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে ওই নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, 'মহাসড়কটির ফরিদপুর-ভাঙ্গা অঞ্চলের চার লেন এর কাজ ভূমি অধিগ্রহণের কারণে আটকে আছে। আমরা এই প্রকল্পের এ অঞ্চলের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ফরিদপুর জেলা প্রশাসনকে যাবতীয় সহযোগিতা করে কাজটি শেষ করার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান জেলা প্রশাসনও এ ব্যাপারে আন্তরিক আছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আমরা এই কাজে ভূমি অধিগ্রহণের সকল ধরণের যৌথ নীরিক্ষা শেষ করেছি এবং ফরিদপুর জেলা প্রশাসনকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৫০ কোটি, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩০০ কোটি ও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১৫০ কোটি সহ মোট ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে রেখেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনও তারা ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি শেষ করতে পারেন নাই। আগামী জুনের মধ্যে শেষ না করতে পারলে এ টাকা ফেরত চলে যাবে, সেক্ষেত্রে এ কাজের জটিলতা বাড়বে, এমনকি বাতিল হয়ে যেতে পারে চার লেন প্রকল্পের এ অঞ্চলের কাজ। তবে, অধিগ্রহণের কাজটি বর্তমান জেলা প্রশাসন আন্তরিকতার সাথে দেখছেন এবং বেশ অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে। সেক্ষেত্রে এখন এ কাজটি যে পর্যায়ে রয়েছে, জেলা প্রশাসন ইচ্ছে করলে তা তিন মাসের মধ্যেই শেষ করে দিতে পারেন বলেও আশা প্রকাশ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ।'

এদিকে, ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর অঞ্চলের চার লেন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'মহাসড়কটির চার লেন প্রকল্পের ফরিদপুর অংশে আমাদের মোট ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। আমি এডিসি হয়েছি অল্প কিছুদিন। এই দায়িত্বে এসে এ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের মোট সাতটি (এলএ) কেস এ ভাগ করা অবস্থায় পেয়েছি। ফরিদপুর গোয়ালচামট থেকে শুরু করে ভাঙ্গা গোল চত্বর চুমুর্দি পর্যন্ত অর্থাৎ মাদারীপুর ও ফরিদপুরের বর্ডার এলাকা পর্যন্ত সাতটি (এলএ) কেস এ ভাগ করা আছে। ভাঙ্গা গোল চত্বরের পরের (এলএ) কেসটি শেষ করেছি, ওইটা প্রেমেন্ট পর্যায়ে আছে। কয়েকটি (এলএ) কেস ৭ ধারা স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছে, কয়েকটি স্বাক্ষর হয়েছেও। বাকীগুলোর যৌথ তদন্তের কাজ শেষ করে এখন ৭ ধারার নোটিশের জন্য ফাইনাল পরীক্ষা নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। মোট কথা খুব শীঘ্রই আমরা সড়ক ও জনপথকে এ প্রকল্পের জমি বুঝিয়ে দিতে পারবো।'

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আরও জানান, 'এতো দেরি হওয়ার কারণ আমার জানা নাই, তবে এসব ক্ষেত্রে একটু জটিলতা হয়, কাজটা খুব সহজ নয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সাথে যৌথ তদন্ত করতে হয়, আরও কিছু জটিলতা থাকে, তাই এটি সময় সাপেক্ষ হয়ে থাকে। তিনি বলেন, আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন আমি আসার পর কি কি করেছি, সেটার জবাব আমি দিতে পারবো।' এডিসি (রাজস্ব) আরও বলেন, 'আমি আপনাকে এতোটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি, সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে এ প্রকল্পে ফরিদপুর-ভাঙ্গা অংশের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। এই সময়ের মধ্যেই মহাসড়কটির এ অঞ্চলের চার লেন প্রকল্পের জন্য জমি বুঝে পাবে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ।' তবে, চার লেনের এ প্রকল্পের কাজ ইচ্ছে করলেই এখনই শুরু করতে পারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল আরও জানান, 'তাদের আগে থেকে কিছুকিছু জমি অধিগ্রহণ করা আছে। এছাড়া, আমাদের (এলএ) কেস মীমাংসিত অংশ (ভাঙ্গা চুমুর্দি) থেকেও কাজ শুরু করতে পারেন তারা।'

এদিকে, ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী, খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার এডিসি (রাজস্ব) রামানন্দ পালের পরামর্শ বিষয়ে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'ভাই আমাদের মাঠ পর্যায়ের কাজ চলমান আছে। ফরিদপুর-ভাঙ্গা মেরামতের কাজের পাশাপাশি আমরা চার লেনের কাজও কিছু কিছু চলমান রেখেছি। বর্তমান জেলা প্রশাসনের একান্ত আন্তরিকতায় আমরা যদি সত্যিই দুই মাসের মধ্যে প্রকল্পের জমি বুঝে পাই, তবে অল্প সময়ের মধ্যেই এ মহাসড়কের ফরিদপুর অঞ্চলের কাজ ফুল স্প্রিডে শুরু করতে পারবো।'

উল্লেখ করা যেতে পারে, ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ কাজটি আটকে আছে শুধুমাত্র জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায়। ২০১৮ সালে জমি অধিগ্রহণ প্রকল্প নেওয়া হলেও গত সাত বছরেও শেষ হয়নি সেই কাজ। ফলে মহাসড়ক নির্মাণকাজ শুরুর সময় নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। ভাঙ্গা-ফরিদপুর চার লেন মহাসড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ ২০২৩ সালে শেষ করার কথা ছিল। পরে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি। এবার জমি অধিগ্রহণ কাজের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

সর্বপরি চলাচলের দুর্ভোগের শিকার ফরিদপুরের জনগণ আশা করছেন, ফরিদপুর জেলা প্রশাসন শীঘ্রই ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের ফরিদপুর অঞ্চলের ৭০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি সফলভাবে শেষ করে সড়ক ও জনপথকে বুঝিয়ে দিবেন। অতঃপর, ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ জমি বুঝে পেয়ে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজটি যথাসময়ে সফলভাবে শেষ করে, এলাকার জনগণের যাতায়াত ব্যবস্থা নিরাপদ ও সুগম করতে সাহায্য করবেন।

(আরআর/এসপি/জুলাই ১০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test