E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সম্পত্তির লোভে হিন্দু পরিবারের উপর নির্যাতন, এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে নিষ্পত্তি

২০২৫ জুলাই ১৪ ১৩:৩২:১৪
সম্পত্তির লোভে হিন্দু পরিবারের উপর নির্যাতন, এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে নিষ্পত্তি

কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি : ওয়ারিশ দাবি করে জোরামলে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দখল নেওয়ার লোভে কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের কুমুড়উড়া গ্রামের একটি হিন্দু পরিবারের উপর চলছিল অমানবিক নির্যাতন। ওই গ্রামের মৃত প্রফুল্ল চক্রবর্তীর ছেলেদের উপর নির্যাতন চলে আসায় অবশেষে গ্রাম ও এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে এক সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলো। 

জানা যায়, কুমুউড়া গ্রামের প্রফুল্ল চক্রবর্তীর ছোট কন্যা সীমা রানী চক্রবর্তী বিগত ১৯৯২ সালে একই গ্রামের সেনাসদস্য আব্দুল খালেকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সীমা রানী চক্রবর্তী তার নাম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহনের মাধ্যমে মোছা: নূরুন্নাহার খানম নাম ধারণ করেন। অভিযোগ উঠেছে, নূরুন্নাহার খানমের স্বামী আব্দুল খালেক ও তার ছেলে মো: রাব্বী বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়িয়ে তাদের সহায় সম্পদ সব শেষ করে ফেলেন।

বছর খানেক আগে নূরুন্নাহার খানম ও তার স্বামী আব্দুল খালেক প্রফুল্ল চক্রবর্তীর বাড়িতে যান। প্রফুল্ল চক্রবর্তীকে শয্যাসায়ি অবস্থায় তার কাছে অতীতের ভুল ভ্রান্তির ক্ষমা চাইলে প্রফুল্ল চক্রবর্তী তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।

এরপর নূরুন্নাহার খানম বেশ কয়েক মাস তার বাবার সেবা যত্ন করেন। এ সময় নূরুন্নাহার খানম তার বাবা এবং ভাইদের নিকট বসবাস করার জন্য কিছু জমি দাবি করলে প্রফুল্ল চক্রবর্তী ও তার ছেলেরা ১০ শতাংশ জমি দান করেন। এর পর এই জমির পাশে শাকসবজি চাষ করার জন্য আরও ১৩ শতাংশ জায়গা আলোচনার মাধ্যমে নূরুন্নাহারের দখলে নেন।

এদিকে গত ০৮ জুন ও ১৪ জুন আব্দুল খালেকের ছেলে রাব্বী প্রফুল্ল চক্রবর্তীর মেঝো ছেলে শিবনাথ চক্রবর্তীর একটি মোটরসাইকেল জোরামলে নিয়ে যায়। এর পর তাদের বতসবাড়িতে হামলা ভাংচুর চালায়। ওই গাড়িটি অন্য জায়গায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করে দেয়।

পরে মুঠোফোনে শিবনাথ চক্রবর্তীর নিকট আরেকটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য আড়াই লাখ ও নগদ আরও দুই লাখ টাকা সহ সাড়ে চার লাখ টাকা দাবি করে। ওই টাকা পরিশোধ না করলে তাদেরকে ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিদের বারবার জানিয়ে ব্যার্থ হয়ে গত ৩০ জুন শিবনাথ চক্রবর্তী বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় রাব্বী সহ অজ্ঞাতনামা কয়েক জনের বিরুদ্ধে একটি চাদাবাজির মামলা করেন। তৎপর হয় পুলিশ।

ঘটনাটি ওই গ্রামের বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর তালুকদার মল্লিককে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ভারতীয় কয়েকটি অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এদিকে কুমুউড়াগ্রামের মাকাবুল ইসলাম নেতৃত্ব দিয়ে ঘটনাটি মিমাংসার উদ্যোগ নেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ১০ জুলাই বিকেলে কুমুউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এক সালিশ বৈঠক বসে। এতে সভাপতিত্ব করেন, বলাইশিমুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইদ্রিস আলী। সঞ্চলনা করেন, বলাইশিমুল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন শিবনাথ চক্রবর্তী, আব্দুল খালেক, নূরুন্নাহার খানম। তাদের বক্তব্যের পর ঘটনাটি মিমাংসার লক্ষে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন আহম্মেদ খোকন, নওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাজারুল ইসলাম মাজু, চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম খান জরিপ, জামাতে ইসলাম কেন্দুয়া উপজেলা শাখার আমির সাদেকুল হক, কেন্দুয়া উপজেলা মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দুয়া উপজেলা শাখার আহব্বায়ক দুলাল কান্তি চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম কেন্দুয়া উপজেলা শাখার সভাপতি সালাউদ্দিন সালাম, সাধারণ সম্পাদক কায়সার তালুকদার ও বলাইশিমুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর তালুকদার মল্লিক। সালিশীতে ৯ সদস্যের জুড়ি বোর্ডের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় যে, নূরুন্নাহার খানম প্রফুল্ল চক্রবর্তীর সম্পত্তিতে কোন ওয়ারিশ পাবেন না।

তবে জুড়ি বোর্ড মানবিক কারণে ২৩ শতাংশ ভূমি তাকে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া শিবনাথ চক্রবর্তীর মোটরসাইকেল ও বাড়িঘরের ধান চাল নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষতি পূরণ বাবদ শিবনাথ চক্রবর্তীকে নূরুন্নাহার খানম ও আব্দুল খালেকের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া একে অপরের বাড়িতে কোন আসা যাওয়া না করা সহ ওই হিন্দু পরিবারের উপর আর কোন অত্যাচার নির্যাতন না করার নির্দেশ দেওয়া হয় সালিশ বৈঠকে। এতে গ্রাম ও এলাকাবাসী ঐক্যমত পোষন করেন।

শিবনাথ চক্রবর্তী বলেন, আমি সালিশ দরবারে খুশি হয়েছি। আমার পরিবারের সদস্যদের উপর আর যাতে কোন অত্যাচার নির্যাতন না হয় সেজন্য সকলের প্রতি খেয়াল রাখার দাবি জানাচ্ছি। নুরুন্নাহার খানম বলেন আমি আইনগত ভাবে ওয়ারিশ পাইলেও আমি সালিশীর সিদ্ধান্তে খুশি। তিনি বলেন আমার ছেলে রাব্বী খুবই উশৃংখল। যদি ভবিষতে আমি তাকে সামলাতে না পারি তাকে নিয়ন্ত্রনের জন্য গ্রাম ও এলাকাবাসীর সহায়তা চাইবো।

সভার সভাপতি ইদ্রিস আলী তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, এটি কোন সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন নয়। এটি পারিবারিক বিরোধ। তবে, সালিশ বৈঠকে এলাকাবাসী বসে সমাধান করতে পেরেছি এজন্য মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

(এসবিএস/এএস/জুলাই ১৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test